Masnun Doa (মাসনূন দোয়া)।Islamic Media Blog
মাসনুন দোয়াসমূহ
নতুন দল দেখিয়া পড়িবার দোয়া : আউযুবিল্লাহি মিন শাররি হাযাল গাসিক্বি।
কদরের রাত্রিতে পরিবার দোয়া : আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আ'ফুয়্যুন তুহিব্বুল আ’ফওয়া ফা'ফু আন্নী।
আয়নায় মুখ দেখিবারকালে পড়িবার দোয়া : আল্লাহুম্মা আনতা হাসসানতা খালক্বী ফাহাসসিন খুলুক্বী।
মুসলমান ভাইকে সালাম দেওয়া : আচ্ছালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
সালামের জওয়াব দেওয়া : ওয়া আ'লাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
হাঁচির দোয়া : কেহ হাঁচি দিলে বলিবে- (আলহামদু লিল্লাহ)
হাঁচি শুনিয়া বলিবে- (ইয়ারহামুকাল্লাহু)
ঋণ পরিশোধের দোয়া : কোন লোক ঋণগ্ৰাপ্ত হইয়া আদায়ের ব্যবস্থা না থাকিলে এই দোয়া পড়িতে থাকিলে আল্লাহ তায়ালা ঋণ পরিশোধের ব্যবস্থা করিয়া দিবেন।
“আল্লাহুম্মাগফিনী বিহালা-লিকা আ'ন হারামিকা ওয়াআগনিনী বিফাদলিকা আ’ম্মান সিওয়াক।”
সকাল-সন্ধ্যার দোয়া সমূহ : প্রত্যহ ফজরের পরে এবং মাগরিবের পরে এই দোয়া তিনবার পাঠ করিবে- বিসমিল্লাহিল্লাযী লা-ইয়াদ্বুররু মায়াসমিহী শাইউন ফিল আরদ্ধি ওয়া লা-ফিচ্ছামা-য়ি ওয়া হুওয়াছ সামীউ’ল আ'লীম।
উপকারিতা : যে ব্যক্তি ফজর ও মাগরিবের পরে এই দোয়া তিনবার পাঠ করিবে, আল্লাহ তাআলা তাহাকে আকস্মিক মুছীবত হইতে রক্ষা করবেন।
অতঃপর সুরা হাশরের এই তিন আয়াত পাঠ করিবে :: হুওয়াল্লাহুল্লাযী লা-ইলা-হা ইল্লা-হুওয়া; আ-লিমুল গাইবি ওয়াশ শাহা-দাতি হুওয়ার রাহমানুর রাহীম। হুওয়াল্লাহুল্লাযী লা-ইলাহা ইল্লা-হুওয়া; আল মালিকুল কুদ্দু-সুস, সালামুল মুমিনুল মুহাইমিনুল আযীযুল জব্বারুল মুতাকাব্বির। সুবহানাল্লাহি আম্মা ইশরিকুন। হুওয়াল্লাহুল খালিকুল বা-রিউল মুছাওবিরু লাহুল আসমা-উলহুসনা; ইয়ুসাব্বিহু
লাহূ মা-ফিসসামা-ওয়া-তি ওয়াল আরদ্বি; ওয়া হুওয়াল আযীযুল হাকী-ম।
উপকারিতা : হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করিয়াছেন যে ব্যক্তি উপরোক্ত দোয়া সকালে পাঠ করিবে, আল্লাহ তাআলা তাহার জন্য ৭০ হাজার ফেরেশতা নিধারিত করিয়া দেন, যাহারা তাহার জন্য সন্ধা পর্যন্ত রহমতের প্রার্থনা করিতে থাকেন। আর যদি ঐ ব্যক্তি সেই দিন মৃত্যুমুখে পতিত হয়, তবে সে শহীদী মৃত্যু লাভ করিবে এবং যে ব্যক্তি সন্ধ্যায় এই দোয়া পাঠ করিবে, আল্লাহ তাআলা তাহার জন্য ৭০ হাজার ফেরেশতা নির্ধারিত করিয়া দেন যাহারা
তার জন্য ফজর পর্যন্ত বহমতের প্রার্থনা করিতে থাকে, আর যদি সে ঐ রাত্রিতে
মৃত্যুবরণ করে, তবে সে শহীদী মৃত্যু লাভ করিবে।
আয়াতুল কুরসীর ফযীলত : হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে, হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ফরমাইয়াছেন, যে ব্যক্তি সকাল বেলা আয়াতুল কুরসি পাঠ করিবে, সে ব্যক্তি ইহার বরকতে সন্ধ্যা পর্যন্ত যাবতীয় বিপদাপদ ও অপ্রীতিকর অবস্থা হইতে মাহফুজ থাকিবে এবং যে ব্যক্তি ইহা সন্ধ্যায় পাঠ করিবে, সে ব্যক্তি সকাল পর্যন্ত নিরাপদে ও শান্তিত থাকিবে।
আয়াতুল কুরসী এই - আল্লাহু লা-ইলাহা ইল্লা
হুওয়াল হাইয়্যুল ক্বাইয়্যুম, লা- তা’খুযুহু সিনাতুও ওয়া-লা নাওম। লাহূ
মা-ফিচ্ছামা-ওয়াতি ওয়ামা-ফিলআরদ্বি। মান-যাল্লাযী ইয়ুশফাউ’ই’ন্দাহূ ইল্লা
বিইযনিহী, ইয়া’লামু মা-বাইনা আইদী-হিম ওয়া মা-খালফাহুম; ওয়া লায়ুহী-তূ না বিশাইমি মিন ইলমিহী ইল্লা-বিমা-শা-য়া ওয়াসি ওয়া কুরসিয়্যুহুস সামা-ওয়া-তি ওয়াল আরদ্ব; ওয়ালা ইয়াউদুহূ হিফযুহুমা, ওয়া হুওয়াল আলিয়্যুল আ'যীম।
শয়তান হইতে বাঁচিয়া থাকিবার দোয়াঃ
নিচের দেয়া সম্পর্কে হাদিসে বর্ণিত আছে, হরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলিয়াছেন, এই দোয়া সকালবেলা পাঠ করলে সন্ধ্যা পর্যন্ত এবং সন্ধ্যায় পাঠ করলে সক্কাল পর্যন্ত শয়তানের চক্রান্ত হইতে বঁচিয়া থাকিবে। দোয়াটি হল-রাদ্বী-না বিল্লাহি রব্বাওঁ ওয়া বিল ইসলামি দ্বীনাও ওয়া বিমুহাম্মাদিন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা নাবিয়্যান।
বিপদ মুক্তির বিশেষ দোয়া: বর্ণিত আছে, বিপদ দেখা দিলো তখন সিজদায় যাইয়া নিম্নের দোয়াটি পাঠ করিলে বিশেষ উপকার হইবে। হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বদরের যুদ্ধের সময় এই দোয়া সিজদার মধ্যে পাঠ করিয়াছিলেন এবং এই দোয়ার বরকত উঁহাকে বদর যুদ্ধে বিজয় প্রদান করিয়াছিলেন। দোয়াটি হল-ইয়া হাইয়্যু ইয়া “কাইয়ুমু বিরাহমাতিকা আস্তাগীছু; 'অছিলিহ, লী-শা’নী কুল্লাহ ওয়ালা-তাকিলনী-ইলা-নাফসী-ত্বারফাতা আইনিন।
গুনাহ মাফীর দোয়া : বর্ণিত আছে, যে ব্যক্তি এই দোয়া সকালে ও সন্ধ্যায় ১০ বার করিয়া পাঠ করিবে, আল্লাহ তাআলা তাহার আমলনামায় ১০০টি নেকী লিখিবেন এবং ১০০টি বদী মিটাইয়া দিবেন, আর একটি গোলাম আজাদ করিবার পুণ্য লাভ করিবে। আর উক্ত দিবসে রাত্রিতে সমস্ত বিপদাপন হইতে নিরাপদে থাকিবে।
দোয়াটি হল : লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা-শারীকা লাহূ; লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুওয়া আ'লা-কুল্লি শায়ইন কাদী-র। |
দ্রষ্টব্যঃ কোন কোন বর্ণনায় পাওয়া যায়, এই দোয়া পাঠ করিলে ২০ লক্ষ নেকী পাওয়া যাইবে।
ঋণ পরিশোধ হইবার দোয়া : বর্ণিত আছে, এই দোয়া রীতিমত পাঠ করিলে, ঋণগ্রস্ত ব্যক্তির ঋণ পরিশোধ হইবার ব্যবস্থা আল্লাহ তা'আলা করিয়া দিবেন এবং সকল দুশ্চিন্তা দূর করিয়া নিশ্চিন্ত করিয়া দিবেন।
দোয়াটি হল -আল্লাহুম্মা ইন্নী আউযুবিকা মিনাল হাম্মি গুয়াল দুযনি ওয়া আউ’যুবিকা মিনাল আ’জাযি ওয়াল কাসলি, ওয়া আউ’যুবিকা মিনাল বুখলি ওয়াল জুবনি ওয়া আউ’যুবিকা মিন্ গালাবাতিদ দাইনি ওয়া কাহরির রিজা-লি।
প্রয়োজন মিটাইবার দোয়া : বর্ণিত আছে, একদা হযরত রাসূলুল্লাহ (সঃ) হযরত সালমান (রা.) কে লক্ষ্য করিয়া এবাশাদ করিলেন, হে সালমান। দিন-রাত্রিতে যখনই সুযোগ পাইবে, তখন এই দোয়াটি অবশ্যই পাঠ করিবে এবং নিজের প্রয়োজনের জন্য আল্লাহ তা'আলার দরবারে দোয়া প্রার্থনা করিলে তিনি তাহা মিটাইয়া দিবেন।
দোয়াটি হল - অলাহুম্মা ইন্নী আস-য়ালুকা ছিহহাতান ফী-ঈমা-নিন। ওয়া ঈমা-নান্ ফী খুলকিওঁ শুয়া নাজাতইঁ ইয়াতবাউ’হা ফালাহুন। ওয়া রাহমাতাম, মিনকা ওয়া আ’ফিয়াতান ওয়া মাগফিরাতান ও মাগফিরাতম মিকা গুয়া রিদ্বওয়ানান।
শয়নকলের দোয়া : হণিীসে বর্ণিত আছে, হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ফরমাইয়াছেন- শয়নের পূর্বে অযু না থাকিলে অযু করতঃ শয়ন করিব। শুইবার পুর্বে যে কোন কাপড় দ্বারা বিছানা তিনবার ঝাড়িয়া লইবে। অতঃপর এই দোয়া পাঠ করিয়া বিছানায় শয়ন করিবে।
দোয়াটি হল: লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা-শারীকা লাহু। লাহুল মুলকু ওয়া লাহুলহামদু ওয়া হুওয়া আলা কুল্লি শাইন ক্বাদীর। লা-হাওলা ওয়া লা-কুওয়্যাতা ইল্লাবিল্লাহি। সুবহানাল্লাহি ওয়াল হামদু লিল্লাহি ওয়ালা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার।
ঈমানের সহিত ইসলামের উপর মৃত্যু হইবার দোয়া : বিসমিল্লাহি, আল্লাহুম্মা আসলামতু নাফসী ইলাইকা ওয়া ওয়াজ্জাহতু ওয়াজহী ইলাইকা ওয়া ফাওয়াদতু আমরী ইলাইকা। ওয়া আলজা'তু জাহরী ইলাইকা রাগবাতান ওয়া রাহবাতান ইলাইকা। লা-মালজায়া ওয়ালা-মানজায়া মিনকা ইন্না ইলাইকা। আ-মানতু বিকিতা-বিকাল্লাযী- আনযালতা ওয়া নাবিয়্যিকাল্লাযী আরসালতা।
খারাপ স্বপ্ন দেখিয়া পড়িবার দোয়া : বর্ণিত আছে, খারাপ স্বপ্ন দেখিয়া বাম পাশে তিনবার থুথু ফেলিবে এবং, যেই পাশে শোয়া হলে এ পাশ পরিবর্তন করিয়া শুইবে, আর এই দোয়া তিনবার পাঠ করিবে এবং কাহারো নিকট বলিবে না।
দোয়াটি হল- আউযুবিল্লাহি মিনাশশাইত্বানির রাজীমি ওয়া মিন শাররি হাযিহির রু’ইয়া।
খারাপ স্বপ্ন দেখিয়া ভয় পাইলে পড়িবার দোয়া : হাদীসে বর্ণিত আছে, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আনাস (রা.) এর অভ্যাস ছিল, তিনি এই দোয়াটি তার বয়স্ক সন্তানদেরকে শিখাইতেন এবং নাবালেগ সন্তানের জন্য ইহা লিখিয়া গলায় বাধিয়া দিতেন।
দোয়াটি হল: আউ’যু বিকালিমাতিল্লাহিত তাম্মাতি মিন গাদাবিহী ওয়া ইক্বা-বিহী ওয়া শাররি ই'বাদিহী- ওয়ামিন হামাযাতিশ শাইয়াত্বীনি ওয়া আঁইয়্যাহদুরু-ন।
নিদ্রা হইতে জাগ্রত হইয়া পড়িবার দোয়া :
আলহামদু লিল্লাহিল্লাযী আহইয়া-না-বা'দামা আমাতানা ওয়া ইলাইহিন নুশু-র।
খানা খাওয়ার পরের দোয়া : আলহামদু লিল্লাহিল্লাযী আত্বআমানা ওয়া সাক্বা-না ওয়া জাআ’লানা মিনাল মুসলিমীন।
দাওয়াত খাইবার পরে দোয়া : আল্লাহুম্মা আত্বয়ি'ন মান্ আত্বআ'মানী, ওয়াসক্বি মান সাক্বা-নী।
নতুন পোশাক পরিধানকালের দোয়া: আলহামদু লিল্লাহিল্লাযী-কাসানী মা-উওয়ারী বিহী আ'ওরাতী ওয়া আতাজম্মালু বিহী-ফী-হায়াতী।
নতুন সওয়ারীতে চড়িবারকালে দোয়া :
উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা ইন্নী-আস্আলুকা খাইরাহা ওয়া খাইরা মা জাবালতাহা আলাইহি ওয়া আউযুবিকা মিন শাররিহা ওয়া শাররি মা-জাবালতাহা আ'লাইহি।
স্ত্রী সহবাসকালে পড়িবার দোয়া: বিসমিল্লাহি আল্লাহুম্মা জান্নিবনাশ শাইত্বানা ওয়া জান্নিবিশ শাইত্বানা মা-রযাক্বতানা
বীর্যপাতকালে দোয়া : আল্লাহুম্মা লা-তাজআ’ল লিশশাইত্বানি ফী-মা রাযাকতানী নাছী-বা।
যানবাহনে আরোহণকালে পড়িবার দোয়া : সুবহানাল্লাযী সাখখারা লানা –হা-যা ওয়া মা-কুন্না লাহূ মুক্বরিনীনা ওয়া ইন্না ইলা রব্বিনা
লামুনক্বালিবূ-ন।
সফর হইতে প্রত্যাবর্তন করিয়া পড়িবার দোয়া: আ-য়ি বূনা তা-য়িবূ-না আবিদূ-না লিরাব্বিনা-হা-মিদূ-না।
নৌকা বা জাহাজে আরোহণকালে পড়িবার দোয়া :
বিসমিল্লাহি মাজরেহা-ওয়া মুরসা-হা-ইন্না রব্বী লাগপূরুর রাহীম। ওয়ামা-ক্বাদারুল্লাহা হাক্কা ক্বাদরিহী ওয়াল আরদ্বু জামী আন ক্ববদাতুহু
ইয়াওমাল ক্বিয়ামাতি ওয়াজ্জামাওয়া-তু মাত্ববিয়্যা-তুম বিইয়ামী-নিহী; সুবহানাল্লাহি ওয়া তা’য়ালা আ’ম্মা-ইয়ুশরিকূ-ন।
গৃহে প্রবেশকালে পড়িবার দোয়া: তাওবান, তাওবান, লিরাব্বিনা আওবান, লা-ইয়গাদ্বিরু আ’লাইনা হাওবান।
বিশ লাখ নেকীর দোয়া : লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লাশারীকালাহু আহাদান ছামাদান লাম ইয়ালিদ ওয়ালাম ইউলাদ,
ওয়ালাম ইয়াকুল্লাহু কুফুওয়ান আহাদ।
বাজারে যাইবার কালে পড়িবার দোয়া : লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা-শারীকা লাহু; হাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ইয়ুহয়ী ওয়া ইয়ামীতু ওয়া হুওয়া হাইয়্যুল্লা-ইয়ামুতু বিয়ালিহিল খাইরু ওয়া হুওয়া আ’লা-কুল্লি শাইয়িন ক্বাদীর।
বিপদে বা রোগাক্রান্ত দেখিলে পড়িবার দোয়া:
আলহামদু লিল্লাহিল্লাযী আ’ফানী মিম্মাবতালাকা বিহী; ওয়া ফাদ্দালানী – আ’লা কাছীরিম মিম্মান খালাক্বা তাফদ্বী-লা।
সর্বোত্তম সম্পদ কি? প্রিয় নবী (সা.) এরশাদ করেন- ইহজগতের সবকিছুই আরাম-আয়েশের বস্তু মাত্র। এর মধ্যে সর্বোত্তম সম্পদ হচ্ছে, নেক্কার স্ত্রী। অর্থাৎ এ জগতে যা কিছু আছে এর সবই তোমাদের উপকারার্থে সৃষ্টি করেছেন।
পবিত্র গ্রন্থে এরশাদ হচ্ছে- তিনিই সেই সত্তা (আল্লাহ), যিনি তোমাদের উপকারার্থে এ জগতের সবকিছু সৃষ্টি করেছেন। এতে বুঝা যায়, এ মহান সৃষ্টিকূলের সবকিছুই কেবল আমাদের উপকারাৰ্থে তৈরী করছেন।
যেই মেয়েটির জন্য জান্নাতের প্যারান্টি রয়েছে : হযরত উম্মে সালমা (রাঃ) বর্ণনা করেন, প্রিয় নবী (সঃ) এরশাদ করেন, যে মহিলা এমন অবস্থায় মারা গেল যে, তার স্বামী তার উপর সম্পূর্ণ সন্তুষ্ট, তাহলে সে সরাসরি জান্নাতে চলে যাবে। (তিরমিখী)।
একাধিক বিবির মাঝে ইনসাফ করার তরীকা
হযরত ইবনে আস (রাঃ) বলেছেন, ওফাতের সময় রাসুল্লাহ (স) নয়জন স্ত্রী রেখে যান। তন্মধ্যে আটজনের জন্য তিনি সমান সমান বন্টন করতেন। (বুখারী, মুসলিম)।
যদি কারো একাধিক স্ত্রী থাকে তবে তাদের মধ্যে ইনসাফ কায়েম করা স্বামীর ওপর ওয়াজিব। যেমন- দিন-রাত প্রত্যেকের মধ্যে সমান ভাগ করে দিতে হবে। অর্থাৎ এক রাত একজনের নিকট অবস্থান করলে পরের রাত্রি অন্যজনের নিকট কাটাবে। যে রাত যার কাছে নিবে সে রাত তার কাছে পুরোই থাকতে হবে। এক রাত দু'জনের নিকট কাটানো নাজায়েজ। তবে পরস্পর সম্মতিতে হলে জয়েজ। সফরে যাওয়ার সময় লটারির মাধ্যমে ঠিক করতে হবে কে সাথে যাবে।
স্বামীর সামর্থ্য অনুযায়ী ভরন-পোষণ, বাসস্থান ও খরচের ব্যাপারেও স্ত্রীদের মাঝে সমতা মেনে চলতে হবে। যেমন- যদি একজনের
খরচের জন্য মাসিক এক হাজার টাকা দেয়া হয়, তাহলে অপর স্ত্রীকেও তাই দিতে হবে। যদি এক স্ত্রীকে একশত টাকা মূল্যের কাপড় দিয়ে পোশাক বানিয়ে দেয়া হয়; তবে অপরকেও একশত টাকা মূল্যের কাপড় দিয়েই পোশক বানিয়ে দিতে হবে। কম-বেশী করা জায়েজ হবে না। যদি এক স্ত্রীকে মূল্যবান পোশাক আর অন্য স্ত্রীকে কম দামের পোশাক দেয়া হয়, তবে স্বামী গোনাহগার হবে।
হাকীমুল উম্মত হষরত মাওলানা থানবী (রা.)-এর দু'জন স্ত্রী ছিল। তিনি খানকায় দাঁড়ি-পাল্লা ঝুলিয়ে রাখতেন। যখনই কোন জিনিস আসতো তিনি সমন দু'ভাগ করে দু'স্ত্রীর নিকট পাঠিয়ে দিতেন। উভয়ের জন্য পৃথক ঘর ছিল। তিনি প্রত্যেকের জন্য এক সপ্তাহ করে ভাগ করে নিয়েছিলেন। এক সপ্তাহ একজনের ঘরে থাকতেন এবং সেখানেই খানা-পিনা করতেন, পরের সপ্তাহ অন্যজনের কাছে কাটাতেন।হযরত বলতেন, আমি আমার আয়ের তিন ভাগ করে দু'ভাগ দুস্ত্রীর
ঘরে পাঠিয়ে দেই এবং আরেক ভাগ নিজের জন্য রেখে দেই । হয়রত থানবী (রহ) নিজের অংশ বিধবা ও গরীব ছাত্রদের মধ্যে বিলিয়ে দিতেন। এতটুকু সমতা রক্ষা করা সত্ত্বেও তিনি বলতেন না বন্ধু-বান্ধব ও হিতাকাংখীদের প্রতি আমার পরামর্শ হলো যে, কেউ যেন বিবাহ না করে। একজনের সাথে কালাতিপাত করাই শান্তিময় । তবে স্ত্রী যদি রুগ্ম হয় এবং, কার সন্তানাদি না থাকে, তবে সমতা রক্ষা করে চলতে পারলে দ্বিতীয় বিবাহ করা যেতে পারে।
অর্ধাঙ্গ নিয়ে যে ব্যক্তি কিয়ামতের দিন হাজির হবে:
হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি দু’স্ত্রী গহণ করেছে, কিন্তু সে তাদের মাঝে ইনসাফ কায়েম করেনি; তবে সে যখন কিয়ামতের দিন উপস্থিত হবে তখন তার দেহের এক পা অবশ থাকবে। (তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, নাসায়ী।)
সর্বোত্তম ব্যক্তি : হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। হুযুর (সা.) বলেছেন, যে লোক নিজের বিবি-বাচ্চার নিকট উত্তম, সেই তোমাদের মাঝে সর্বোত্তম ব্যক্তি। (ইবনে মাজাহ, তিরমিযী)
অর্থাৎ- তোমাদের সকলের চেয়ে আমি আমার স্ত্রী ও সন্তানদের সাথে অধিক সদ্ব্যবহার করি। সুতরাং তোমাদের উচিত আমার আনুগত্য করা।
দৈনন্দিন জীবনের কতিপয় বিশেষ আমল
১। শিশু জন্ম হওয়ার পর তার ডান কানে আযান ও বাম কানে একামত বলা সুন্নাত। হযরত হুসাইন (রাঃ) এর জন্মগ্রহণের পর রাসূলুল্লাহু (সঃ) তার কানে আযান দেন এবং একামত পাঠ করেন। (যাদুল মাআদ)।
২। সন্তানের কাটা চুলের ওজন পরিমাণ সোনা বা রূপা গরীবকে দান করা মুস্তাহাব।
৩। সন্তান জন্মের সপ্তম দিবসে আকীকা করবে। ঐ তারিখে কোন কারণে সম্ভব না হলে পরবর্তী সময় জন্মের আগের দিন যথাঃ বৃহস্পতিবারে জন্ম হলে বুধবার আকীকা করবে, তবে সপ্তম তারিখ ঠিক থাকবে। (শামী)।
৪। সন্তান প্রথমে কথা বলতে আরম্ভ করলে প্রথমে তাকে কালেমায়ে তাইয়্যেব শিক্ষা দিবে।
৫। আযান এমন লোক দিবেন যার সাথে সন্তানের মায়ের পর্দা নাই। এমন লোক পাওয়া না গেলে অন্য লোক দ্বারাও আযান দেওয়াতে পারবে, তবে পর্দার খেয়াল রাখবে, অন্যথায় ছাওয়াবের পরিবর্তে গুনাহ হবে।।
৬। ঘরের বাহির থেকে আযান দেওয়া সুন্নাতের বরখেলাপ।
৭। সন্তান জন্মিলে সর্বপ্রথম মধু বা কোন নেককার লোক দ্বারা খোরমা বা অন্য কোন মিষ্টি দ্রব্য চিবিয়ে লালার মত বানিয়ে আঙ্গুল দ্বারা শিশুর মুখের তালুতে লাগিয়ে দেয়া সুন্নাত। (যাদুল মাআদ)।
৮। সন্তান জন্মের সপ্তম তারিখে তার মুসলমানী নাম রাখবে। সপ্তম তারিখের আগে মারা গেলে একটি মুসলমানী নাম রেখে দাফন করবে।
৯। সপ্তম দিবসে সন্তানের মাথা মুন্ডাবে এবং সম্ভব হলে মাথায় জাফরান মাখবে।
উত্তম ও খারাপ নামকরণের পরিণতির প্রথম ঘটনা :
মুয়াত্তা নামক ইতিহাসখ্যাত গ্রন্থে একটি আশ্চর্যজনক ঘটনা এভাবে উল্লেখ আছে, মুসলিম জাহানের দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর ফারুক (রাঃ) জনৈক ব্যক্তিকে প্রশ্ন করলেন “তোমার নাম কি?” সে উত্তর দিল “জামরত” যার অর্থ অগ্নিস্ফুলিঙ্গ। তিনি আবার প্রশ্ন করলেন, “তোমার বাসস্থান কোথায়? সে উত্তর দিল, “বাহরূন্নার“, অর্থ আগুনের গর্ভে। তিনি আবারও প্রশ্ন করলেন “কোন অংশে? সে উত্তর দিল, “বেজাতিল্লাযা, অর্থ জ্বলন্ত অংশে। একথা শুনে হযরত ওমর বললেন “তুমি স্বীয় গোত্রের নিকট প্রত্যাবর্তন করে দেখ যে, তারা সবাই জলে ছাই হয়ে গেছে । লোকটি পরে বর্ণনা করল যে, সত্যিই “আমি স্বীয় কওমের নিকট যেয়ে দেখি তারা সবাই ভস্মিভূত হয়ে গেছে।
অনুরূপ আরও একটি ঘটনার উল্লেখ আছে, একদা প্রিয় নবী (সা.) একটি দুগ্ধবতী ছাগল দোহন করার জন্য বললেন, কে এটাকে দোহন করবে? এক ব্যক্তি দন্ডায়মান হয়ে বলল, আমি। হুজুর (সঃ) তৎক্ষণাৎ তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার নাম কি? সে উত্তর করল, মুররাহ (তিক্ত)। তিনি তাকে বললেন, বসো। পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন, কে এটাকে দোহন করবে? দ্বিতীয় এক ব্যক্তি দাঁড়াল। তাকে নাম জিজ্ঞেস করলে উত্তর দিল, হারব (যুদ্ধ-বিগ্রহ)। তাকে বললেন, বসো। পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন, কে এটাকে দোহন করবে? এক ব্যক্তি দাড়াল, তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার নাম কি? সে উত্তর করল, ইযায়ীষ (সে বাঁচবে)। রাসূল (সঃ) তাকে দুগ্ধ দোহনের অনুমতি দিলেন।
প্রিয় নবী (সাঃ) এর নামে নামকরণের বরকত
রাসূল (সঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি (নিজের) কল্যাণ লাভের আশায় মুহাম্মাদ নাম ধারণ করে, কিয়ামত পর্যন্ত তার বরকত লাভ হবে। (কানযুল উম্মাল)
রাসূল (সঃ) বলেছেন- একদল লোক যদি পরামর্শ করতে বসে আর তাদের মধ্যকার
মুহাম্মাদ নামক ব্যক্তিকে পরামর্শে শামিল না করে তবে তাদের পরামর্শে কোন কল্যাণ হবে না। (কানযুল উম্মাল)।
রাসূল (সঃ) বলেছেন- যার একটি পুত্র সন্তান জন্ম গ্রহণ করল, অতঃপর সে আমার প্রতি ভালোবাসা বশতঃ আমার নামের বরকত লাভের জন্য তার সন্তানের নাম মুহাম্মাদ রাখবে, সে এবং তার সন্তান উভয়ই বেহেশতের অধিবাসী হবে। (কানযুল উম্মাল)
শিশুদেরকে মুহাব্বত করা ঈমানের অঙ্গ
হাছান ও হুছাইন (রাঃ) সম্পর্কে বলতেন, এরা আমার গলার মণি। তিনি হযরত ফাতেমা (রাঃ)-এর বাড়িতে গমন করে বলতেন, আমার বাচ্চাদেরকে আনো। তাদেরকে আনা হলে তিনি তাদেরকে কোলে তুলে নিতেন, চুমো দিয়ে বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরতেন। তাদের মুখের উপরে মুখ রেখে আদর করতেন। তাদের সম্পর্কে বলতেন, হে আল্লাহ! আমি এদেরকে ভালোবাসি। তাদেরকেও ভালোবাসি, যারা এদেরকে ভালাবাসে।।
হযরত উছমান বিন যায়েদ (রাঃ) বলেন, নবী করীম (সা.) শিশুকালে আমাকে কোলে নিয়ে পায়ের এক উরুর উপর আমাকে এবং অন্য
উরুর উপর হাছান (রাঃ) কে বসাতেন। তারপর আমাদেরকে বুকের সাথে চেপে ধরে বলতেন, হে আল্লাহ! এ দুজনের উপর রহম করেন। আমি এদেরকে মুহাব্বত করি।
একদিন মহানবী (সা.) নাতি হাছানকে আদর দিয়ে চুমো দিলেন। আকরা বিন হাবিস নামক এক ব্যক্তি সে দৃশ্য দেখে বললো, আমার বাচ্চা দশটা। আমি একটিকেও আদর করি না। নবী (সা.) ওই ব্যক্তির দিকে তাকিয়ে বললেন, যে দয়া করে না, আল্লাহও তার প্রতি দয়া করেন না।
হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, জনৈক গ্রামবাসী নবীর নিকট এসে বললো, আপনারা কি শিশুকে চুমো দেন ও আদর করেন? আমরা তো শিশুকে চুমো দেই না।মহানবী (সা.) বললেন, আমার কি ক্ষমতা! আল্লাহ যদি তোমাদের অন্তর থেকে দয়া-মায়া বিদায় করে থাকেন! বিশ্বনবী (সা.) হযরত হাছানকে নিজের ঘাড়ে উঠিয়ে নিয়ে বলতেন, হে আল্লাহ! আমি তাকে ভালোবাসি, তুমিও তাকে ভালোবাস। কোন একদিন হাছান অথবা হুসাইন (রাঃ) মহানবীর ঘাড়ে উঠে ছিলেন। এক ব্যক্তি এ দৃশ্য দেখে খুশী হয়ে বললো, খুব সুন্দর সওয়ারী পেয়েছে তো! নবী (সা.)ও খুশী হয়ে বললেন, হ্যা সওয়ারও খুব ভালো সওয়ার।\
হাসির অপর পীঠ
আল্লাহ পাক এরশাদ করেন -“তোমরা কি আল্লাহর এই কালামে আশ্চর্যবোধ করছে এবং হাসছো, ক্রন্দন করছো না? - (সূরা আন-নাজম)
হাসির অপর একটি দিক আছে। দুনিয়াতে যারা সেই দিকটিতে বিচরণ রয়েছে, তারাই কামিয়াব হয়ে গেছে। এই পপর দিকটির নাম হলো ক্রন্দন । বস্তুতঃ হাসির পরিপূরক হলো ক্রন্দন করা। পরিপূর্ণ মুমিন হলো সে-ই, যে সামন্য হাসির পর অধিক ক্রন্দন করবে। যেমন মুমিনের পরিচয় দিয়ে আল্লাহ, পাক এরশাদ করেনঃ
“আর তারা রাসূলের প্রতি যা অবর্তীর্ণ হয়েছে, তা যখন শোনে; তখন আপনি তাদের চোখ অশ্রুসজল দেখতে পাবেন, এ কারণে যে তারা সত্যকে চিনে নিয়েছে।"
সুতরাং, যারা সত্যকে চিনে নিয়েছে তার হাসিতে আনন্দ পায় না। কারণ কঠিন দিবসটি সত্য এবং সমাগত। এখন হাসির চেয়ে কাঁদতেই অধিক মজা।
কবির ভাষায় : রাত্রিতে জেগে থাকতে আনন্দ নাই, ঘুমেও মজা নাই; গর্ভীর রাতে শুধু কাঁদতেই মজা।”
ঈমানে মুজমাল : আমানতু বিল্লাহি কামা- হুওয়া বিআাসসমা-য়িহী-ওয়া হিফা-তিহী-ওয়া ক্বাবিলতু জামী-য়া’ আহকামিহী ওয়া আরকা-নিহী
অর্থ : আমি আল্লাহর প্রতি ও তাহার যাবতীয় নাম সমূহ ও গুণাবলীর প্রতি যথাযথভাবে বিশ্বাস স্থাপন করিলাম এবং তাহার সর্ব প্রকার আদেশ-নির্দেশ বিধানাবলী মানিয়া লইলাম।
কালেমায়ে তাইয়্যেব : লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ ।
অর্থ : আল্লাহ ব্যতীত অন্য কেহ উপাস্য নাই, মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর রাসূল।”
কালেমায়ে শাহাদাত : আশহাদু আন্না ইলা-হা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা-শারী-কালাহূ ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহূ ওয়া রাসূলহ্।
অর্থ : “আমি সাক্ষ্য দিতেছি যে, আল্লাহ ব্যতীত অন্য কেহই উপাস্য নাই। তিনি আদ্বিতীয়, তাহার কোন শরীক নাই এবং আমি আরও সাক্ষ্য দিতেছি যে, নিশ্চয়ই হযরত মুহাম্মদ (স.) আল্লাহর বান্দা ও রাসূল।"
কালেমায়ে তাওহীদ : লা-ইলা-হা ইল্লা আনতা ওয়াহিদাল্লা-ছা-নিয়ালাকা মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লা-হি, ইমা-মুল মুত্তাক্বী-না রাসূলু রব্বিল আলা'-মীন।
অর্থ : “ হে আল্লাহ। তুমি ব্যতীত ইবাদতের যোগ্য আর কেহই নাই। তুমি এক ও শরীকবিহীন। হযরত মুহাম্মদ (সা.) মুত্তাক্বীগণের নেতা ও বিশ্ব প্রতিপালকের রাসূল।
কালেমায়ে তামজীদ : লা-ইলা-হা ইল্লা আনতা নূরাইইয়াহ্ দিয়াল্লাহ-হু লিনূরিহী। মাইয়্যাঁশা-উ মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লা-হি ইমামুল মুরসালী-না খাতামুন নাবিয়্যী-ন।
অর্থ : হে আল্লাহ! তুমি ব্যতীত ইবাদতের যোগ্য অন্য কেহই নাই তুমি জ্যোতির্ময় আল্লাহ, তুমি যাকে ইচ্ছা তোমার স্বীয় জ্যোতি দ্বারা পথ প্রদর্শন করিয়া থাক। হযরত মুহাম্মদ (সা.) রাসূলগণের নেতা ও আখেরী নবী।
ইসলামের প্রথম স্তম্ভ সম্পর্কে আলোচনা করা হইল। এখন ইসলামের দ্বিতীয় স্তম্ভ নামাজ সম্পর্কে আলোচনা করিব । তবে ইহার পূর্বে নামাজের প্রয়োজনীয় কতক বিষয়ের আলোচনা করা দরকার। যেমন, অজু, গোছল, পাক পবিত্রতা, আযান ইকামত ইত্যাদি !,
অযুর ফরজ : অজুর মধ্যে চারটি ফরজ। যথা (১) সম্পূর্ণ মুখমল একবার ধৌত করা । (২) উভয় হাত কনুইসহ একবার ধৌত করা । (৩) মাথার এক চতুর্থাংশ একবার মাছেহ করা। (৪) উভয় পা টাখনুসহ একবার ধৌত করা। এই ফরজ সমূহের মধ্যে হইতে একটি কার্যও বাদ পড়লে কিংবা একটি পশমের গোড়ায় পানি না পৌছিলে অর্থাৎ শুকনা থাকিলে অঙ্গু হইবে না।
অজু ভঙ্গ হইবার কারণ সমূহ : (১) প্রস্রাব-পায়খানার দ্বার দিয়া কোন বস্তু বাহির হওয়া। যথা : প্রস্রাব করা, মল ত্যাগ করা, কৃমি, বায়ু, পূঁজ ইত্যাদি বাহির হওয়া। (২) মুখ ভর্তি বমি করা। (৩) দেহের যে কোন ক্ষত স্থান হইতে রক্ত, পুঁজ বা পানি বাহির হইয়া গড়াইয়া যাওয়া। (৪) উচ্চ আওয়াজে নামাজের মধ্যে হাসিলে । (৫) নেশা জাতীয় কোন কিছু খাইয়া বেহুশ বা পাগল হইলে। (৬) দাঁতের গোড়া কিংবা মুখের অন্য কোন স্থান হইতে রক্ত বাহির হইলে। (৭) উলঙ্গ অবস্থায় নারী ও পুরুষের লিঙ্গ একত্রিত হইলে। (৮) তাইয়াম্মুমকারী পানি প্রাপ্ত হইয়া অজু করতে সক্ষম হইলে। (৯) নিদ্রামগ্ন হইলে। (১০) বেহুশ হইলেও অজু নষ্ট হইয়া যায়।
অজু করিবার দোয়া : বিসমিল্লাহিল আলিয়্যিল আযীমি, ওয়ালহামদু লিল্লাহি আ’লা দ্বীনিল ইসলামি, আল ইসলামু হাক্কুন ওয়াল কুফরু বাত্বিনুল । অলি ইসলামু নূরুন ওয়াল্ কুফরু যুলমাতুন।
অজু শেষ করিয়া পড়িবার দোয়া : আল্লাহুম্মাজ আ’লনী মিনাত্তাওয়্যাবীনা ওয়াজ আলনী মিনাল মুতাত্বাহহিরীনা ওয়াল্লাজিনা লা-খাওফুন আ'লাইহিম ওয়ালা-হুম ইয়াহযানূন।
তাইয়াম্মুমের ফরজ : (১) তাইয়ামম্মুমের নিয়ত করা। (২) তাইয়াম্মুমের বস্তুর উপর হস্তদ্বয় মারিয়া উহা ঘর্ষণ করতঃ সমস্ত মুখমল একবার মাছেহ করা। (৩) তৎপর হস্তদ্বয় পুনঃ তাইয়াম্মুমের বস্তুতে মারিয়া ঘর্ষণ করতঃ প্রথমে বাম হস্তের ৩টি অঙ্গুল দ্বারা (কনিষ্ঠা, অনামিকা ও মধ্যমা) ডান হস্তের বৃদ্ধা ও শাহাদাত অঙ্গুলী দ্বারা ডান হস্তের পেট কনুই, হইতে আাঙ্গুলের মাথা পর্যন্ত মাছেহ করা। তৎপর ডান হস্ত দ্বারা উক্ত নিয়মে নাম হস্ত মাছহ করা ।
তাইয়াম্মুমের নিয়ত : নাওয়াইতু আন আতাইয়াম্মামা লিরাফয়ি’ল হাদাছি ওয়্যাল জানাবতি ওয়াসতিবাহাতাল লিচ্ছালাতি ওয়া তাক্বাররুবান ইল্লাল্লাহি তা'আলা।
বাংলা নিয়্যত : আমি অপবিত্রতা হইতে পাক-পবিত্র হইবার জন্য এবং নামাজ আদায় ও আল্লাহ তা'আলার নৈকট্য লাভের জন্য তাইয়াম্মুম করিতেছি।
গোসলের বিবরণ : মানব দেহের নাপাকি ও ময়লাসমূহ দূর করিবার জন্য এবং স্বাস্থ্য রক্ষা ও শরীর সুস্থ রাখিবার জন্য গোসল করা একান্ত প্রয়োজন। স্বয়ং আল্লাহ তাআলাও গোসল করিতে আদেশ করিয়াছেন। গোসল চার প্রকার, যথা : (১) ফরজ গোসল, (২) ওয়াজিব গোসল, (৩) সুন্নাত গোসল (৪) মুস্তাহাব গোছল।
ফরজ গোসল : (১) যে কোন কারণে উত্তেজনা বশতঃ বীর্য (ধাতু) নির্গত হইলে, (২) স্বপ্ন দোষ হইলে, (৩) স্বামী ও স্ত্রী সহবাস করিলে। এই তিন অবস্থায় স্ত্রী লোক ও পুরুষ লোকের গোসল করা ফরজ।(8) স্ত্রী লোকদের জন্য হায়েজ ও নেফাসের পরে গোসল করা ফরজ।
ওয়াজিব গোসল : (১) কোন কাফের লোক জানাবাত অবস্থায় মুসলমান হইলে তাহার জন্য গোসল করা ওয়াজিব হইবে। (২) মুর্দা ব্যক্তিকে গোসল দেওয়া ওয়াজিব, তবে কোন কোন আলেম ফরজে কেফায়া বলিয়াছেন। মুর্দারের গোসল দাতাও গোসল, করা ওয়াজিব, কিন্তু কোন কোন আলেম ইহাকে সুন্নাত বলিয়াছেন।
গোছলের ফরজ: গোসলের মধ্যে তিনটি ফরজ, যথা: (১) গড়গড়ার সহিত কুলী করা, কিন্তু রোজা রাখাবস্থায় গড়গড়া করা নিষেধ। (২) নাকের ভিতরের নরম স্থান পর্যন্ত পানি পৌছাইয়া উত্তমরূপে নাক পরিষ্কার করা, (৩) মাথা হইতে পা পর্যন্ত সমস্ত শরীরে পানি পৌছাইয়া ধৌত করা। উপরোক্ত তিনটি ফরজ কার্যের মধ্যে একটিও ছুটিয়া গেলে কিংবা শরীরের একটি পশমের গোড়া শুকনা থাকিলে গোসল শুদ্ধ হইবে না।
এস্তেঞ্জার বিবরণ: প্রস্রাব ও মল ত্যাগের পরে পবিত্র হওয়াকে এস্তেঞ্জা বলা হয়। এই এস্তেঞ্জা দুই প্রকার, যথাঃ (১) বড় এস্তেঞ্জা ও (২) ছোট এস্তেঞ্জা । মল ত্যাগের পরে পবিত্র হওয়াকে বড় এস্তেঞ্জা বলা হয়। এই প্রস্রাব ও মল ত্যাগ করিবার পর পবিত্রতা অর্জন করা সুন্নাত।
পায়খানার পূর্বের দোয়া : আয়াহুম্মা ইন্নী আউযুবিকা মিনাল খুবুছি ওয়াল খাবায়িছি।
পায়খানার পরে দোয়া : আলহামদু লিল্লাহিল্লাযী আযহাবা আ’ন্নিল আযাওয়া আ'ফানী ।
অর্থ : আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান।
অতঃপর বলিবে - আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” (দুইবার)
অর্থঃ আমি সাক্ষ্য দিতেছি যে, আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোন মা'বুদ নাই।
অতপর বলিবে - “আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ” (দুইবার)
অর্থঃ আমি সাক্ষ্য দিতেছি যে, হযরত মুহাম্মাদ (সা.) আাল্লাহর রাসুল।
অতঃপর ডান দিকে শুধু মুখমণ্ডল ফিরাইয়া বলিবে । । “হাইয়া আলাচ্ছালাহ" (দুইবার)
অর্থ : নামাজের জন্য আসুন।
অতঃপর বাম দিকে শুধু মুখমণ্ডল ঘুরাইয়া বলিবে । -: “হাইয়্যা আলাল ফালাহ (দুইবার)।
অর্থঃ নেক কাজের জন্য আসুন।
অতঃপর শুধু ফজরের আযানে বলিতে হইবে - “আচ্ছালাতু খাইরুম্ মিনান্নাওম” (দুইবার)
অর্থ : নামাজ নিদ্রা হইতে উত্তম।
অতঃপর বলিবে : “আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার” (একবার)
অর্থঃ আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান।
অতঃপর বলিবে - “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু” (একবার)
অর্থ : আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোন মা'বুদ নাই।
আযানের দোয়া :আল্লাহুম্মা রব্বা হাযিহিদ দা’ওয়াতিত তাম্মাতি, ওয়াচ্ছালাতিল ক্বায়িমাতি আতি মুহাম্মাদানিল ওয়াছীলাতা ও ফাযীলাতা ওয়াবআ’ছহু মাক্বামাম মাহমূদানিল্লাযী ওয়াআ'দতাহ ইন্নাকা লা-তুখলিফুল মীআ'দ।
অর্থ : হে আল্লাহ! তুমি এই পরিপূর্ণ আহবানের ও স্থায়ী প্রতিষ্ঠিত নামাজের প্রভু। হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-কে উছিলা এবং সমস্ত সৃষ্টির মাঝে মর্যাদা দান কর। এবং তাহাকে ঐ প্রশংসিত স্থান দান কর যাহা তার জন্য তুমি ওয়াদাহ করিয়াছ। নিশ্চয়ই তুমি ভঙ্গ কর না অঙ্গীকার।
নামাজের ফরজসমূহ : নামাজের বাহিরে ও ভিতরে মোট ১৩টি ফরজ।
নামাজের বাহিরে মোট ৭টি ফরজ : ইহাকে নামাজের আহকাম বলা হয়। যথা : (১) শরীর পাক হওয়া, (২) পরিধানের কাপড় পাক হওয়া। (৩) নামাজের জায়গা পাক হওয়া। (৪) সুতর ঢাকা অর্থাৎ বস্ত্রাবৃত করিয়া নামাজ পড়া। (৫) কেবলামুখী হইয়া। নামাজ পড়া, (৬) ওয়াক্ত মত নামাজ পড়া (৭) নামাজের নিয়্যত করা।
নামাজের ভিতরে ৬টি ফরজ : ইহাকে নামাজের আরকান বলা হয়। যথা : (১) তাকবীরে তাহরীমা বলা। (২) কেয়াম করা, অর্থাৎ দাড়াইয়া নামাজ পড়া। (৩) কেরাআত পড়া। (৪) রুকূ করা। (৫) সিজদা করা। (৬) শেষ বৈঠকে বসা।
১। শরীর পাক হওয়া : নামাজের পূর্বে অজু করিতে হইবে। ফরজ গোসলের দরকার হইলে গোসল করিতে হইবে। শরীয়ত সম্মত কোন গুরুতর ওজর থাকিলে অজু ও গোসলের পরিবর্তে তাইয়াম্মুম করিতে হইবে।
২। পরিধানের কাপড় পাক হওয়া : পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও পবিত্র কাপড় পরিধানন করতঃ নামাজ পড়িতে হইবে। যেহেতু অপবিত্র বা নাপাক কাপড় পরিধান করিয়া নামাজ পড়িলে উক্ত নামাজ শুদ্ধ হইবে না বা আল্লাহর দরবারে - কবুল হইবে না।
৩। নামাজের জায়গা পাক হওয়া : যেই স্থানে দাঁড়াইয়া নামাজ আদায় করিতে হয়, সেই স্থানটুকু পাক-পবিত্র হইতে হইবে নতুবা নামাজ আদায় করা যাইবে না এবং উহা আল্লাহর দরবারে কবুলও হইবে না।
৪। সতর ঢাকা বা আবৃত করা: অর্থাৎ পুরুষের জন্য কমের পক্ষে হাঁটুর উপর হইতে পদদ্বয়ের গিরা পর্যন্ত এবং স্ত্রীলোকদের সর্ব শরীর আবৃত করিয়া নামাজ পড়িতে হইবে। নতুবা নামাজ আদায় হইবে না।
৫। কেবলামুখী হইয়া নামাজ পড়া : অর্থাৎ কেবলাকে সম্মুখে রাখিয়া নামাজ পড়িতে হইবে। নামাজের মধ্যে কেবলা সম্মুকে না থাকিলে বা ঘুরিয়া গেলে নামাজ আদায় হইবে না।
৬। ওয়াক্তমত নামাজ পড়া : যেই ওয়াক্ত নামাজের জন্য যেই সময় নির্ধারিত সেই সময় নামাজ পড়িতে হইবে। নির্ধারিত সময়ের (ওয়াক্তের) পূর্বে বা পরে নামাজ পড়িলে উহা আদায় হইবে না।
৭। নামাজের নিয়্যত করা : অর্থাৎ যেই ওয়াক্তে যেই নামাজ পড়িবে মনে মনে সেই ওয়াক্তের নিয়্যত করিতে হইবে। আর অন্যান্য ওয়াজিব, সুন্নাত ও নফল নামাজ পড়িলে উহার কথা নিয়্যতে উল্লেখ করিতে হইবে না।
নামাজের ভিতরের ফরজ সমূহ:
৮। তাকবীরে তাহরীমা বলা : নিয়্যত করিয়া “আল্লাহু আকবার” বলিয়া নামাজ আরম্ভ করা। অর্থাৎ নামাজের ভিতরে দুনিয়াবী কাজ-কর্ম হারাম বিধায় “আল্লাহু আকবার “ বলিয়া দুনিয়াবী সমস্ত কাৰ্যাদী ত্যাগ করতঃ আল্লাহর দরবারে।
তাবলিগের কাজ কি? হাযিরা দেওয়া হয়। তাই এই তাকবীর বলিয়া নামাজ শুরু করা হয়, এই জন্য এই তাকবীরকে তাকবীরে তাহরীমা বলা হয়।
৯। কেয়াম করা অর্থাৎ দাঁড়াইয়া নামাজ পড়া : ফরজ নামাজ সমূহ বসিয়া পড়া জায়েয নাই, অতএব দাঁড়াইয়া নামাজ পড়িতে হইবে। শরীয়াতী ওজর থাকিলে বসিয়া ফরজ নামাজ পড়া দুরস্ত আছে। আর সুন্নাত, মুস্তাহাব ও নফল নামাজ প্রয়োজনবোধে বসিয়া আদায় করা জায়েয আছে।
১০। কেরাআত পড়া : অর্থাৎ কুরআন শরীফের কিছু আয়াত নামাজের মধ্যে পড়া ফরজ। সূরা ফাতিহার পরে কুরআন শরীফের যে কোন একটি সূরা। অথবা বড় এক আয়াত কিংবা ছোট তিন আয়াত পড়া ফরজ।
১১। রুকু করা : অর্থাৎ কোমর বাঁকা করিয়া মাথা নত করা।
১২। সিজদা করা: অর্থাৎ রুকূ হইতে দাঁড়াইয়া জায়নামাজের উপর নাক ও কপাল স্থাপন করা।
১৩। শেষ বৈঠকে বসা: অর্থাৎ, দুই, তিন ও চার রাকআত বিশিষ্ট নামাজের শেস বৈঠকে বসা ফরজ। ওয়াজিব, সুন্নাত ও নফল ইত্যাদি নামাজের শেষ বৈঠকে বসাও ফরজ।
No comments