ঈমান, কুফর, বিদআত, কুসংস্কার ও কুপ্রথা সম্পর্কে হাদীসের ঘটনা আলোচনা। Islamic Media Blog
![]() |
ঈমান, কুফর, বিদআত, কুসংস্কার ও কুপ্রথা সম্পর্কে হাদীসের ঘটনা আলোচনা। |
ঈমান সম্পর্কিত কোন বিষয়ে মনে সন্দেহ জাগলে কি করণীয় :
যে সব বিষয়ে ঈমান রাখতে হয়, সে সব বিষয়ে যদি কখনও মনে সন্দেহ এবং ওয়াছওয়াছা দেখা দেয়, যেমন মনে সন্দেহ দেখা দিল যে, (নাউযুবিল্লাহ) আসলেই খোদা বলে কেউ আছেন কি ? বা থাকলে তাকে কে সষ্টি করল, কোন সৃষ্টিকর্তা ছাড়া তিনি হলেন কি করে ? কিম্বা সন্দেহ দেখা দিল যে, জান্নাত জাহান্নাম আসলেই আছে কি ? এরূপে আল্লাহ, রাসূল, কুরআন, পরকাল, তাকদীর ইত্যাদি যে কোন ঈমান সম্পর্কিত বিষয়ে মনে সন্দেই আসলে তখন তিনটা আমল করণীয়। যথাঃ
১. আউযুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রজীম পড়ে নেয়া।
২. আমানতু বিল্লাহ (অর্থাৎ, আমি আল্লাহর প্রতি ঈমান আনলাম) পড়ে নেয়া।
৩. উক্ত চিন্তা থেকে বিরত হয়ে অন্য কোন চিন্তা বা কাজে লিপ্ত হওয়া।
ঈমান বাড়ে কমে কিভাবে :
ঈমান বৃদ্ধি পায় অর্থাৎ, ঈমানের মধ্যে নূর পয়দা হয় এবং ঈমান মজুবত হয়। নিম্নোক্ত তরীকায় : ১, ঈমানের আলোচনা দ্বারা। ২. ঈমানদারদের ছোহবত দ্বারা। ৩. আমল দ্বারা। (ঈমানের শাখাগুলোর উপর আমল দ্বারা)
পক্ষান্তরে, ঈমান দুর্বল হয়ে যায় এবং ঈমানের নূর কমে যায়, এমন কি কখনও কখনও ঈমান নষ্ট হয়ে যায় নিম্নোক্ত কারণে: ১. কুফ্র দ্বারা। ২. শিরক দ্বারা। ৩. বিদআত দ্বারা। ৪. রছম ও কুসংস্কার পালন দ্বারা। ৫.গোনাহ দ্বারা।
ঈমানের শাখা
ঈমানের পরিচয়ের মধ্যে বলা হয়েছে কতকগুলো বিষয়কে অন্তরে বিশ্বাস করা, মুখে স্বীকার করা এবং আমলে পরিণত করার সমষ্টি হল ঈমান। এ থেকে বোঝা গেল- ঈমানের কিছু বিষয় দেলের দ্বারা সম্পন্ন হয়, কিছু জবানের দ্বারা এবং কিছু হাত, পা ইত্যাদি বাহ্যিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের দ্বারা। এ সবগুলোকে ঈমানের শাখা বলা হয়। বড় বড় ইমামগণ হাদীছের ইঙ্গিত পেয়ে গবেষণা করে কুরআন হাদীছ থেকে ঈমানের ৭৭ টি শাখা নির্ণয় করেছেন। এর মধ্যে দেলের দ্বারা সম্পন্ন হয় ৩০ টি। জবানের দ্বারা সম্পন্ন হয় ৭ টি, বাহ্যিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দ্বারা সম্পন্ন হয় ৪০ টি। আমলের সুবিধার জন্য সংক্ষেপে সবগুলো পেশ করা হলঃ
দেলের দ্বারা যেগুলো সম্পন্ন হয় :
১. আল্লাহর উপর ঈমান আনা।
২. আল্লাহ চিরন্তন ও চিরস্থায়ী, তিনি ব্যতীত সবকিছু তার মাখলুক- একথা বিশ্বাস করা।
৩. ফেরেশতাদের প্রতি ঈমান আনা।
৪. আসমানী কিতাব সমূহের প্রতি ঈমান আনা।
৫, আল্লাহর প্রেরিত পয়গম্বরদের প্রতি ঈমান আনা।
৬, তাকদীরের উপর ঈমান আনা।
৭. কেয়ামতের উপর ঈমান আনা।
৮, বেহেশতের উপর ঈমান আনা।
৯. দোযখের উপর ঈমান আনা।
১০. আল্লাহর সঙ্গে মহব্বত রাখা।
১১. কারও সাথে আল্লাহর জন্যই মহব্বত রাখা এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই কারও সাথে দুশমনী রাখা।
১২. রাসূল (সঃ)-এর সাথে মহব্বত রাখা।
১৩, এখলাস। (অর্থাৎ, সব কিছু আল্লাহর উদ্দেশ্যেই করা।)
১৪. তওবা অর্থাৎ, কৃত পাপের জন্য অনুতপ্ত হয়ে তা পরিত্যাগ করা এবং ভবিষ্যতে তা না করার জন্য সংকল্প করা। বিস্তারিত জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন
১৫. আল্লাহকে ভয় করা।
১৬, আল্লাহর রহমতের আশা রাখা।
১৭, আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ না হওয়া।
১৮, হায়া বা লজ্জা।
১৯. শোকর।
২০. অঙ্গীকার রক্ষা করা।
২১. ছবর।
২২. বিনয় নম্রতা ও বড়দের প্রতি সম্মানবোধ।
২৩. স্নেহ-মমতা ও জীবের প্রতি দয়া ।
২৪. তাকদীরের উপর রাজী থাকা।
২৫. তাওয়াক্কুল করা।
২৬. নিজেকে বড় এবং ভাল মনে না করা।
২৭. হিংসা বিদ্বেষ না রাখা।
২৮. রাগ না করা ।
২৯. কারও অহিত চিন্তা না করা, কারও প্রতি কু-ধারণা না করা ।
৩০, দুনিয়ার মহব্বত ত্যাগ করা।
জবানের দ্বারা যেগুলো সম্পন্ন হয় :
১. কালেমায়ে তাইয়্যেবা পড়া।
২. কুরআনে কারীম তিলাওয়াত করা ।
৩. ইলমে দ্বীন শিক্ষা করা ।
৪. ইলমে দ্বীন শিক্ষা দেয়া।
৫. দুআ বা আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করা।
৬. আল্লাহর যিকির ।
৭. বেহুদা কথা থেকে জবানকে হেফাজত করা।
বাহ্যিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দ্বারা যেগুলো সম্পন্ন হয় :
১. পবিত্রতা হাছেল করা।
২. নামাযের পাবন্দী করা ।
৩. ছদকা, জাকাত, ফিতরা, দান-খয়রাত, মেহমনদারী ইত্যাদি।
৪. রোযা।
৫. হজ্ব।
৬. এ'তেকাফ (শবে কদর তালাশ করা এর অন্তর্ভুক্ত)।
৭. হিজরত করা, অর্থাৎ দ্বীন ও ঈমান রক্ষার্থে দেশ-বাড়ি ত্যাগ করা।
৮. মান্নত পুরা করা ।
৯. কছম করলে তা পূরণ করা, আর কছম ভঙ্গ করলে তার কাফফারা দেয়া।
১০. কোন কাফফারা থাকলে তা আদায় করা।
১১. ছতর ঢেকে রাখা।
১২. কুরবানী করা ।
১৩. জানাযা ও তার যাবতীয় আনুষঙ্গিক কাজের ব্যবস্থা করা।
১৪, ঋণ পরিশোধ করা।
১৫. লেন-দেন ও কায়-কারবার সততার সাথে এবং জায়েয তরীকা মোতাবেক করা।
১৬. সত্য সাক্ষ্য দান করা । সত্য জানলে তা গোপন না করা।
১৭. বিবাহের দ্বারা হারাম কাজ থেকে বিরত থাকা।
১৮. পরিবার-পরিজনের হক আদায় ও চাকর-নওকরদের সাথে সদ্ব্যবহার করা।
১৯. মাতা-পিতার সাথে সদ্ব্যবহার করা।
২০. ছেলে-মেয়েদের লালন-পালন ও সুশিক্ষার ব্যবস্থা করা।
২১. আত্মীয়-স্বজনদের সাথে সদ্ব্যবহার করা।
২২. উপর ওয়ালার অনুগত হওয়া, যেমন চাকরের প্রভুভক্ত হওয়া।
২৩, ন্যায় ও নিরপেক্ষভাবে বিচার করা।
২৪. মুসলমানদের জামাআতের সাথে থাকা ও হক্কানী জামাআতের সহযোগিতা করা, তাদের মত পথ ছেড়ে অন্যভাবে না চলা।
২৫. শরীয়ত বিরোধী না হলে শাসনকর্তাদের অনুসরণ করা ।
২৬. লোকদের মধ্যে কোন ঝগড়া-বিবাদ হলে তা মিটিয়ে দেয়া।
২৭. সৎ কাজে সাহায্য করা।
২৮. আমর বিল মারূফ ও নাহি আনিল মুনকার করা তথা সৎ কাজের আদেশ করা ও অসৎ কাজে বাধা দেয়া।
২৯, জেহাদ করা। সীমান্ত রক্ষা করাও এর অন্তর্ভুক্ত।
৩০. হদ তথা শরীয়ত নির্ধারিত শাস্তি কায়েম করা ।
৩১. আমানত আদায় করা। গনীমতের এক পঞ্চমাংশ আদায় করা এর অন্তর্ভুক্ত।
৩২. অভাব গ্রস্থকে কর্জ দেয়া।
৩৩. প্রতিবেশীর হক আদায় করা ও তাদেরকে সম্মান করা।
৩৪. লোকদের সাথে সদ্ব্যবহার করা ।
৩৫. অর্থের সদ্ব্যবহার করা।
৩৬. সালামের জওয়াব দেয়া ও সালাম প্রদান করা।
৩৭. যে হাঁচি দিয়ে ‘আল হামদুলিল্লাহ' পড়ে তাকে ‘ইয়ার হামুকাল্লাহ' বলা ।
৩৮, পরের ক্ষতি না করা। কাউকে কোন রূপ কষ্ট না দেয়া।
৩৯. খেল-তামাশা, ক্রীড়া-কৌতুক ও নাচ-গান থেকে দূরে থাকা।
৪০. রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু দূর করা।
নিমে কুফর, শিরক, বিদআত, রছম ও গোনাহের বিষয়াদি সম্পর্কে বিবরণ। পেশ করা হল, যেন এগুলো থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে ঈমানকে রক্ষা করা যায়।
কতিপয় কুফরী ও তার বিবরণ
* যে সব বিষয়ের প্রতি ঈমান আনতে হয় তা জানতে ক্লিক করুন। তার কোনটি অস্বীকার করা কুফরী ।
* কুরআন হাদীছের অকাট্য দলীল দ্বারা প্রমাণিত কোন বিষয় অস্বীকার করা যেমনঃ নামায, রোযা ফরয হওয়াকে অস্বীকার করা, নামাযের সংখ্যা, রাকআতের সংখ্যা, রুকু সাজদার অবস্থা, আযান, যাকাত, হজ্ব ইত্যাদি বিষয়-এর কোনটি অস্বীকার করা কুফরী।
* কোন মুসলমানকে কাফের আখ্যায়িত করা কুফরী।
* কুরআন ও হাদীছের অকাট্য দলীল দ্বারা প্রমাণিত কোন বিষয়ের এমন ব্যাখ্যা দেয়া, যা কুরআন ও হাদীছের স্পষ্ট বিবরণের খেলাফ- এটাও কুফরী ।
* কুফর ও ভিন্ন ধর্মের কোন শিমার বা ধর্মীয় বিশেষ নিদর্শন গ্রহণ করা কুফরী, যেমন হিন্দুদের ন্যায় পৈতা গলায় দেয়া, খৃস্টানদের ক্রুশ গলায় ঝুলানো ইত্যাদি।
* কুরআনের কোন আয়াতকে অস্বীকার করা বা তার কোন নির্দেশ সম্পর্কে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করা কুফরী ।
* কুরআন শরীফকে নাপাক স্থানে ও ময়লা আবর্জনার মধ্যে নিক্ষেপ করা কুফরী ।
* ইবাদত ও তাযীমের নিয়তে কবরকে চুমু দেয়া কুফরী। ইবাদতের নিয়ত ছাড়া চুমু দেয়া গোনাহে কবীরা।
* দ্বীন ও ধর্মের কোন বিষয় নিয়ে উপহাস ও ঠাট্টা-বিদ্রুপ করা কুফরী। এ জন্যেই নামায, রোযা নিয়ে উপহাস করা কুফরী। উপহাস ছলে রমজান মাসে দিনের বেলায় প্রকাশ্যে পানাহার করা কুফরী । ইসলামের পর্দা ব্যবস্থাকে তিরস্কার করা বা উপহাস করা কুফরী । দাড়ি নিয়ে উপহাস করা কুফরী ইত্যাদি।
* আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের কোন হুকুমকে খারাপ মনে করা এবং তার দোষ-ত্রুটি অন্বেষণ করা কুফরী।
* ফেরেশতাদের সম্পর্কে বিদ্বেষভাব পোষণ করা বা তাদের সম্পর্কে কটুক্তি করা কুফরী ।
* হারামকে হালাল মনে করা এবং হালালকে হারাম মনে করা কুফরী ।
* কারও মৃত্যুতে আল্লাহর উপর অভিযোগ আনা, আল্লাহকে জালেম সাব্যস্ত করা কুফরী।।
* কাউকে কুফরী শিক্ষা দেয়া কুফরী।
* হারাম বস্তু পানাহারের সময় বিসমিল্লাহ বলা, যেনায় লিপ্ত হওয়ার সময় বিসমিল্লাহ বল কুফরী।
* দ্বীনী ইলমের প্রতি তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য প্রদর্শন ও অবমাননাকর বক্তব্য প্রদান করা কুফরী।
* হক্কানী উলামায়ে কেরামকে দ্বীনী ইলমের ধারক বাহক হওয়ার দরুন গালি দেয়া বা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা। এটাও কুফরী।
* কেউ প্রকাশ্যে কোন গোনাহ করে যদি বলে যে, আমি এর জন্য গর্বিত তাহলে সেটা কুফুরী ।
* আল্লাহ ও রাসূল (সঃ)-এর অবমাননা করা, আল্লাহ ও নবীকে গালি দেয়া এবং তাদের শানে বেয়াদবী করা কুফরী ।
* যে জাদুর মধ্যে ঈমানের পরিপন্থী কুফর ও শিরকের কথাবার্তা বা কাজকর্ম থাকে তা কুফরী ।
ঈমান পরিপন্থী কিছু আধুনিক ধ্যান-ধারণা
* জনগণকে সকল ক্ষমতার উৎস মানা, জনগণকে আইনের উৎস মানা ঈমান পরিপন্থী । কেননা ইসলামী আকীদা বিশ্বাসে আল্লাহকেই সর্বময় ক্ষমতার উৎস স্বীকার করা হয় এবং বিধান দেয়ার অধিকার একমাত্র আল্লাহর।
* প্রচলিত গণতন্ত্রে জনগণকেই সকল ক্ষমতার উৎস এবং জনগণ নির্বাচিত প্রতিনিধিদেরকে আইন বা বিধানের অথরিটি বলে স্বীকার করা হয়, তাই প্রচলিত গণতন্ত্র-এর ধারণা ঈমান আকীদার পরিপন্থী ।
* সমাজতন্ত্রে নিখিল বিশ্বের কোন সৃষ্টিকর্তা বা খোদা আছে বলে স্বীকার করা হয় না, তাই নাস্তিকতা নির্ভর এই সমাজতন্ত্রের মতবাদে বিশ্বাস করা ঈমান আকীদা পরিপন্থী ।
* গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ইত্যাদি তন্ত্রমন্ত্রকে মুক্তির পথ মনে করা এবং একথা বলা যে, ইসলাম সেকেলে মতবাদ, এর দ্বারা বিজ্ঞানের চরম উৎকর্ষের এই যুগে উন্নতি অগ্রগতি সম্ভব নয়- এটা কুফরী ।
* “ধর্ম নিরপেক্ষতা”-এর অর্থ যদি হয় কোন ধর্মে না থাকা, কোন ধর্মের পক্ষ অবলম্বন না করা। কোন ধর্মকে সমর্থন দিতে না পারা, তাহলে এটা কুফরী মতবাদ। কেননা ইসলাম ধর্মে থাকতেই হবে, ইসলামের পক্ষ অবলম্বন করতেই হবে, ইসলামী কার্যক্রমকে সমর্থন দিতেই হবে। আর যদি ধর্মনিরপেক্ষতার অর্থ হয় রাষ্ট্রীয়ভাবে ইসলাকে প্রতিষ্ঠিত না করা, ইসলামী আইন ও ইসলামী রাষ্ট প্রতিষ্ঠার বিষয়কে অস্বীকার করা, তাহলে সে ধারণাও ইসলামী আকীদা বিশ্বাসের পরিপন্থী। কেননা, ইসলামী আকীদা বিশ্বাসে ক্ষমতা ও সামর্থ্য থাকলে ইসলামী খেলাফত প্রতিষ্ঠা করা ফরয। আর কোন ফরযকে অস্বীকার করা কুফরী । যদি ধর্মনিরপেক্ষতার অর্থ শুধু এতটুকু হয় যে, সকল ধর্মাবলম্বীরা নিজ নিজ ধর্ম কর্ম পালন করতে পারবে, জোর জবরদস্তী কাউকে অন্য ধর্মে প্রবেশ করানো যাবে না, তাহলে এতটুকু ধারণা ইসলাম পরিপন্থী হবে না।
* ডারউইন-এর বিবর্তনবাদে বিশ্বাস করা কুফরী অথাৎ, একথা বিশ্বাস করা যে, বিবর্তন অনুযায়ী ক্রমান্বয়ে পরিবর্তন হতে হতে এক পর্যায়ে বানর থেকে মানুষ সৃষ্টি হয়েছে। এরূপ বিশ্বাস ইসলাম ও ঈমান পরিপন্থী । ইসলামী আকীদা বিশ্বাসে আল্লাহ তাআলা নিজ হাতে সর্ব প্রথম হযরত আদম (আঃ) কে সৃষ্টি করেছেন এবং তার থেকেই মনুষ্য জাতির বিস্তৃতি ঘটেছে।
* ইসলাম মসজিদের ভিতর সীমাবদ্ধ থাকবে, ইসলাম ব্যক্তিগত ব্যাপার, ব্যক্তিগত জীবনে এটাকে সীমাবদ্ধ রাখতে হবে, সমাজ বা রাষ্ট্রীয় জীবনে এটাকে টেনে আনা যাবে না- এরূপ বিশ্বাস করা কুফরী। কেননা, এভাবে ইসলামের ব্যাপকতাকে অস্বীকার করা হয়। ইসলামী আকীদা বিশ্বাস অনুযায়ী কুরআন হাদীছে তথা ইসলামে মানুষের ব্যক্তিগত, সামাজিক, রাষ্টীয় যাবতীয় ক্ষেত্রের সকল বিষয়ে শাশ্বত সুন্দর দিক নির্দেশনা রয়েছে।
* নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত, পর্দা করা ইত্যাদি ফরয সমূহকে ফরয তথা অত্যাবশ্যকীয় জরুরী মনে না করা এবং গান, বাদ্য, সুদ, ঘুষ ইত্যাদি হারাম সমহকে হারাম মনে না করা এবং এগুলোকে মৌলভীদের বাড়াবাড়ি বলে আখ্যায়িত করা কুফরী। কেননা কোন ফরযকে ফরয বলে অস্বীকার করা বা কোন হারাম কে জায়েয মনে করা কুফরী ।
* টুপী, দাডি, পাগড়ী, মসজিদ, মাদ্রাসা, আলেম মৌলভী ইত্যাদিকে তুচ্ছ জ্ঞান করা, এগুলোকে হেয় দৃষ্টিতে দেখা, এগুলো নিয়ে ঠাট্রা বিদ্রুপ করা মারাত্মক গোমরাহী। ইসলামের কোন বিষয়- তা যত সামান্যই হোক- তা নিয়ে ঠাট্টা বিদ্রুপ করলে ঈমান নষ্ট হয়ে যায় ।
* আধুনিক কালের নব্য শিক্ষিতদের কেউ কেউ মনে করে যে, কেবল মাত্র ইসলামই নয়- হিন্দু, খৃষ্টান, ইয়াহুদী, বৌদ্ধ নির্বিশেষে যে কোন ধর্মে থেকে মানবতা, মানব সেবা পরোপকার প্রভৃতি ভাল কাজ করলে পরকালে মুক্তি হবে। এরূপ বিশ্বাস করা কুফরী । একমাত্র ইসলাম ধর্ম অনুসরণের মধ্যেই পরকালীন মুক্তি নিহিত- একথায় বিশ্বাস রাখা ঈমানের জন্য জরুরী।
বিঃ দ্রঃ অত্র গ্রন্থে যে সব বিষয়কে কুফরী বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে, কারও মধ্যে তা পরিলক্ষিত হলেই তাকে কাফের বলে ফতুয়া দিয়ে দেয়া যাবে না। কেননা কুফুরের মধ্যে বিভিন্ন স্তর রয়েছে। যদিও সব স্তরের কুফুরই গোমরাহী এবং যার মধ্যে তা পাওয়া যাবে সে পথভ্রষ্ট, গোমরাহ এবং আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত বহির্ভুত, তবে কুফরের কোন স্তর পাওয়া গেলে কাউকে কাফের বলে ফতুয়া দেয়া যায় তা বিজ্ঞ উলামা ও মুফতীগণই নির্ণয় করতে পারেন। এ ব্যাপারে সাধারণ মানুষের পক্ষে বিজ্ঞ উলামা ও মুফতীগণের শরণাপন্ন হওয়া ব্যতীত নিজেদের থেকে কোন ফতুয়া বা সিদ্ধান্ত প্রকাশ করা সমীচীন হবে না। কাউকে কাফের আখ্যায়িত করার জরুরী কয়েকটি মূলনীতি অত্র অধ্যায় (প্রথম অধ্যায়)-এর শেষে বর্ণনা করা হয়েছে।
কতিপয় শিরক
* কোন বুযুর্গ বা পীর সম্বন্ধে এই আকীদা রাখা যে, তিনি সব সময় আমাদের অবস্থা জানেন । তিনি সর্বত্র হাজির নাযির।
* কোন পীর বুযুর্গকে দূর দেশ থেকে ডাকা এবং মনে করা যে তিনি জানতে পেরেছেন।
* কোন পীর বুযুর্গের কবরের নিকট সন্তান বা অন্য কোন উদ্দেশ্য চাওয়া।
* পীর বা কবরকে সাজদা করা ।
* কোন বুযুর্গের নাম অযীফার মত জপ করা ।
* কোন পীর বুযুর্গের নামে শিন্নি, ছদকা বা মান্নত মানা ।
* কোন পীর বুযুর্গের নামে জানোয়ার যবেহ করা।
* কারও দোহাই দেয়া।
* কারও নামের কছম খাওয়া বা কিরা করা।
* আলীবখশ, হোছাইন বখশ ইত্যাদি নাম রাখা ।
* নক্ষত্রের তাছীর (প্রভাব) মানা বা তিথি পালন করা,
* জ্যোতির্বিদ, গণক, ঠাকুর বা যার ঘাড়ে জিন এসেছে তার নিকট হাত দেখিয়ে অদৃষ্ট সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা। তাদের ভবিষ্যদ্বাণী ও গায়েবী খবর বিশ্বাস করা।
* কোন জিনিস দেখে কুলক্ষণ ধরা বা কুত্রা মনে করা, যেমন অনেকে যাত্রা মুখে কেউ হাঁচি দিলে কুযাত্রা মনে করে থাকে।
* কোন দিন বা মাসকে অশুভ মনে করা ।
* মহররমের তাজিয়া বানানো।
* এ রকম বলা যে, খোদা রসূলের মর্জি থাকলে এই কাজ হবে বা খোদা রসূল যদি চায় তাহলে এই কাজ হবে ।
* এরকম বলা যে, উপরে খোদা নীচে আপনি (বা অমুক )
* কাউকে “পরম পূজনীয়” লেখা।
* “কষ্ট না করলে কেষ্ট (শ্রীকৃষ্ণ) পাওয়া যায় না" বলা বা “জয়কালী নেগাহবান" ইত্যাদি বলা।
* কোন পীর বুযুর্গ, দেও পরী, বা ভূত ব্রাহ্মণকে লাভ লোকসানের মালিক মনে করা ।
* কোন পীর বুযুর্গের দরগাহ বা কবরের চতুর্দিক দিয়ে তওয়াফ করা।
* কোন পীর বুযুর্গের দরগাহ বা বাড়ীকে কাবা শরীফের ন্যায় আদব-তাযীম করা।
কতিপয় বিদআত
বিদআত অর্থ নতুন সৃষ্টি। শরীয়তের পরিভাষায় বিদআত বলা হয় দ্বীনের মধ্যে কোন নতুন সৃষ্টিকে, অর্থাৎ দ্বীনের মধ্যে ইবাদত মনে করে এবং অতিরিক্ত ছওয়াবের আশায় এমন কিছু আকীদা বা আমল সংযোজন ও বৃদ্ধি করা, যা রাসূল (সঃ) সাহাবী ও তায়েবীদের যুগে অর্থাৎ, আদর্শ যুগে ছিল না। তবে যে সব নেক কাজের প্রেক্ষাপট সে যুগে সৃষ্টি হয়নি, পরবর্তীতে নতুন প্রেক্ষাপট সৃষ্টি হওয়ায় নতুন আঙ্গিকে দ্বীনের কোন কাজ করা হয় সেটা বিদআত নয়, যেমন প্রচলিত ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি।
নিম্নে কতিপয় বিদআতের বিষয় চিহ্নিত করে দেখানো হল :
* কোন বুযুর্গের মাজারে ধুমধামের সাথে মেলা মিলানো।
* উরস করা।
* কাওয়ালী ।
* জন্ম বার্ষিকী ও মৃত্যুবার্ষিকী পালন করা।
* মৃতের কুলখানী করা (অর্থাৎ, চতুর্থ দিনে ঈছালে ছওয়াব করা)
* মৃতের চেহলাম বা চল্লিশা করা ।
* কবরের উপর চাদর দেয়া।
* কবরের উপর ফুল দেয়া।
* কর পাকা করা ।
* কবরের উপর গম্বুজ বানানো।
* কবরের দুই প্রান্তে কাচা ডাল লাগানো । তবে কোন কোন আলেম এটাকে জায়েয বলেছেন যদি মাঝে মধ্যে এটা করা হয় এবং স্থায়ী নিয়মে পরিণত করা না হয়।
* মাজারে চাদর, শামিয়ানা, মিঠাই ইত্যাদি নযরানা দেয়া।
* প্রচলিত মীলাদ অনুষ্ঠান ।
* মীলাদ অনুষ্ঠানে কেয়াম করা ।
* জানাযার নামাযের পর আবার হাত উঠিয়ে দুআ করা।
* জানাযার নামাযের পর জোর আওয়াজে কলেমা পড়তে পড়তে জানাযা বহন করে নিয়ে যাওয়া।
* দাফনের পর কবরের কাছে আযান দেয়া।
* ঈদের নামাযের পর মুসাফাহা ও মুআনাকা বা কোলাকুলি করা ।
* আযানের পর হাত উঠিয়ে দুআ করা।
* আযান ইকামতের মধ্যে রাসূল (সঃ)-এর নাম এলে বৃদ্ধা আঙ্গুলে চুমু দিয়ে চোখে লাগানো।
* রমজানের শেষ জুমুআর খুতবায় বিদায় জ্ঞাপন মূলক শব্দ (যেমন আল-বিদা) যোগ করা । “জুমাতুল বিদা' বলে কোন ধারণা ইসলামে নেই ।
* আমীন বলে মুনাজাত শেষ করা নিয়ম, অনেকে কালেমায়ে তইয়্যেবা বলতে বলতে মুখে হাত বুলান এবং মুনাজাত শেষ করেন-এটা কুরআন সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত নয়, এটা বিদআত
* জানাযার উপর কালেমা ইত্যাদি লেখা বা ফুলের চাদর বিছানো।
কতিপয় রসম বা কুসংস্কার ও কুপ্রথা
* বিধবা বিবাহকে দুষণীয় মনে করা।
* বিবাহের সময় সামর্থ না থাকা সত্ত্বেও সমস্ত দেশাচার পালন করা এবং অযথা অপব্যয় করা ।
* নছব বা বংশের গৌরব করা।
* কোন হালাল পেশাকে অপমানের বিষয় মনে করা। যেমন দপ্তরীর কাজ করা, মাঝিগিরী বা দর্জিগিরী করা, তৈল-লবণের দোকান করা ইত্যাদি।
* বিবাহ শাদিতে হিন্দুদের রছম পালন করা যেমন ফুল-কুলা দ্বারা বৌ বরণ করা । ভরা মজলিসে বউ-এর মুখ দেখানো, গীত গেয়ে স্ত্রী-পুরুষ একত্রিত হয়ে বর কনেকে গোসল দেয়া ইত্যাদি।
* মৃত ব্যক্তির ব্যবহৃত কাপড় চোপড়কে দুষণীয় মনে করা ।
* বিনা প্রনোজনে কুকুর পালন করা (তবে শিকার ও পাহারার প্রয়োজনে কুকুর পালন করা বৈধ)
* বিবাহ-শাদী, খতনা ইত্যাদিতে হাদিয়া উপঢৌকন দেয়। এসব উপঢৌকন প্রদানের পশ্চাতে ভাল নিয়ত থাকে না বা খারাপ নিয়ত থাকে, যেমন না দিলে অসম্মান হয়, দুর্নাম হয় বিধায় দেয়া হয় কিম্বা অমুক অনুষ্ঠানে তারা দিয়েছিল তাই দিতে হয় ইত্যাদি উদ্দেশ্যে মানুষ দিয়ে থাকে।
* বিবাহ-শাদিতে পদে পদে শত শত রছম ও কুসংস্কার পালিত হয়, এগুলো বর্জনীয়। প্রত্যেকটা পদে পদে শরীয়তের তরীকা কি তা জেনে বাকী সব পরিত্যাগ করা উচিত।
* শবে বরাতে হালুয়া রুটি করা, পটকা ফুটানো, আতশ বাজী করা ।
* আশুরায় খিচুড়ি ও শরবত তৈরি এবং বন্টন।
* শবে বরাত ও শবে কদরে রাত্র জাগরণের জন্য ফরয ওয়াজিব থেকে বেশী গুরুত্ব সহকারে লোকদের সমবেত করার উদ্যোগ নেয়া ।
* শাব্দিক অর্থে “ঈদ মুবারক" বলা খারাপ ছিল না, কিন্তু এটা রছমে পরিণত হয়েছে বিধায় পরিত্যাগ করাই শ্রেয়।
* ঈদগাহে বা মসজিদে যাওয়ার আগেই তাসবীহ বা জায়নামায় দিয়ে স্থান দখল করে রাখা।
* মুয়াজ্জিনের জন্য জায়নামায বিছিয়ে স্থান নির্দিষ্ট করে রাখা ।
* মসজিদ, মাদ্রাসা প্রভৃতি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের জন্য বা ধর্মীয় অন্য কোন কাজের জন্য মজলিসের মধ্যে এমন ভাবে চাঁদা আদায় ও দান কালেকশন করা যে, মানুষ শরমে পড়ে বা চাপের মুখে পীড়াপীড়ির কারণে দান করে।
* বিপদ-আপদে যে কোন দান-সদকা করলে বিপদ দুরীভূত হয়, কিন্তু গরু ছাগল মোরগ প্রভৃতি কোন প্রাণীই জবাই করতে হবে-যেমন বলা হয় জানের বদলে জান- এটা একটা রছম । জানের বদলে জান হওয়া জরুরী নয় বরং যে কোন ছদকা হলেই তা বিপদ দুরীভূত হওয়ার সহায়ক।
* তারাবীহতে কুরআন খতম হওয়ার দিন মিষ্টি বিতরণ ।
* মাইয়েতের জন্য ঈছালে ছওয়াব করা দুআ করা শরীয়ত সম্মত বিষয়, কিন্তু সেটা সম্মিলিত হয়েই করতে হবে এরূপ বাধ্যবাধকতার পেছনে পড়াও রছমে পরিণত হয়েছে।
No comments