ইলম শিক্ষার (জ্ঞান অর্জনের) গুরুত্ব, ফজিলত ও প্রয়োজনীয়তা । Islamic Media Blog
![]() |
| ইলম শিক্ষা |
ইলম হাছিল (জ্ঞান অর্জন) করা সম্পর্কিত প্রাথমিক কিছু কথা
ইলম কাকে বলে :
ইলম-এর শাব্দিক অর্থ জ্ঞান। ইসলামের পরিভাষা অনুসারে কুরআন হাদীছ তথা ইসলামের জ্ঞানকেই ইলম বলা হয়। ইলমের সাথে সাথে আমলও কাম্য। আমল বিহীন ইলম ইলম হিসেবে আখ্যায়িত হওয়ার যোগ্য নয়।
ইলম হাছিল করার গুরুত্ব :
আবশ্যক পরিমাণ ইল্ম হাছিল করা প্রত্যেক মুসলমান নর নারীর উপর ফরযে আইন। আর ফরয তরক করা কবীরা গোনাহ ! আবশ্যক পরিমাণ (যা প্রত্যেকের উপর ফরযে আইন বলতে বোঝায়- নামায, রোযা ইত্যাদি ফরয বিষয় এবং দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজনীয় লেন-দেন ও কায়-কারবার সম্পর্কিত বিষয়াদির মাসআলা-মাসায়েল ও হুকুম-আহকাম জানা। আবশ্যক পরিমাণ অপেক্ষা অতিরিক্ত ইলম যা অন্যের উপকারার্থে প্রয়োজন তা হাছিল করা ফরযে কেফায়া অর্থাৎ, কতক লোক অবশ্যই এরূপ থাকতে হবে যারা দ্বীনের সব বিষয়ে সমাধান বলে দিতে পারবেন, নতুবা সকলেই ফরয তরকের পাপে পাপী হবে। তাই প্রতি এলাকায় প্রয়োজনীয় সংখ্যক বিজ্ঞ আলেম থাকা আবশ্যক।
ইলমের ফজীলত :
* যাদেরকে ইলম দান করা হয়েছে আল্লাহ তাদের মর্যাদা উন্নীত করবেন । (আল কুরআন)
* হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ) বলতেনঃ ইলমে দ্বীন চর্চার একটি মজলিস ষাট বৎসর নফল ইবাদাত করা অপেক্ষাও অধিক উৎকৃষ্ট। (এলমের ফজীলত) |
* হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রাঃ) ও হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেছেনঃ ইলমে দ্বীনের একটি অধ্যায় শিক্ষা করা এক হাজার রাকআত নফল অপেক্ষা অধিক উৎকৃষ্ট, আর এর একটি অধ্যায় শিক্ষা দেয়া একশত রাকআত নফল অপেক্ষা উৎকৃষ্ট। (এলমের ফজীলত)
* আল্লাহ যার কল্যাণ চান তাকে দ্বীনী বুঝ (ধর্মীয় জ্ঞান) দান করেন । (বোখারী ও মুসলিম)
ইলম হাছিল করার পদ্ধতিঃ
সাধারণত তিন পদ্ধতিতে ইলম হাছিল করা যায় (এক) নিয়মিত কোন উস্তাদ থেকে (দুই) দ্বিনী কিতাবাদি পাঠ করে (তিন) কারও থেকে ওয়াজ নছীহত বা দ্বিনী আলোচনা শুনে কিম্বা জিজ্ঞাসাবাদ করে। এই তিনটি পদ্ধতির প্রত্যেকটির ক্ষেত্রে কিছু নীতিমালা রয়েছে। তা হল :
(এক) উস্তাদ নির্বাচনের নীতিমালা :
১. উস্তাদ হক্কানী ব্যক্তি হতে হবে অর্থাৎ, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের অনুসারী হতে হবে, কোন বাতিল মতবাদে বিশ্বাসী ব্যক্তিকে উস্তাদ বানানো যাবে না ।
২. উস্তাদের চিন্তাধারা ঠিক থাকতে হবে। নতুবা ছাত্রের চিন্তাধারাও সঠিক হয়ে গড়ে উঠবে না।
৩. উস্তাদের মধ্যে ইলম অনুযায়ী আমল থাকতে হবে ।
৪. উস্তাদ আদর্শবান ব্যক্তি হতে হবে এবং তার আখলাক-চরিত্র উন্নত মানের হতে হবে।
(দুই) গ্রন্থ পাঠের নীতিমালা :
১. কোন দ্বীনী বিষয় শিক্ষা করার উদ্দেশ্যে পাঠ করার জন্য যখন কোন কিতাব (গ্রন্থ) নির্বাচন করতে হবে তখন সর্ব প্রথম দেখতে হবে কিতাব খানার লেখক নির্ভরযোগ্য ব্যক্তি কিনা, তিনি ভাল জানেওয়ালা ব্যক্তি কিনা। যার লেখা কিতাব পাঠ করে ইলম হাছেল করা হবে তিনিও উস্তাদের পর্যায়ভুক্ত: অতএব পূর্বের পরিচ্ছেদে উস্তাদ নির্বাচনের যে নীতিমালা বর্ণনা করা হয়েছে কিতাবখানার লেখক সেই নীতিমালায় উত্তীর্ণ কি না তা দেখে নিতে হবে ।
২. বিজ্ঞ আলেম নন- এমন ব্যক্তির জন্য কোন বাতেল পন্থী ও বাতেল মতবাদে বিশ্বাসী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের লিখিত বই পাঠ করা ঠিক নয়। এরূপ ব্যক্তিদের জন্য বিধর্মীদের কিতাব যেমন তাওরাত, ইঞ্জীল ইত্যাদি পাঠ করা ও জায়েয নয় । অনেকে যুক্তি দিয়ে থাকেন- আমরা পাঠ করে ভালটা গ্রহণ করব, মন্দটা গ্রহণ করব না, তাহলে কি অসুবিধা? এ যুক্তি এ জন্য গ্রহণ যোগ্য নয় যে, ভালমন্দ সঠিক ভাবে বিচার করার মত পর্যাপ্ত জ্ঞানের অভাব থাকায় তিনি হয়ত মন্দটাকেই ভাল ভেবে গ্রহণ করে বিভ্রান্তি ও গুমরাহী-র শিকার হয়ে যেতে পারেন ।
৩. কোন ধর্মীয় গ্রন্থ পাঠ করে কোন বিষয় সন্দেহ পূর্ণ মনে হলে বা অস্পষ্ট মনে হলে কিম্বা ভাল ভাবে বুঝতে না পারলে দ্বিনী ইলম সম্বন্ধে বিজ্ঞ আলেম ব্যক্তি থেকে সেটা ভাল ভাবে বুঝে নিতে হবে ।
৪. অনেকে দু’চার খানা দ্বীনী পুস্তক পাঠ করেই দ্বীন সম্পর্কে ইজতেহাদ বা গবেষণা শুরু করে দেন, অথচ ইজতেহাদ বা গবেষণা করার জন্য যে শর্ত সমূহ এবং পর্যাপ্ত জ্ঞানের প্রয়োজন তা তার মধ্যে অনুপস্থিত। এটা নিতান্তই বালখিল্যতা। নিজের অজানার বহর সম্পর্কে অজ্ঞ থাকার কারণেই এরূপ মতি বিভাট ঘটে থাকে। এরূপ লোকদের গ্রন্থ পাঠ গুমরাহীর কারণ হতে পারে।
৫. গ্রন্থের মধ্যে কোথাও কোন মাসআল বা বর্ণনা যদি নিজেদের মাযহাবের খেলাফ মনে হয়, তাহলে সে অনুযায়ী আমল করা যাবে না। জানার জনা সেটা পড়া যাবে কিন্তু আমল করতে হবে নিজেদের ইমামদের মাযহাব ও মাসায়েল অনুযায়ী । প্রয়োজন বোধ হলে নিজেদের মাযহাব সম্পর্কে বিস্তারিত ব্যাখ্যা বিজ্ঞ আলেম থেকে জেনে নেয়া যাবে। মাযহাব অনুসরণ প্রসঙ্গে আমাদের পোষ্ট দেখুন।
৬. দ্বিনী কিতাব (গ্রন্থ)-এর আদব রক্ষা করতে হবে ।
(তিন) কার ওয়াজ-নছীহত বা দ্বিনী আলোচনা শোনা হবে- এ সম্পর্কে নীতিমালা:
১. সর্ব প্রথম দেখতে হবে তার আকীদা বিশ্বাস ও চিন্তা-ধারা সহীহ কিনা এবং তিনি হক পন্থী কিনা। নিজের জানা না থাকলে কোন আলেম থেকে তার সম্পর্কে জেনে নিতে হবে ।
২. জেনে নেয়ার পরও তার কোন বক্তব্য সন্দেহ পূর্ণ মনে হলে কোন বিজ্ঞ আলেম থেকে সে সম্পর্কে তাহকীক করে নিতে হবে। তাহকীক করার পূর্বে সে অনুযায়ী আমল করা যাবেনা বা তাতে বিশ্বাস স্থাপন করা যাবে না।
ইলম হাছিল করার জন্য যা যা শর্ত ও করণীয় :
১. নিয়ত সহীহ করে নিতে হবে অর্থাৎ, আমল করা ও আমল করার মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করার নিয়তে ইলম হাছিল করতে হবে । জ্ঞান অর্জন করে মানুষের
সঙ্গে তর্কে বিজয়ী হওয়া বা অহংকার প্রদর্শন কিম্বা সম্মান অর্জন প্রভৃতি নিয়ত রাখা যাবে না।
২. কিছু জানি না- এরূপ মনোভাব নিয়ে ইলম সন্ধানে থাকতে হবে। জানার জন্য আগ্রহ এবং মনে ব্যাকুলতা থাকতে হবে ।
৩. দ্বীনী ইলমের আযমত (সম্মানবোধ) অন্তরে রাখতে হবে । এই ইর্ম শিক্ষা করে কী হবে- এরূপ হীনমন্যতা পরিহার করতে হবে ।
৪. গোনাহ থেকে মুক্ত থাকতে হবে, কেননা পাপীদের অন্তরে সঠিক ইলম প্রবেশ করে না ।
৫. উস্তাদ ও কিতাবের আদব রক্ষা করতে হবে । উস্তাদের সাথে সুসম্পর্ক রাখতে হবে এবং উস্তাদের হক আদায় করতে হবে।
৬. উস্তাদের জন্য দুআ করতে হবে। কিতাব পাঠ করে জ্ঞান অর্জন করা হলে সেই কিতাবের লেখকের জন্য এ দুয়া করা কর্তব্য।
৭. ইলমের জন্য মেহনত করতে হবে।
৮. যতক্ষণ পর্যন্ত কোন বিষয় পরিষ্কারভাবে বুঝে না আসে, ততক্ষণ পর্যন্ত বার বার উস্তাদকে জিজ্ঞেস করে কিম্বা বারবার পড়ে সেটা পরিষ্কার করে নিতে হবে ।
৯. ইলম বৃদ্ধির জন্য এবং ভালভাবে বুঝে আসার জন্য আল্লাহর কাছে দুআ করতে হবে।
১০. ইলম অর্জন করে এই ইলম অন্যকে শিক্ষা দেয়া এবং এই ইলম অনুযায়ী আমল করার জন্য অন্যকে দাওয়াত দেয়ার নিয়তও রাখতে হবে।
শিক্ষা গ্রহণ ও শিক্ষা প্রদানের পদ্ধতিঃ
এ সম্পর্কে ছাত্রের করণীয় এবং উস্তাদের করণীয় শীর্ষক দুইটি পরিচ্ছেদে পরোক্ষভাবে আলোচনা এসে গিয়েছে।
ইলমের জন্য সফরের মাসআলা:
সফরের কারণে যদি মাতা-পিতা বা স্ত্রী সন্তানাদির ভরণ-পোষণ বা জীবনের আশংকা হয় অর্থাৎ, তার সম্পদ না থাকে এবং তাদের রক্ষণাবেক্ষণের মত কেউ না থাকে, তাহলে ইলম অর্জন করার জন্য কোন অবস্থাতেই সফর করতে পারবে না , চাই ফরযে আইন পর্যায়ের ইলম হাছিল করার জন্য হোক বা ফরযে কেফায়া পর্যায়ের ইলম হাছিল করার জন্য হোক । আর তাদের ব্যাপারে এরূপ আশংকা না থাকলে মাতা-পিতা বা স্ত্রীর নিষেধাজ্ঞা মানবে না। তবে সন্তান যদি দাড়ি বিহীন বালক হয় আর পিতা-মাতা তার চরিত্র নষ্ট হওয়ার আশংকায় সফর করতে নিষেধ করেন তাহলে সে নিষেধাজ্ঞা মান্য করা জরুরী কিম্বা যদি সফরের কারণে সন্তানের জীবনের আশংকা থাকে তাহলেও সন্তানকে মাতা-পিতার নিষেধাজ্ঞা মানতে হবে । আর মোস্তাহাব পর্যায়ের ইলম অর্থাৎ, গভীর পাণ্ডিত্য অর্জন করার পর্যায়ের ইলম হাছিল করার জন্য সর্বাবস্থায় মাতা-পিতার আনুগত্য করা উত্তম। আর স্ত্রীর আনুগত্য করা না করা তার ইচ্ছা- উভয়টার অবকাশ রয়েছে।
স্ত্রীর ভরণ-পোষণ ও চার মাসে অন্ততঃ একবার তার সঙ্গে মিলন স্ত্রীর অধিকার এবং এটা স্বামীর উপর ওয়াজিব। এ অধিকার আদায়ে ত্রুটি না হলে ইলমের জন্য সফর করা জায়েয কিম্বা স্ত্রী যদি স্বেচ্ছায় তার এ অধিকার ছেড়ে দিয়ে স্বামীকে সফরে যাওয়ার অনুমতি দেয় তাহলেও সফর করা জায়েয হবে। অবশ্য এত সব সত্ত্বেও যদি স্ত্রীর ব্যাপারে চারিত্রিক ফেতনার আশংকা হয় তাহলে সফরে থাকা জায়েয নয়।
আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান ও জাগতিক বিদ্যা অর্জন সম্পর্কে শরীয়তের দৃষ্টিভঙ্গি:
বর্তমান যুগের পার্থিব জ্ঞান-বিজ্ঞান যেমন স্বাস্থ্য বিজ্ঞান, চিকিৎসা বিজ্ঞান, প্রকৌশল বিজ্ঞান, অর্থ বিজ্ঞান, রাষ্ট্র বিজ্ঞান, কৃষি বিজ্ঞান, প্রাণী বিজ্ঞান, উদ্ভিদ বিজ্ঞান, বিদ্যুৎ বিজ্ঞান, ভূতত্ত্ব বিজ্ঞান, নক্ষত্র বিজ্ঞান, মনস্তত্ত্ব বিজ্ঞান ইত্যাদি বিষয়গুলি শিক্ষা করা যদি ইসলামের উৎকর্ষ সাধন ও মানব কল্যাণের উদ্দেশ্যে হয় তাহলে তা বৈধ, কেননা ভাল উদ্দেশ্যে তা শিক্ষা করা হচ্ছে। এর বিপরীত কোন মন্দ উদ্দেশ্যে এগুলি শিক্ষা করা বৈধ নয়। ফেকাহর পরিভাষায় এগুলিকে "হারাম লেগায়রিহী' বলে- 'হারাম লে আয়নিহী' নয় অর্থাৎ, প্রকৃত প্রস্তাবে এগুলি নিজে হালাল, জায়েয ও মোবাহ, কিন্তু অন্য হারাম কাজের ওছীলা ও মাধ্যম হওয়ার কারণে তা হারাম হয়ে যায়। পক্ষান্তরে উদ্দেশ্য ভাল হলে এগুলিই তখন অনেক নেকীর কাজে পরিণত হয়। ( ইংরেজী পড়িবনা কেন? মূল- হাকীমুল উম্মত হযরত মাওলানা শাহ আশরাফ আলী থানবী, অনুবাদ হযরত মাওঃ শামছুল হক ফরিদপুরী। এরই ভিত্তিতে মাওলানা থানবী (রহঃ) লিখেছেন (উত্ত গ্রন্থের পরিশিষ্ট্য দ্রঃ) “যদি কেউ ইঞ্জিনিয়ারিং শিখে সততা সহকারে মানব সমাজের সেবার মনোবৃত্তি নিয়ে রাস্তা, পুল, ঘরবাড়ি তৈরি করে মানুষের উপকার করতে পারে, চিকিৎসা বিজ্ঞান শিক্ষা করে মানুষের সেবা করতে পারে, তাহলে তা উচ্চ দরের নেকীর কাজ ও ছওয়াবের কাজ হবে তাতে বিন্দুমাত্র সান্দেহ নেই। পক্ষান্তরে যদি ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে চোরামী ধোকাবাজী করে, ব্লাক মার্কেটিং করে, আমানতে খেয়ানত করে, মানুষের বাড়ি-ঘর, পুল, রাস্তা ইত্যাদি নষ্ট করে এবং চিকিৎসা বিজ্ঞান পড়ে গরীব রোগীদের সেবার পরিবর্তে শুধু অর্থগৃধুতার পরাকাষ্ঠা দেখিয়ে গরীবদের রক্ত শোষণ এবং গরীবদের প্রতি দুর্ব্যবহার করে, নতুন আবিষ্কারের মেশিন দ্বারা নিরীহ মানুষদের হত্যা করে, অর্থ শোষণ করে তাদেরকে কঙ্কালসার করে দেয়, তবে সেটা কুরআন হাদীসের সাধারণ সূত্র অনুসারে হারাম হবে, তাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই।
তাকলীদ ও মাযহাব অনুসরণ প্রসঙ্গ
প্রত্যেক মুসলমানের উপর মূলতঃ আল্লাহ এবং তাঁর রাসুল (সঃ)-এর আনুগত্য ও অনুসরণ করা ফরয। কুরআন এবং হাদীছের অনুসরণের মাধ্যমেই এ ফরয আদায় হবে। কিন্তু সরাসরি যারা কুরআন হাদীসের ভাষা-আরবী বোঝেন না, কিম্বা আরবী ভাষা বুঝলেও কুরআন হাদীস যথাযথ ভাবে অনুধাবন ও তা থেকে মাসলা-মাসায়েল চয়ন ও ইজতেহাদ করার জন্য আরবী ব্যাকরণ, আরবী অলংকার, আরবী সাহিত্য, উসূলে ফেকাহ, উসূলে হাদীছ, উসূলে তাফসীর ইত্যাদি যে সব আনুসঙ্গিক শাস্ত্রগুলো বোঝা প্রয়োজন নিয়মতান্ত্রিক ভাবে সেগুলো পাঠ করেননি বা পাঠ করলেও গভীরভাবে এসব বিদ্যায় পারদর্শী হতে পারেননি, তাদের পক্ষে সরাসরি সব মাসলা-মাসায়েল কুরআন হাদীছ থেকে চয়ন ও ইজতেহাদ (গবেষণা) করে বের করা যেমন সম্ভব নয় তেমনি তা নিরাপদও নয় বরং গভীর বুৎপত্তি ও দক্ষতার অভাবে অনেক ক্ষেত্রে বিভ্রান্তি ও গোমরাহীর শিকার হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাই স্বাভাবিক। তাই এসব শ্রেণীর লোকদের জন্য বিস্তারিত মাসলা-মাসায়েল ও বিধি-বিধানের জন্য এমন কোন বিজ্ঞ আলেমের শরণাপন্ন হওয়া ব্যতীত গত্যন্তর নেই, যিনি উপরোক্ত বিদ্যাসমূহে পারদর্শী ও দক্ষ হওয়ার ফলে সরাসরি সব মাসলা-মাসায়েল ও বিধি-বিধান কুরআন হাদীছ থেকে চয়ন ও ইজতেহাদ করে বের করতে সক্ষম । এরূপ বিজ্ঞ ও ইজতেহাদের ক্ষমতা সম্পন্ন আলেম তথা মুজতাহিদ ইমামের শরণাপন্ন হওয়া এবং তিনি কুরআন-হাদীছ থেকে চয়ন ও ইজতেহাদ করে সব মাসলা-মাসায়েল ও বিধি-বিধান যেভাবে বলেন তার অনুসরণ করাকেই বলা হয় উক্ত ইমামের তাকলীদ করা বা উক্ত ইমামের মাযহাব অনুসরণ করা। তাকলীদ করা তাই উপরোক্ত শ্ৰেণী সমূহের লোকদের জন্য ওয়াজিব এবং যে ইমামেরই হোক এরূপ যে কোন এক জনেরই তাকলীদ করা ওয়াজিব । এক এক মাসআলায় এক এক জনের অনুসরণ করা এবং যে মাযহাবের যেটা সুবিধাজনক মনে হয় সেটা অনুসরণ করার অবকাশ নেই এবং সেরূপ করা জায়েযও নয়, কারণ তাতে সুবিধাবদি ও খাহেশাতের অনুসরণ করার সুযোগ সৃষ্টি হয়ে যায় এবং তার ফলে গোমরাহী-র পথ উন্মুক্ত হয়।
ইতিহাসে অনুরূপ মুজতাহিদ ইমাম অনেকেই অতিবাহিত হয়েছেন। তবে তঘধ্যে বিশেষভাবে চারজন ব্যাপকভাবে প্রসিদ্ধি ও গ্রহণযোগ্যতা লাভ করেছেন এবং তাঁদের চয়ন ও ইজতেহাদকৃত মাসলা-মাসায়েল তথা তাদের। মাযহাব ব্যাপকভাবে অনুসৃত হয়ে আসছে। তাই আমরা চার ইমাম ও চার মাযহাব-এর কথা শুনে থাকি। উক্ত চার জন ইমাম হলেন হযরত ইমাম আবু হানীফা (রহঃ), হযরত ইমাম শাফিয়ী (রহঃ), হযরত ইমাম মালেক (রহঃ) ও হযরত ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহঃ)। তাদের মাযহাবকেই যথাক্রমে হানাফী মাযহাব, শাফিয়ী মাযহাব, মালেকী মাযহাব ও হাম্বলী মাযহাব বলা হয়ে থাকে। এ সব মাযহাবই হক, তবে অনুসরণ যে কোন একটারই করতে হবে, যেমন পূর্বে বলা হয়েছে। উপমহাদেশের মুসলমান সহ পৃথিবীর অধিক সংখ্যক মুসলমান হযরত ইমাম আবু হানীফা (রহঃ)-এর তথা হানাফী মাযহাব-এর অনুসারী।

No comments