Header Ads

Islamic Media Blog

Tarbayat-e-aulad (ইসলামের দৃষ্টিতে সন্তান পালন) - part -3। Islamic Media Blog

 

Tarbayat-e-aulad
Tarbayat-e-aulad-part -3


Ziweq‡Z AvIjv`

Bmjv‡gi `„wó‡Z mšÍvb cÖwZcvjb

g~j D`y©t nvKxgyj D¤§Z †gvRv‡Ï‡` wgjøvZ

nhiZ gIjvbv Avkivd Avjx _vbex (int)


m~PxcÎ

1| †g‡q‡`i bvK wQ`ª Kiv

2| mšÍvbvw`i Rb¨ wewfbœ †`vqv

3| Ziweq‡Zi weeiY

4| wkï‡`i wkÿv I PwiÎMVb

5| mvZ ermi eq‡mB bvgv‡Ri Rb¨ ZvKx` Kwi‡e

6| ‡Q‡j †g‡q‡`i †ivRvi e¨vcv‡i Ae‡njv

7| wemwgjøvn ïiæ Kiv Ges g³‡e cvVv‡bv

8| wkïi wkÿvi eqm

9| wkï‡`i wkÿvi e¨vcv‡i Riæix †n`v‡qZ

10| ‡g‡q‡`i‡K Øxb I ciKv‡ji wkÿv †`Iqvi Avek¨KZv

11| wkï‡`i GQjvn I ZiweqZ

12| wkï‡`i Ziweq‡Zi KwZcq wbqg

13| mšÍvb cÖwZcvj‡bi wbqg

14| KwZcq Riæix †n`v‡qZ

15| ci¯úi n‡Ki weeiY


1| †g‡q‡`i bvK wQ`ª Kiv

জেওর-অলঙ্কার ব্যবহারের প্রয়োজনে মেয়েরা যে কোন কষ্টই হাসি মুখে বরণ করিয়া লইতে প্রস্তুত ? অলঙ্কার ব্যবহারের জন্য কান ছিদ্র করিতে হয়, উহাতে ভয়ানক কষ্টও হয় বটে, কিন্তু তাহারা এই কষ্টকে কিছুই মনে করে না, বরং হাসি মুখেই উহ সকল কষ্ট নহ্য করিয়া লইতেছে। নিহাকে হল। হয় যে, কান ছিদ্র কর ! কি কারণে এত কষ্ট করিবে? বরং এই ( তবে সঙ্গে সঙ্গেই তার উপর চড়াও হইয়া আসিবে  

Avgvi GK †`v¯Í wb‡Ri Kb¨v‡K Lye fvjevwm‡Zb| Kb¨vi †Kvb KóB wZwb mn¨ Kwi‡Z cvwi‡Zb bv| GKw`b wZwb Avgv‡K wRÁvmv Kwi‡jb, আমি যদি আমার Kb¨vi Kvb wQ`ª bv Kwi Z‡e wK Avgvi †Kvb Aciva nB‡e? জবাবে আমি তাহাকে বলিলাম, কান ছিদ্র না করিলেও কোন ক্ষতি নাই। আমার এই মন্তব্য বালিকার কানে পৌছিবার সঙ্গে সঙ্গে সে আমার উপর ভিষণভাবে চটিয়া গেল যে, নিজের বিবি-বহিনদের খবর নাই; মাসআলাটি যেন কেবল আমার জন্যই আবিষ্কার হইয়াছে।

এক ব্যক্তি নাক ছিদ্র করা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করিলে আমি বলিলাম, দোররে মোখতার প্রণেতা লিখিয়াছেন- এই বিষয়ে আমি পরিষ্কার কিছুই পাই নাই। আর শামী নাককে কানের সঙ্গে কেয়াস করিয়া উহা জায়েজ বলিয়াছেন। অর্থাৎ বাহ্য দৃষ্টিতে নাক কান যেহেতু সমপর্যায়ভুক্ত এবং কানের কথা যেহেতু উল্লেখ আছে, সুতরাং উহার উপর কেয়াস করিয়া নাক ছিদ্র করাও জায়েজ বলা হইয়াছে। তবে নাক ছিদ্র করা উত্তম নহে। 


2| mšÍvbvw`i Rb¨ wewfbœ †`vqv

আপন সন্তানাদির জন্য দোয়া করা প্রসঙ্গে হযরত ইবরাহীম (আঃ) হইতে আমাদের শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত। স্বয়ং তিনি নিজে সন্তানের পার্থিব কল্যাণ কামনা করিয়া দোয়া করিয়াছেন। যেমন বলা হইয়াছে-


অর্থঃ এবং ইহার অধিবাসীদের মধ্যে যাহারা আল্লাহ কেয়ামত বিশ্বাস করে তাহাদেরকে ফলের দ্বারা রিজিক দান কর। 

 

অনুরূপভাবে ধর্মীয় কল্যাণের দোয়ায় বলা হইয়াছে –

 


অর্থঃ হে পরওয়ারদিগার! তাহাদের মধ্য হইতেই তাহাদের নিকট একজন পয়গম্বর প্রেরণ করুন- যিনি তাহাদের নিকট তোমার আয়াতসমূহ তেলাওয়াত করিবেন। তাহাদেরকে কিতাব হেকমত শিক্ষা দিবেন এবং তাহাদেরকে পবিত্র করিবেন। নিশ্চয়ই তুমিই পরাক্রমশালী হেকমতওয়ালা। 

হযরত ইব্ররাহীম (আঃ) যেমন পার্থিব বিষয়ে দোয়া করিয়াছেন, অনুরূপভাবে ধর্মীয় বিষয়েও দোয়া করিয়াছেন। তিনি যেন নিজ আওলাদদের জন্য দোয়া করিয়া আমাদিগকে ইহাই শিক্ষা দিয়াছেন যে, নিজের সন্তানদের জন্য দুনিয়ার তুলানয় দ্বীনের গুরুত্ব বেশী দিবে আর আওলাদ (বা সন্তানাদি) এখানে ব্যাপকার্থে ব্যবহার করা হইয়াছে। প্রকৃত আওলাদ হউক বা ধর্মীয় আওলাদ। তাছাড়া আওলাদ তখনই প্রকৃত আওলাদে পরিণত হয় যখন সে যথাযথভাবে আনুগত্য করে যেমন নবীদের আনুগত্য করার পরই তাহাদের মকবুল আওলাদ হওয়া যায়। 

এক্ষণে আমাদের ইহা তলাইয়া দেখা আবশ্যক যে, আমরা নিজেদের আওলাদ-ফরজন্দের ব্যাপারে হযরত ইব্রাহীম আলাইহিসসালামের আদর্শ তরীকা কতটুকু অনুসরণ করিতেছি আমি এই কথা বলি না যে, লোকেরা তাহাদের আওলাদের হক আদায় করে না, অবশ্যই করে তবে এই কথা অস্বীকার করিবার উপায় নাই যে, মানুষ এই বিষয়ে দুনিয়াকেই অগ্রাধিকার দিতেছে নিজের সন্তানাদিকে প্রচুর অর্থ-সম্পদ কামাই করার পথ ধরাইয়া দিতে পারিলেই মনে করা হয় যে, আমরা তাহাদের হক আদায় করিয়াছি। বাকী তাহাদের আমল-আখলাকের যদি কোন ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকে তবে উহার এছলাহ তাহারা নিজেরাই করিয়া লইবে অর্থাৎ মানুষের অন্তরে দ্বীনের গুরুত্ব না থাকার কারণেই এইভাবে দুনিয়ার প্রতি ঝুকিয়া পড়িতেছে।

 

নেক সন্তান কামনা করিয়া দোয়া

নেক সন্তান কামনা করা এবং খারাপ সন্তান হইতে বাঁচিয়া থাকার কতিপয় দোয়া নিম্নে প্রদত্ত হইল-

Nake Child

অর্থঃ আয় পরওয়ারদিগার! আমাকে এবং আমার বংশধরকে নামাজ কায়েম করিবার শক্তি দান করুন আয় আল্লাহ! আমার দোয়া কবুল করুন 

Nake Child

অর্থঃ আয় আল্লাহ! আমাদের স্ত্রী বংশধর হইতে এমন মানুষ দান কর; যাহাদের কারণে আমাদের চক্ষু শীতল হয়, এবং আমাদিগকে ধর্মানুরাগী মানুষের নেতা বানাইও 

 Nake Child

অর্থ : আয় আল্লাহ! আমাকে আমার বংশধরসহ সংশোধন কর, আমি তওবা করতঃ

তোমার দিকে প্রত্যাবর্তন করিয়াছি এবং আমি মুসলমানদের দলভুক্ত আছি 

 

Nake Child

অর্থ আয় আল্লাহ! আমাদের স্ত্রী বংশধরে বরকত দান কর, এবং আমাদের তওবা কবুল কর কেননা, তুমিই তওবা কবুলকারী 

Nake Child

অর্থ : আয় আল্লাহ! আমি আপনার নিকট উত্তম বস্তু প্রার্থনা করিতেছি তাহা ধন-সম্পদ, স্ত্রী কিংবা সন্তানাদি যেন গোমরাহ এবং গোমরাহ করনেওয়ালা না হই।

 Nake Child

অর্থ : আয় আল্লাহ! আমি আপনার নিকট এমন সন্তান হইতে পানাহ চাইতেছি যাহা আমার জন্য মুসীবতের কারণ হইবে  

   

3| Ziweq‡Zi weeiY


†bK mšÍvb jv‡fi Dcvq

মায়ের কোলে প্রতিপালনের মাধ্যমেই মানুষের পার্থিব জীবনের সূচনা হয় এই সময়ই মায়ের আখলাক-চরিত্র স্বভাব-প্রকৃতি শিশুর চরিত্রে প্রতিফলিত হয় সেই কচি বয়সে তাহাদের কোন বোধশক্তি না হইলেও তাহারা যাহা দেখে শোনে উহাই তাহাদের কোমল মানসপটে অঙ্কিত হইয়া থাকে। এই কারণেই শিশুদের সামনেও কোন প্রকার অসঙ্গত আচরণ করিতে নাই 

কোন কোন বিশেষজ্ঞ এমনও লিখিয়াছেন, জননীর আচার-আচরণের প্রভাব তাহার উদরস্থ সন্তানের উপরও প্রতিফলিত হয় সুতরাং গর্ভবতী মহিলাদের পক্ষে তাকওয়া-তাহারাত, পরহেজগারী নেক আমলে বিশেষভাবে যত্নবান হওয়া আবশ্যক 

উদরস্থ সন্তানের উপরই যদি আমাদের নেক আমল বদ আমলের প্রভাব পড়ে, তবে ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর সন্তান যখন সকল কিছু দেখিতে-শুনিতে পাইবে তখন তো আরো ভালভাবেই মাতাপিতার আচার-আচরণ দ্বারা প্রভাবিত হইবে  

বিশেষজ্ঞগণ বলিয়াছেন, শিশুদের হৃদয় হইল ছাপাখানার মত যাহা যাহা সে দেখে শোনে উহার সকল কিছুই তাহার হৃদয়ে অঙ্কিত হইয়া থাকে এই কারণেই শিশুকে নেক চরিত্রবান রূপে গড়িয়া তোলার লক্ষে প্রথমে তাহার মাতাপিতাকেই নেক চরিত্রবান হইতে হইবে কারণ শৈশবে তাহার হৃদয়ে যাহা অঙ্কিত হইবে, পরিণত বয়সে উহাই তাহার চরিত্রে বিকশিত হইবে 

অনেকে এইরূপ ধারণা করিয়া থাকে যে, একান্ত কচি বয়সের শিশুরা তো আর ভাল-মন্দ কিছুই বুঝে না সুতরাং এই সময় কোন সাধারণ শিক্ষকের নিকটই তাহাদের প্রাথমিক পাঠ চলিতে পারে পরে যখন জ্ঞান-বুদ্ধি হইবে তখন কোন হুশিয়ার পরহেজগার উস্তাদের হাওয়ালা করিলেই চলিবে 

কিন্তু ভাইসকল! উপরোক্ত ধারণা সম্পূর্ণ ভুল একটি দুগ্ধপোষ্য শিশুর মুখে কথা ফুটিবার পূর্বেই তাহার দেমাগ কাজ করিতে শুরু করে সে যাহা দেখে শোনে উহার সকল কিছুই তাহার হৃদয়ে ছবির মত অঙ্কিত হইয়া থাকে টেপরেকর্ডার যখন মানুষের কথা ধারণ করে, তখন সে নীরব থাকে বটে, অবোধ শিশুর মত নীরব-নির্বাকেই সে মানুষের কথা অন্তরে ধারণ করিয়া রাখে পরে যথাসময় যখন সুইচ অন করা হইবে, অর্থাৎ শিশু যখন বয়ঃপ্রাপ্ত হইবে, তখন পূর্বেকার শোনা সকল কিছুই তাহার মাধ্যমে হুবহু প্রকাশ পাইবে|

শিশুর চরিত্রগঠন সম্পর্কে জনৈক বিজ্ঞ ব্যক্তি তাহার অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করিয়া বলিয়াছেন- পাঁচ বৎসর বয়সের ভিতরই শিশুর চরিত্র ভাল কি মন্দ উহা নির্নিত হইয়া যায় এই সময়সীমার মধ্যে তাহার অবচেতন হৃদয়-মন যাহা ধারণ করে উহাই তাহার চরিত্রে বদ্ধমূল হইয়া থাকে পাঁচ বৎসর অতিক্রম হওয়ার পর আর কোন অসঙ্গত-অভ্যাসই তাহার চরিত্রে সৃষ্টি করা যায় না সুতরাং এই পর্যালোচনা দ্বারা দেখা যাইতেছে যেই বয়সটিকে আমরা একান্তই অবুঝ, কর্মহীন এবং কোলে-কাখে দোলনায় বিচরণের সময় মনে করিতেছি, উহাই হইল শিশুর চরিত্র গঠনের মূল সময় শিশুর অবুঝ হৃদয় এই সময় যাহা ধারণ করিয়া রাখে, পরিণত বয়সে উহার উপর ভিত্তি করিয়াই তাহার মানব-চরিত্র গড়িয়া ওঠে 

কেহ বলিয়াছেন, শিশুদের এছলাহ সংশোধনের সহজ উপায় হইল উত্তমরূপে বড় সন্তানের এছলাহ্ করিয়া দেওয়া অতঃপর তাহার দেখাদেখি ছোটরাও উত্তম চরিত্রে অভ্যস্ত হইতে থাকিবে 

শৈশব কাটাইয়া বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাহাদিগকে অতীব যত্নের সহিত দ্বীনী এলেম শিক্ষা দিবে এবং শরীয়ত বিরুদ্ধ ক্রিয়া-কর্ম হইতে হেফাজতে রাখিবে নেক চরিত্রবান ব্যক্তিদের সংশ্রবে থাকিতে দিবে এবং দুষ্ট প্রকৃতির ছেলেমেয়েদের সঙ্গে যেন মিশিতে না পারে এই বিষয়ে সতর্ক থাকিবে 

মোটকথা, বুজুর্গানে দ্বীনের নিয়ম-তরীকায় শিশুদের তা'লীম-তরবিয়ত শিক্ষা-দিক্ষার ব্যবস্থা করিবে মহিলারা এই বিষয়ে যথেষ্ট ত্রুটি করিয়া থাকে অথচ তাহাদের সযত্ন তরবিয়তের মাধ্যমেই শিশুদের চরিত্রগঠন সহজভাবে সম্পন্ন হওয়া সম্ভব কারণ, শিশুদের বয়সের সিংহভাগটাই কাটে নারীদের সঙ্গে তবে এই কথাও সত্য যে, শিশুদের শিক্ষা-দিক্ষার জন্য এককভাবে নারীরাই দায়ী নহে, বরং এই বিষয়ে পুরুষদেরও দায়িত্ব রহিয়াছে। 

 

4| wkï‡`i wkÿv I PwiÎMVb

মানুষের জন্য আবশ্যকীয় এলেম হইল দ্বীনের এলেম (এই এলেমের কিছু কিছু বুনিয়াদী বিষয় শিশুরা মায়ের নিকটই শিক্ষা করিবে) শিশুকে সর্বপ্রথম কালেমা শরীফ শিক্ষা দিবে। যেই কালেমাটি সহজে শিক্ষা দেওয়া যায়, প্রথমে উহাই শিক্ষা দিবে। যেমন- আল্লাহ পাকই সকল কিছু পয়দা করিয়াছেন, তিনি সকল কিছু জানেন, তিনিই সকলের রিজিক দেন- ইত্যাদি এইভাবে শিশুকে আল্লাহ পাকের গুণাবলী শিক্ষা দিবে এবং তাহার নিকটই সকল কিছু প্রার্থনা করিতে বলিবে শিশুরা দুষ্টামি করিলে তাহাদিগকে বলিবে, এইরূপ করিলে আল্লাহ অসন্তুষ্ট হইবেন। 

মোটকথা, শিশুদের জন্য সহজবোধ্য বিষয়গুলির দুই একটি করিয়া বার বার বলিতে থাকিলে ক্রমে উহাতে তাহাদের একীন পয়দা হইতে থাকিবে। শিশু বয়সেই তাহাদের ধ্যান-ধারণায় সঠিক বিষয়গুলি বসাইয়া দেওয়া নারীদের কর্তব্য তাহাদের পক্ষেই এই ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করা সম্ভব 

অতঃপর বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গেই তাহাদিগকে কোরআন শরীফের ছোট ছোট সুরাগুলি মুখস্থ করাইতে থাকিবে সাত বৎসর বয়স হওয়ার পর নামাজের তালীম দিবে। আর দশ বৎসর বয়সে নামাজ না পড়িলে শাসন করিবে অর্থাৎ শৈশব হইতেই তাহাদিগকে নামাজে অভ্যস্ত করিয়া গড়িয়া তুলিবে 

ছেলেমেয়ে বড় হওয়ার পর এলমে দ্বীন শিক্ষা দিবে। পূর্ণ কোরআন শরীফ শিখানো সম্ভব না হইলে অন্ততঃ এক মঞ্জিল হইলেও শিক্ষা দিবে। শেষের দিকের সুরাগুলি জানা থাকিলে নামাজ আদায়ে অনেক সুবিধা হয় তাছাড়া পবিত্র কোরআনের প্রতিটি হরফের বিনিময়ে দশ নেকী তো আছেই 

অনেক সময় দেখা যায়- মহিলারা নিজেরা নামাজ আদায় করে বটে, কিন্তু ঘরের ছেলেমেয়ে এবং চাকর-চাকরানীদের নামাজের বিষয়ে তাহারা কিছুই বলে না শিশুরা যেহেতু মায়েদের কোলেই প্রতিপালিত হয়, সুতরাং তাহাদের আদত-আখলাক নামাজের অভ্যাস ইত্যাদি বিষয়ে মায়েদেরই অধিক যত্নবান হইতে হইবে ইহাতে কখনো অবহেলা করিবে না স্বাস্থ্যবিজ্ঞানীরা বলিয়াছেন, উন্নত চরিত্র নেক আমলের প্রভাবে মানুষের স্বাস্থ্যও ভাল থাকে। এদিকে মায়েরাই শিশুদের স্বাস্থ্যের প্রতি অধিক যত্ন লইয়া থাকে সুতরাং আমি এই ফায়দাও বলিয়া দিয়াছি যে, দ্বীনের বিষয়ে যত্নবান না হইলেও অন্ততঃ স্বাস্থ্যের প্রতি লক্ষ্য করিয়া হইলেও বাচ্চাদেরকে নামাজের তাকীদ করিবে 

অনুরূপভাবে ঘরের চাকরানীদেরকেও নামাজের জন্য তাকীদ করিতে হইবে তাহারা তোমাদের অধীন, তোমরা বলিলে অবশ্যই উহাতে কাজ হইবে আর এই বিষয়ে অবহেলা করিলে তোমাদেরকে জবাবদিহি করিতে হইবে সুতরাং কাজের মেয়ে নিয়োগ করার পূর্বেই এইরূপ শর্ত করিয়া লইবে যে, আমাদের এখানে কাজ করিতে হইলে তোমাদিগকে নিয়মিত নামাজ পড়িতে হইবে কোন ঘরে একজন বেনামাজী থাকিলেও সেই ঘরে আল্লাহর বে-রহমতী নাজিল হয় অথচ মহিলারা এই বিষয়টির প্রতি বিশেষ লক্ষ্য করে না 

 

5| mvZ ermi eq‡mB bvgv‡Ri Rb¨ ZvKx` Kwi‡e

একবার আমার মনে এইরূপ ধারণা হইল যে, নামাজের ব্যাপারে হাদীসে পাকে যে বলা হইয়াছে- “বাচ্চাদের বয়স সাত বৎসর হইলে তাহাদেরকে নামাজের হুকুম করিবেএখানে সাত বৎসরের কথা এই কারণে বলা হইয়াছে, যেন তাহাদের পক্ষে নামাজ আদায় করা কষ্টসাধ্য না হয় অন্যথায় সাত বৎসরের পূর্বেই অর্থাৎ কিছুটা হুশ-জ্ঞান হওয়ার পরই নামাজের অভ্যাস করানো যাইতে পারে  

উপরোক্ত ধারণা সৃষ্টি হওয়ার পরই আমি মাদ্রাসার হাফেজ সাহেবকে বলিয়া দিলাম, ছেলেদের বয়স সাত বৎসর হউক চাই না হউক, সকলকেই নামাজ পড়াইতে হইবে পরে এইরূপ ব্যবস্থাই করা হইল কিন্তু নামাজ শুরু করার পর দেখা গেল, একদিন সাত বৎসরের কম বয়সী এক বালক জায়নামাজেই প্রস্রাব করিয়া দিয়াছে এই ঘটনার পরই আমার সাত বৎসরের হেকমত বুঝে আসিয়াছে অর্থাৎ সাত বৎসর বয়সের পূর্বে বাচ্চাদের ভাল-মন্দ তমিজ করার যোগ্যতা পয়দা হয় না। 

আসলে শরীয়তের প্রতিটি বিধানই এইরূপ যে, উহার বিরুদ্ধাচরণ করিবার পর যখন উহার ক্ষতির দিকগুলি সামনে আসে, তখনই উহার হেকমত তাৎপর্য বুঝে আসে। এই ঘটনা দ্বারা ইহাও জানা গেল যে, শরীয়তের বিরুদ্ধাচরণ করিলে যেমন ক্ষতির শিকার হইতে হয়, অনুরূপভাবে শরীয়তের হুকুম পালনের ক্ষেত্রে অতিরঞ্জন বাড়াবাড়ি করিলেও উহা ক্ষতির কারণ হয় 

 

6| ‡Q‡j †g‡q‡`i †ivRvi e¨vcv‡i Ae‡njv

অনেকে নিজেরা রোজা রাখে বটে, কিন্তু ছেলেমেয়েরা রোজা রাখার উপযুক্ত হওয়া সত্ত্বেও তাহাদেরকে রোজা রাখায় অভ্যস্ত করার চেষ্টা করে না আর এই বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হইলে জবাবে ছেলেমেয়েরা না বালেগ হওয়ার অজুহাত পেশ করা হয় কিন্তু স্মরণ রাখিরে, বাচ্চারা বালেগ না হইলে তাহাদের উপর রোজা রাখা ওয়াজিব হয় না বটে, কিন্তু উহার অর্থ ইহা নহে যে, অভিভাবকদের পক্ষেও বাচ্চাদেরকে রোজায় অভ্যস্ত করানো ওয়াজিব নহে সুতরাং বালেগ হওয়ার পূর্বেই যেমন নামাজের জন্য তাকীদ করা জরুরী; এমনকি শরীয়ত এই ক্ষেত্রে শাসন করিতেও হুকুম করিয়াছে, অনুরূপভাবে রোজার ব্যাপারেও বালেগ হওয়ার পূর্বেই উহার অভ্যাস গড়িয়া তুলিতে বলা হইয়াছে ব্যবধান শুধু এতটুকু যে, নামাজের ব্যাপারে সাত বৎসরের নিয়ম রাখা হইয়াছে, আর রোজার ব্যাপারে বলা হইয়াছে- যখন রোজার কষ্ট সহ্য করার মত শক্তি-সাহস পয়দা হইবে তখন হইতেই উহার অভ্যাস করাইতে শুরু করিবে অভিভাবকদের উপর ইহা ওয়াজিব উহার কারণ হইল, কোন কাজ ধরিয়াই ষোলআনা পাবন্দির সহিত আদায় করা সম্ভব হয় না বালেগ হওয়ার পরই যদি শরীয়তের যাবতীয় বিধান সম্পূর্ণরূপে পালন করিতে বলা হয়, তবে একজন অনভ্যস্ত ব্যক্তির পক্ষে উহা কষ্টসাধ্য হইবে বটে 

এই কারণেই শরীয়ত পূর্ব হইতেই অল্প অল্প করিয়া আমলের অভ্যাস গড়িয়া তোলার বিধান অনুমোদন করিয়াছে, যেন বালেগ হওয়ার পর পুরাপুরীভাবে আমল করিতে কষ্ট না হয় এই বিধানের উপর আমল করা অভিভাবকদের উপর ওয়াজিব করা হইয়াছে কারণ, অভিভাবকদের উপর উহা ওয়াজিব করা না হইলে এই বিধানের কিছুই গুরুত্ব হইত না 

 

শিশুদের দ্বারা রোজা রাখানো

অনেকেই সখ করিয়া নিতান্ত কম বয়সী বাচ্চাদের দ্বারা রোজা রাখাইয়া থাকে এই ক্ষেত্রে উদ্দেশ্য থাকে- এতটুকুন বাচ্চার দ্বারা রোজা রাখাইতে পারার গর্ব প্রদর্শন এবং এই উপলক্ষে ইফতারীর অনুষ্ঠান প্রথমতঃ এই কাজের মূল বুনিয়াদই ত্রুটিপূর্ণ দ্বিতীয়তঃ এই সকল অনুষ্ঠানে এমন কিছু ক্রিয়াকর্ম প্রদর্শন করা হয়, যাহা দ্বারা কেবল গোনাহই বৃদ্ধি পায় 

 

একটি মর্মন্তুদ ঘটনা-

কম বয়সী শিশুদের দ্বারা রোজা রাখানো প্রসঙ্গে একটি বেদনা দায়ক ঘটনা আমার জানা আছে এক ব্যক্তি সখ করিয়া তাহার শিশুসন্তানকে রোজা রাখাইল এবং এই উপলক্ষে সুখ্যাতি অর্জনের উদ্দেশ্যে ইফতারীর আয়োজন করিয়া সকলকে দাওয়াত দিল

গ্রীষ্মের প্রচণ্ড গরমের দীর্ঘ দিবস (এই মওসুমে একটি শিশুর পক্ষে রোজা রাখা সহজ ব্যাপার নহে। কিন্তু তবুও সে মুরব্বীদের কথা অনুযায়ী রোজা সুসম্পন্ন করিতে লাগিল) আছরের নামাজ পর্যন্ত সে ক্ষুৎপিপাসার কঠিন যাতনা সহ্য করিয়াছে। কিন্তু উহার পর সে আর কিছুতেই নিজেকে রক্ষা করিতে পারিতেছিল না কিন্তু এদিকে তাহার পিতা নিজের শিশু-সন্তানের রোজা খোলা উপলক্ষে ইফতারীর বিপুল আয়োজনে মহাব্যস্ত (কিন্তু যাহাকে উপলক্ষ করিয়া এত আয়োজন এত উদ্যোগ, সে কিন্তু প্রতি মুহুর্তে এক কঠিন পরিণতির দিকে আগাইতে লাগিল )

 পিপাসায় অতিষ্ঠ হইয়া একে একে সকলের নিকট সে এক ফোটা পানি চাহিল, কিন্তু কেহই তাহাকে পানি দিতে রাজী হইল না কারণ, শিশুটির রোজা উপলক্ষেই তো এই বিপুল আয়োজন সুতরাং সে রোজা ভঙ্গ করিয়া ফেলিলে তো তাহাদের সকল আয়োজন-উদ্যোগ এবং বিপুল অর্থ ব্যয়ে সংগৃহীত সকল ছামান বরবাদ হইবে কিন্তু প্রচণ্ড পিপাসায় শিশুটি ক্রমে অস্থির হইয়া উঠিল (শেষের দিকে সে যেন আর কিছুতেই নিজেকে সামলাইতে পারিল না গ্রীষ্মের উত্তপ্ত সূর্যটা তখন পশ্চিম আকাশে ঢলিয়া পড়িয়া যাই যাই করিতেছে পৃথিবী জুড়িয়া নামিতেছে অন্ধকার। শিশুটিও যেন অনুভব করিল- তাহার জীবন-প্রদীপটিও ক্রমে নিভিয়া যাইতেছে কিন্তু তবুও তাহার বাচিয়া থাকিতে বড় সাধ! এক ফোটা পানির অভাবে সে নিশ্চিত মৃত্যুর দিকে আগাইতেছে, অথচ) তাহারই সম্মুখে, অদূরে বরফের ঠাণ্ডা পানি সুপেয় শরবতের সমারোহ উহা দেখিয়া যেন তাহার পিপাসার আগুন আরো দাউ দাউ করিয়া জ্বলিয়া উঠিল (অতঃপর সে নিজের দেহ-মনের সকল শক্তি একত্রিত করিয়া কোন ক্রমে সেই) ঠাণ্ডা পানির দিকে আগাইয়া গেল (কিন্তু ততক্ষণে তাহার পানি পান করিবার শক্তিও নিঃশেষ হইয়া গিয়াছিল) 

শীতল পানির মটকাটির নিকট যাওয়ার পর কোনক্রমে উহাকে জড়াইয়া ধরার সঙ্গে সঙ্গে চির দিনের জন্য তাহার দেহটিও শীতল হইয়া গেল- সে মৃত্যুবরণ করিল শিশুর প্রাণহীন দেহটি যেন (ব্যঙ্গ করিয়া নির্বাক কণ্ঠে সহসা) বলিয়া উঠিল, ধন্য হউক তোমাদের অনুষ্ঠান- আয়োজন, তোমাদের সাজ-সরঞ্জামে আমার জীবন উৎসর্গ করিয়া দিলাম। 

এক্ষণে ভাবিয়া দেখুন, এই বেদনা দায়ক ঘটনা এবং এই বাড়াবাড়ি নির্মম হত্যাকাণ্ডের জন্য কি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা দায়ী হইবে না

 

7| wemwgjøvn ïiæ Kiv Ges g³‡e cvVv‡bv

আজকাল শিশুকে বিসমিল্লাহ শুরু করানো বা মক্তবে পাঠানো উপলক্ষে বিবিধ রুসম-রেওয়াজ পালন করা হয় যেমন শিশুর বয়স চার বৎসর চার মাস চার দিন পূর্ণ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তাহাকে ছবক দেওয়া হয় এই নিয়মকে এমন কঠোরভাবে পালন করা হয় যে, কোন অবস্থাতেই যেন উহার ব্যাতিক্রম হইতে না পারে এই বিষয়ে যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করা হয় এই নিয়ম সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং শরীয়তে উহার কোন উল্লেখ নাই অথচ জাহেল লোকেরা উহাকে শরীয়তের বিধান মনে করিয়াই পালন করিতেছে উহার ফলে তাহাদের আকীদা নষ্ট হইতেছে এবং শরীয়ত বহির্ভূত একটি বিষয়কে শরীয়তের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করার অপরাধে লিপ্ত হইতেছে 

শিশুকে মক্তবে পাঠানো বা ছবক শুরু করার দিন নেহায়েত পাবন্দির সহিত মিষ্টির আয়োজন করা হয় নিজের সঙ্গতি না থাকিলেও যে কোন উপায়েই হউক উহার আয়োজন করিতেই হইবে, অন্যথায় দুর্নামের ভাগী হইতে হইবে সুতরাং এই ক্ষেত্রে যাহা করা হয় উহা নিছক সুখ্যাতি মানুষের বাহবাহ্ পাওয়ার নিয়তেই করা হয়- যাহা পরিষ্কার গোনাহ হওয়ার ব্যাপারে কিছুমাত্র সন্দেহ নাই 

এই ক্ষেত্রে নিয়ম হইল- শিশু যখন কথা বলিতে শুরু করে তখন তাহাকে কালেমা শিক্ষা দিবে এবং যথাসময় কোন বুজুর্গ আলেমের দ্বারা দোয়া করাইয়া বিসমিল্লাহ শুরু করাইবে এবং মক্তবে পাঠাইতে থাকিবে যদি মনে চায় তবে এই নেয়মতের শুকরিয়া হিসাবে কোন প্রকার রুসম-রেওয়াজের পাবন্দি না করিয়া নিজের তওফীক অনুযায়ী গোপনে কিছু দান-খয়রাত করিয়া দিবে কিন্তু মানুষকে দেখাইয়া কিছুই করিবে না 

অনুরূপভাবে কোরআন শরীফ খতম করা উপলক্ষেও উপরোক্ত নিয়মেই কিছু রুসম-রেওয়াজের পাবন্দি করা হয় এই ক্ষেত্রেও সুনাম-সুখ্যাতি অর্জনের উদ্দেশ্যে লোকজন জড়ো করিয়া খানাপিনার আয়োজন হাদিয়া-তোহফার ব্যবস্থা করা হয় 

  

8| wkïi wkÿvi eqm

রাসূলে আকরাম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাত বৎসর বয়সে শিশুদের নামাজ শুরু করাইবার কথা উল্লেখ করিয়াছেন। উহার উপর ভিত্তি করিয়াই আমি মনে করি, সাত বৎসর বয়সই শিশুর শিক্ষা শুরু করার উপযুক্ত সময়। তবে মৌখিকভাবে দোয়া-কালেমা ইত্যাদি সাত বৎসরের আগেও শুরু করা যাইতে পারে 

কিন্তু আজকাল লোকেরা নিজেদের পক্ষ হইতেই শিশুকে প্রথম পাঠ দানের সময় হিসাবে চার বৎসর চারমাস চার দিন বয়সকেসুনির্দিষ্ট সময় হিসাবে নির্ধারণ করিয়া লইয়াছে। ইহা শরীয়ত সম্মত নহে এবং সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন

 

শিক্ষার পদ্ধতি

শিশুর বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গেই তাহাকে নামাজের সুরা এবং মৌখিকভাবে দোয়া-কালাম শিক্ষা দিয়া নামাজ পড়াইতে শুরু করিবে বালিকাদেরকে পর্দার ভিতরে রাখিয়াই এই সকল শিক্ষা দিবে। যখন পড়ার বয়স হইবে তখন কোন ভাল মক্তব দ্বীনদার-পরহেজগার এবং স্নেহপরায়ন উস্তাদের নিকট পাঠাইবে মেয়েদেরকে বালিকা মক্তবে পাঠাইবে কিন্তু বর্তমানে যেই বালিকা বিদ্যালয়ের প্রচলন শুরু হইয়াছে ঐগুলির পরিবেশ ভাল নহে, সুতরাং বাচ্চাদেরকে সকল প্রতিষ্ঠানে পাঠাইবে না। 

সর্বপ্রথম বাচ্চাদেরকে কোরআন শরীফ শিক্ষা দিবে যদি মেধাশক্তি ভাল থাকে তবে কোরআন শরীফ হেফজ করানো উত্তম। অন্যথায় শুধু নাজেরা পড়াইবে। তবে সকল অবস্থাতেই এমন উস্তাদের নিকট পাঠাইবে যিনি বিশুদ্ধরূপে কোরআন শিক্ষা দিতে পারেন। 

যদি হেফজ পড়ানো হয় তবে হেফজ শেষ হওয়ার পর এবং নাজেরা পড়াইলে কোরআন শরীফ অর্ধেক হওয়ার পর প্রতি দিন দ্বীনী কিতাবের একটি করিয়া ছবক শুরু করাইয়া দিবে। উহার পাশাপাশি কিছু অংক, হাতের লেখা এবং পত্র লিখন পদ্ধতিও শিক্ষা দিবে দ্বীনদারীর উপর আমল করার ক্ষেত্রেও এই সকল বিষয় দ্বারা সাহায্য পাওয়া যায়  

আল্লাহ পাক যদি সুযোগ দেন তবে আরবী শিক্ষার মাধ্যমে আলেম বানাইয়া দিবে। কারণ এই জমানায় উহার প্রয়োজন সমধিক। অন্যথায় জীবিকা নির্বাহের উদ্দেশ্যে কোন হালাল পবিত্র পেশা শিখাইয়া দিবে, যেন জীবনযাত্রার ক্ষেত্রে পেরেশান হইতে না হয়। 

বয়স্ক ছেলেদেরকে সঙ্গে করিয়া আল্লাহওয়ালাদের মজলিশে লইয়া যাইবে তাহাদের ছোহবত নেক নজরের বরকতে দ্বীনের মধ্যে ছেলেদের মজবুতী আসিবে।

 

9| wkï‡`i wkÿvi e¨vcv‡i Riæix †n`v‡qZ

* পড়া-শোনার ব্যাপারে বাচ্চাদের অতিরিক্ত চাপ দিবে না। প্রাথমিক অবস্থায় তাহাদেরকে এক ঘন্টার বেশী আটকাইয়া রাখিবে না। অতঃপর ক্রমে তাহাদের শক্তি অনুযায়ী প্রয়োজন মত দুই ঘন্টা তিন ঘন্টা পর্যন্ত সময় বৃদ্ধি করিয়া লইবে। সারা দিনই যেন লেখা পড়ার মধ্যে লাগাইয়া রাখা না হয়। উহার ফলে শিশুর স্বাস্থ্য, স্মরনশক্তি এবং পড়াশোনার আগ্রহে ভাটা পড়িয়া হিতে বিপরীত ফলাফল দেখা দিতে পারে। 

* নিয়মিত ছুটি ছাড়া কঠিন প্রয়োজন না হইলে ঘন ঘন ছুটি দিবে না।

* প্রতিটি বিষয়ই এমন ব্যক্তির মাধ্যমে শিক্ষা দিবে, যিনি বিষয়ে জ্ঞান রাখেন। অনেকে সস্তায় শিক্ষক রাখিয়া তাহাদের মাধ্যমে শিশুদের শিক্ষার ব্যবস্থা করে উহার ফলে অনেক সময় দেখা যায় শিশুরা শুরুতেই অশুদ্ধ পঠন শিখিয়া ফেলে এবং পরে উহা আর সংশোধন করা যায় না। 

* কঠিন পাঠসমূহ সর্বদা সকালে পড়িতে দিবে এবং সহজ পাঠগুলি বিকালে পড়াইবে। কারণ শেষের দিকে যখন ক্লান্তি আসিয়া পড়ে তখন কঠিন বিষয় পড়িতে দিলে উহা তাহাদের জন্য কষ্টকর হইবে  

* বাচ্চাদেরকে বিশেষতঃ মেয়েদেরকে পাক-প্রণালী সেলাই কর্ম শিক্ষা দিবে।

* মুসলমান শিশুদেরকে সর্বপ্রথম কোরআনের শিক্ষা দেওয়াই বাঞ্ছনীয়। কারণ, অভিজ্ঞতার আলোকে দেখা গিয়াছে, কচি বয়সে শিশুরা বিশেষ কোন বিদ্যাই শিক্ষা করিতে পারে না। সুতরাং এই সুযোগেই তাহাদিগকে কোরআন শরীফ শিখাইয়া দেওয়া যাইতে পারে। অন্যথায় শিশুদের সময়টি বেকারই কাটিয়া যায়  

* শিশুদেরকে কেবল ধর্মীয় শিক্ষাই দিতে হইবে, চাই উহা উর্দুতেই (বাংলাদেশীদের জন্য বাংলাতে) কিংবা আরবীতে হউক শুরুতেই ইংরেজী শিক্ষা দিবে না। কারণ, মানুষ প্রথমে যাহা শিক্ষা করে উহাই তাহার অন্তরে দাগ কাটিয়া যায়। এই কারণেই শিশুর চক্ষু খুলিবার পরই তাহাদেরকে ইংরেজী শিক্ষা দেওয়া সমীচীন বলিয়া মনে হয় না

সুতরাং প্রথমেই কোরআন শরীফ শিক্ষা দিবে যদি পূর্ণ কোরআন শরীফ শিক্ষা দেওয়া সম্ভব না হয় তবে অন্ততঃ দশ পারাই শিখাইয়া দিবে আর প্রতি দিন যেন নিয়মিত তেলাওয়াত করা হয় উহার প্রতি নজর রাখিবে উহার পাশাপাশি কোন আলেমের নিকট কিছু মাসায়েলের কিতাব শিখিতে দিবে আর দ্বীনের খেলাফ যদি কোন আচরণ দেখা যায় তবে সঙ্গে সঙ্গে তাম্বিহ করিবে  

 

১০।মেয়েদেরকে দ্বীন পরকালের শিক্ষা দেওয়ার আবশ্যকতা

সাধারণতঃ মেয়েদের শিক্ষার বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয় না। শৈশব হইতে যে যেই স্বভাব-প্রকৃতিতে গড়িতে থাকে তাহাকে সেইভাবেই ছাড়িয়া দেওয়া হয় কিন্তু ভগ্নিগণ! তোমরা তোমাদের মেয়েদেরকে কি কারণে রান্নাবান্না সেলাইকর্ম শিক্ষা দাও? সেই সকল বিষয়েও তাহাদেরকে নিজেদের ইচ্ছার উপর ছাড়িয়া দিলেই তো পার অতঃপর দেখিতে পাইবে, বাস্তব জীবনে তাহারা কত কষ্টকর অবস্থার সম্মুখীন হয়। অথচ এই পার্থিব জীবন ক্ষণস্থায়ী এখানে কেহই চির দিন বসবাস করিবে না। মনে কর, কেহ না হয় একশত বৎসরই হায়াত পাইল এই একশত বৎসরের জীবনে সে যদি রান্নাবান্না, সেলাই বা অন্য কোন হাতের কাজ নাও শিখে, তথাপি কোন প্রকার কষ্টে-সৃষ্টে তাহার এই শত বৎসরের জীবন কাটিয়াই যাইবে কিন্তু আখেরাতের চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। আখেরাতের ছামান ব্যতীত তথাকার জীবন কাটিবে না 

পরকালের জীবন হইল স্থায়ী দুনিয়ার অস্থায়ী জীবনের জন্য যদি এতকিছু শিক্ষা করা জরুরী মনে করা হয়, তবে পরকালের অনন্ত-অসীম জীবনের জন্য তো হাজারো কিসিমের কাজ-কর্ম শিক্ষা করা আবশ্যক। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হইল, দুনিয়ার অস্থায়ী জীবনের জন্য যেই পরিমাণ শিক্ষা-দিক্ষা কাজ-কর্ম শিখানো হয়, পরকালের জন্য সেই তুলনায় কিছুই করা হয় না মোটকথা, মেয়েদেরকে পরকালের ব্যাপারে বেলাগাম ছাড়িয়া দেওয়া হয় 

মেয়েদেরকে দ্বীন শিক্ষা দেওয়ার সহজ উপায় হইল- তাহাদিগকে সকল কিতাব পড়াইবে, যেইগুলিতে বিশেষভাবে মেয়েদের জরুরী মাসআলাসমূহ লেখা হইয়াছে মেয়েদের হাতে কিতাব তুলিয়া দিয়া নিশ্চিন্ত থাকিবে না সাধারণতঃ তাহাদের ফাহাম-সমঝ কম হইয়া থাকে, তাহাদের পক্ষে সঠিক অর্থ উদ্ধারে ব্যর্থ হইয়া বিভ্রাট ঘটানো অসম্ভব নহে। 

সুতরাং কোন পুরুষ ঘরের মেয়েদেরকে একত্রিত করিয়া কিতাব পড়াইবে যদি তাহারা পড়িতে না পারে, তবে নিজে কিতাব পড়িয়া বিষয়বস্তুগুলি ভালভাবে বুঝাইয়া দিবে আর শুধু পড়াইলেই চলিবে না, বরং শিক্ষা শেষে তদনুযায়ী আমল করা হইতেছে কিনা এই বিষয়েও নেগরানী করিবে 

যদি কোন শিক্ষিত মহিলা পাওয়া যায় তবে তাহার মাধ্যমেই মেয়েদেরকে কিতাব পড়ানো বা শোনানোর ব্যবস্থা করিবে মোটকথা, যথাযথ উপায়ে মেয়েদেরকে শিক্ষার ব্যবস্থা করিবে এবং কোন অবস্থাতেই এই বিষয়ে অবহেলা করিবে না

 

11| wkï‡`i GQjvn I ZiweqZ

* বাচ্চাদেরকে শুরু হইতেই নিয়মিত মসজিদে গিয়া জামায়াতের সহিত নামাজ পড়িতে অভ্যাস করাইবে 

* শৈশব হইতেই যেন মুসলমানদের সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপনে কোন ত্রুটি না করে এই বিষয়ে লক্ষ্য রাখিবে গরীব-মিসকীনদের সঙ্গে উঠা-বসা করিতে উৎসাহিত করিবে গরীবদের সঙ্গে চলা ফিরা করিলে তাহারা তোমাদের কদর সম্মান করিবে পক্ষান্তরে, আমীর বিত্তবানদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখিলে উহাতে তোমাদের সম্মান বৃদ্ধি পাইবে না, তাহারা কখনো তোমাদেরকে ইজ্জতের নজরে দেখিবে না। সুতরাং শৈশব হইতেই বাচ্চাদেরকে সাধারণ মানুষের সঙ্গে চলাফিরা করার উৎসাহ দিবে শৈশবে এই সকল বিষয় অভ্যাস করানো যতটা সহজ বড় হওয়ার পর আর এতটা সহজ থাকে না 

* বাচ্চারা যেন কখনো সুন্নতের খেলাফ কোন পোশাক এবং বিজাতীয়দের ফ্যাশন অনুকরণ না করে এই বিষয়ে লক্ষ্য রাখিবে। 

* অন্য কোন কাজের ক্ষতি না হয় এমন একটি নির্দিষ্ট সময় বাহির করিয়া প্রতি দিন বাচ্চাদেরকে কোন দ্বীনী কিতাব পাঠ করিতে দিবে কিংবা নিজে পাঠ করিয়া শোনাইবে। শয়নের পূর্বে অল্প সময়ের জন্য এই আমলটি করা যাইতে পারে  

* বাচ্চাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যখন বন্ধ হয় তখন দুই চারি দিনের জন্য তাহাদেরকে কোন আল্লাহওয়ালার ছোহবতে (কিংবা জামায়াতে) লইয়া যাইবে ছুটির পূর্ণ দিনগুলি যদি এই কাজে ব্যয় করা সম্ভব না হয় তবে অর্ধেক ছুটি খেলাধুলার জন্য এবং অর্ধেক ছুটি এই কাজে ব্যয় করিবে। 

মোটকথা, পাবন্দির সহিত নিয়মিত দ্বীনের আহকাম মাসায়েলের কিতাব পঠন এবং মাঝে-মধ্যে আল্লাহওয়ালাদের ছোহবত এখতিয়ারের ছেলছেলা জারী রাখিবে শৈশব হইতেই যদি এই অভ্যাস করানো হয় তবে আসানীর সহিত উহাতে পাবন্দি আসিবে  

* বাচ্চারা যদি কখনো মানুষের গীবত-শেকায়েত করে তবে স্বস্নেহে বুঝাইয়া বলিবে, মানুষের নিন্দা করা ভাল নয়, উহাতে পাপ হয় অনুরূপভাবে অহংকার-তাকাব্দুরী মিথ্যা বলা হইতেও তাহাদেরকে বাধা দিবে স্কুলে যদি জামায়াতের পাবন্দি না থাকে তবে বন্ধের সময় অবশ্যই তাহাদেরকে জামায়াতের পাবন্দি করাইবে। 

* বড় হওয়ার পর যদি লাগাতার দুই এক বৎসর কোন আল্লাহওয়ালার ছোহবতে থাকার সুযোগ হয় তবে খুবই ভাল উহাতে তাহাদের আমল-আখলাকের অনেক ফায়দা হইবে পূর্ণ বৎসরের সুযোগ না হইলে অন্ততঃ ছয় মাস, যদি উহাও না হয় তবে চল্লিশ দিন হইলেও এই কাজে ব্যয় করিবে হাদীসে পাকে এই সংখ্যার বহু ফজিলত আসিয়াছে

* বাচ্চাদের মধ্যে যেন কখনো কোন বস্তুর লোভ পয়দা না হয় এই বিষয়ে লক্ষ্য রাখিবে উহার সহজ উপায় হইল- নিজের তওফীক অনুযায়ী তাহাদের পছন্দের বস্তুগুলি নিজেই আনিয়া খাইতে দিবে আর বাচ্চারা জিদ করিলে কখনো উহা পূরণ করিবে না, যেন জিদ করার অভ্যাস ছুটিয়া যায় এবং ভবিষ্যতে আর কখনো উহা না করে 

* শিশুদেরকে এমন অভ্যাস করাইবে যেন কোন খাবার বস্তু একা না খায় বরং যাহা খাইবে সকলকে লইয়া মিলিয়া-মিশিয়া খাইবে এই কারণেই তাহাদেরকে যখন কোন বস্তু দিবে (টাকা বা দ্রব্য) তখন উহার মালিক বানাইয়া দিবে না কারণ, প্রাপ্ত বয়স্ক বাচ্চাদেরকে কোন কিছুর মালিক বানাইয়া দিলে অতঃপর আর উহা কাহাকেও দান করা বা হাদিয়া দেওয়া জায়েজ থাকে না। এই কারণেই তাহাদেরকে যাহা কিছুই দিবে কেবল ব্যবহার করা বা খাওয়ার আনুমতি দিবে, মালিক বানাইয়া দিবে না 

  

12| wkï‡`i Ziweq‡Zi KwZcq wbqg

* শিশু কিছুটা জ্ঞান-বুদ্ধি প্রাপ্ত হওয়ার পর সর্বপ্রথম তাহাকে কালেমায়ে তাওহীদ শিক্ষা দিবে অতঃপর ধীরে ধীরে তাহাকে জরুরী আদব সমূহ শিক্ষা দিবে সকলকে ছালাম করা, মিথ্যা না বলা এবং পর্দা হায়া-শরম ইত্যাদির তালীম দিবে 

* ছেলেমেয়েদেরকে এক সঙ্গে খেলা করিতে দিবে না, উহাতে তাহারা ভবিষ্যতের বিবিধ অনিষ্ট হইতে হেফাজতে থাকিবে শিশু যদি নিতান্ত অবুঝ হয় তবুও তাহাদের সামনে কোন অসঙ্গত আচরণ করিবে না কেননা, তাহারা কিছু না বুঝিলেও আচরণের প্রতিচ্ছবি তাহাদের মানসপটে অঙ্কিত হইয়া থাকে অতঃপর ভবিষ্যতে উহার আছর তাহাদের চরিত্রে প্রকাশ পায়  

* বেশী হাসি-মজাক করিতে দিবে না, উহাতে ছেলেমেয়েদের চরিত্রে উশৃংখলতা পয়দা হয়

* ছেলেমেয়েরা বড় হওয়ার পর যেন পরস্পর দোস্তী করিতে না পারে তৎপ্রতি নজর রাখিবে উহার মাধ্যমেই বিবিধ অনিষ্টের সূত্রপাত হয় যদি তাহারা পরস্পর নির্দোষ খেলাধুলায় লিপ্ত হয় তবে নিকটে থাকিয়া নেগরানী করিবে যেন উহার সূত্র ধরিয়া পরে ঘনিষ্ট হওয়ার সুযোগ না পায়

* ছেলেমেয়েরা কোন কাজই যেন গোপনে না করে উহার অভ্যাস করাইবে কারণ, যেই সকল কর্ম মন্দ উহাই গোপনে করা হয় সুতরাং এই অভ্যাস পয়দা হইতে দিবে না। 

* ছেলেমেয়েদেরকে এমন অভ্যাস করাইবে যেন কখনো অন্যায়ের পক্ষাবলম্বন না করে নিজের ত্রুটি ধরা পড়িবার পর প্রতিপক্ষ ছোট হইলেও অকপটে নিজের অপরাধ স্বীকার করিয়া ক্ষমা করাইয়া লইবে এই অভ্যাস নেহায়েত জরুরী ইহাতেই দ্বীন-দুনিয়ার রাহাত শান্তি যদি এইরূপ করা না হয় তবে মনের ভিতর অহংকার পয়দা হইয়া স্থায়ী অপমান জিল্লতির শিকার হইতে হয় 

 

13| mšÍvb cÖwZcvj‡bi wbqg

বেহেশতী জেওরের চতুর্থ খণ্ডেসন্তান প্রতিপালনের নিয়ম” শিরোনামে এতদ্‌সংক্রান্ত কিছু জরুরী বিষয় আলোচনা করা হইয়াছে এখানে আলোচনাটি হুবহু তুলিয়া ধরা হইল এই শিরোনামের কিছু কিছু বিষয় হয়ত পিছনেও আলোচিত হইয়াছে, তবে যাহা জরুরী বিষয়, উহা বার বার আলোচনা করাতে কোন দোষ নাই 

ছোট বেলায় যেই আচার-আচরণ অভ্যাস করা হয়, পরবর্তী জীবনে উহাই স্থায়ী স্বভাবে পরিণত হয় সুতরাং শৈশব হইতে যৌবন পর্যন্ত যেই স্বভাবগুলি শিক্ষা দেওয়া আবশ্যক, উহার কিছু কিছু নিম্নে প্রদত্ত হইল 

() যদি স্বীয় মাতা ব্যতীত অপর কাহারো দুধ পান করাইতে হয়, তবে দ্বীনদার-পরহেজগার মেয়েলোকের দুধ পান করাইবে কেননা, মানব চরিত্রে গভীরভাবে দুধের প্রভাব প্রতিফলিত হয় 

() মায়েরা সাধারণতঃ শিশুদেরকে পুলিশ বা অন্য কোন ভয়াল বস্তুর ভয় দেখাইয়া থাকে। ইহা ঠিক নহে। এইরূপ করিলে বাচ্চাদের দিল কমজোর হইয়া মানসিকভাবে দুর্বল হইয়া পড়ে 

() ছেলেমেয়েদের দুধপান খাওয়ার সময় নির্দিষ্ট করিয়া লইলে উহাতে তাহাদের স্বাস্থ্য ভাল থাকে 

() বাচ্চাদেরকে সর্বদা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখিবে, উহাতেও তাহাদের দেহ-মন সুস্থ থাকিবে। 

() ছেলেমেয়েদেরকে অতিরিক্ত সাজাইয়া-গুজাইয়া রাখিবে না

() ছেলেদের মাথার চুল বেশী লম্বা হইতে দিবে না। 

() মেয়েরা পর্দা করিবার পূর্বে তাহাদেরকে অলংকার পরিতে দিবে না কারণ, উহার ফলে একে তো জান-মালের উপর আশংকা দেখা দেয়, তাছাড়া অল্প বয়সেই জেওরের প্রতি আকর্ষণ হওয়া ভাল নহে 

() ছেলেমেয়েদের হাতে গরীবদেরকে দান করার এবং ভাই-বোনসহ অন্য ছেলেমেয়েদের মধ্যে খাবার জিনিস বিতরণ করার অভ্যাস করাইবে উহাতে স্বভাবে দানশীলতা আসিয়া লোভের অভ্যাস হ্রাস পাইবে। অবশ্য তাহারা যেই সকল বস্তুর মালিক উহা অন্য কাহাকেও দিতে বলা জায়েজ নহে তোমাদের নিজস্ব বস্তু তাহাদের দ্বারা দান করাইবে। 

() যাহারা বেশী খায় ছেলেমেয়েদের সামনে তাহাদের দুর্নাম করিবে অবশ্য বর্ণনার সময় কাহারো নাম উচ্চারণ করিবে না বরং এইরূপ বলিবে যাহারা বেশী খায় লোকে তাহাদেরকে ঘৃণা করে (ইহাতে ছেলেমেয়েদের কম খাওয়ার অভ্যাস হইবে) 

(১০) ছেলেদেরকে সাদা কাপড়ের অভ্যাস করাইবে এবং রঙ্গীন কাপড়ের নিন্দা করিয়া বলিবে, ইহা মেয়েদের পোশাক; তুমি তো পুরুষ, এইসব তোমার জন্য সাজে না 

(১১) মেয়েদেরকে অতিরিক্ত দামী পোশাক এবং বিলাসিতার অভ্যাস করাইবে না

(১২) বাচ্চাদের সকল জিদ পূরণ করিবে না উহাতে তাহাদের স্বভাব খারাপ হয় 

(১৩) বাচ্চাদেরকে চিৎকার করিয়া কথা বলিতে দিবে না বিশেষতঃ মেয়েদেরকে তো খুবই তাকীদ করিবে অন্যথায় বড় হইয়াও এই বদ-অভ্যাস থাকিয়া যাইবে 

(১৪) যেই সকল ছেলেমেয়েদের স্বভাব খারাপ এবং লেখা-পড়ায় অমনোযোগী, কিংবা যাহারা কেবল ভাল ভাল খাবার খাইয়া দামী পোশাকে ঘুরিয়া বেড়াইতে অভ্যস্ত; এইরূপ ছেলেমেয়েদের সঙ্গে কখনো বাচ্চাদেরকে মিশিতে দিবে না 

(১৫) ক্রোধ, মিথ্যা, হিংসা, চুরি, পরনিন্দা, অকারণে নিজের কথার উপর জিদ করা অর্থহীন কথা বলা, অকারণে হাসা বা অতিরিক্ত হাসা, মানুষকে ধোকা দেওয়া, ভাল-মন্দ বিবেচনা না করা ইত্যাদি অপরাধসমূহের প্রতি যেন ছেলেমেয়েদের আন্তরিক ঘৃণা জন্মে এইরূপ উপদেশ দিতে থাকিবে কোন ত্রুটি দেখিবার সঙ্গে সঙ্গে সতর্ক করিবে এবং ভালভাবে বুঝাইয়া উপদেশ দিবে  

(১৬) ছেলেমেয়েরা অসাবধানতা বশতঃ যদি কোন জিনিস ভাঙ্গিয়া ফেলে বা নষ্ট করিয়া ফেলে, কিংবা অপর কাহাকেও যদি মারে বা গালি দেয়, তবে সঙ্গে সঙ্গে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করিবে যেন ভবিষ্যতে আর এইরূপ না করে; এই সকল ক্ষেত্রে প্রশ্রয় দিলে তাহাদের স্বভাব চিরতরে খারাপ হইয়া যাইবে 

(১৭) ছেলেমেয়েদেরকে অসময়ে ঘুমাইতে দিবে না, (সময় মত ঘুমাইতে দিবে এবং সময় মত উঠাইবে) 

(১৮) বাচ্চাদেরকে ঘুম হইতে ভোরে যথাসময় উঠার অভ্যাস করাইবে

(১৯) সাত বৎসর বয়স হইলে নামাজ পড়ার অভ্যাস করাইবে।। 

(২০) মক্তবে যাওয়ার বয়স হইলে সর্বপ্রথম কোরআন শরীফ পড়াইবে (নিতান্ত কম বয়সে অতিরিক্ত পড়ার চাপ দিবে না উহার ফলে মেধা স্বাস্থ্য উভয়ই নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে) 

(২১) মক্তবে যাইতে না চাহিলে কখনো প্রশ্রয় বা ঢিল দিবে না। যেই প্রকারেই হউক নিয়মিত মক্তবে যাওয়ার অভ্যাস করাইবে 

(২২) শৈশবের শিক্ষা যেন দ্বীনদার পরহেজগার উস্তাদের নিকট হয় এই বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি রাখিবে। 

(২৩) ছেলেমেয়েদেরকে মাঝে-মধ্যে আউলিয়া কেরামের ঘটনা শোনাইবে  

(২৪) ছেলেমেয়েদেরকে নভেল-নাটক বা প্রেমিক-প্রেমিকার গল্প এবং শরীয়ত বিরুদ্ধ কিচ্ছা-কাহিনী পড়িতে দিবে না। 

(২৫) বাচ্চাদেরকে এইরূপ বিষয় পড়িতে দিবে, যাহাতে ধর্মজ্ঞান নৈতিক উপদেশ লাভ হয় এবং দুনিয়ার আবশ্যকীয় বিষয়াদিও জানা যায় 

(২৬) পড়া শেষে মক্তব হইতে ঘরে ফিরিবার পর তাহাকে কিছুক্ষণ খেলিতে দিবে ইহাতে তাহার মনের এক ঘেয়েমী ক্লান্তি দূর হইবে এমন খেলা খেলিতে দিবে যেন উহাতে কোন গোনাহ মিথ্যা বলার অবকাশ না হয় 

(২৭) কোন প্রকার বাজনা, বাঁশী বা আতশবাজী কিনিবার জন্য ছেলেমেয়েদেরকে পয়সা দিরে না 

(২৮) ছেলেমেয়েদেরকে খেল-তামাশা (যেমন- সিনেমা, যাত্রা ইত্যাদি) দেখিতে দিবে না 

(২৯) ছেলেমেয়েদেরকে এমন কোন হাতের কাজ অবশ্যই শিক্ষা দিবে, যাহা দ্বারা প্রয়োজনে হালাল রুজী উপার্জন করিয়া যেন নিজের এবং পরিবারবর্গের ভরণ-পোষণ করিতে পারে। 

(৩০) মেয়েদেরকে এই পরিমাণ লেখা শিখাইবে, যাহা দ্বারা আবশ্যকীয় হিসাব এবং চিঠি-পত্র লিখিতে পারে। উহার অতিরিক্ত শিখাইবার প্রয়োজন নাই 

(৩১) ছেলেমেয়েদেরকে যাবতীয় কাজ-কর্ম নিজ হাতে করার অভ্যাস করাইবে যেন অকর্মা বা অলস হইতে না পারে রাতে শয়নকালে নিজ হাতে বিছানা করিবে এবং সকালে উঠিয়া নিজ হাতে উহা গুটাইয়া রাখিবে নিজের কাপড় নিজেই হেফাজত করিবে কাপড়ের সেলাই খুলিয়া গেলে বা ছিড়িয়া গেলে নিজ হাতেই সেলাই করিয়া লইবে। ধোপানীর নিকট কাপড় নিজেই গুণিয়া দিয়া লিখিয়া রাখিবে এবং ফেরৎ লওয়ার সময় গুণিয়া লইবে। 

(৩২) মেয়েদের জেওর অলংকার ঘুমাইবার পূর্বে এবং ঘুম হইতে উঠিয়া যেন ভালভাবে দেখিয়া লয় যে, ঠিক আছে কি-না, ইহার অভ্যাস করাইবে। 

(৩৩) রান্না করা, সেলাই করা, চরকা ঘুরানো, ফুল-বুটা করা, কাপড় রং করা ইত্যাদি যেই সকল কাজ বাড়ীতে হয়, মেয়েদেরকে সেই সকল কাজ দেখিয়া দেখিয়া শিখিতে বলিবে

(৩৪) ছেলেমেয়েরা যখন কোন ভাল কাজ করে, তখন তাহাদেরকে আদর করিয়া খুব সাবাস দিবে, বরং কিছু পুরস্কার দিলে আরো ভাল হয় কারণ, ইহাতে ভাল কাজে তাহাদের আগ্রহ বৃদ্ধি পাইবে যখন কোন মন্দ কাজ করে, তখন নির্জনে নিয়া বুঝাইবে যে, এমন কাজ করিলে সকলে তোমার নিন্দা করিবে এবং কেহই তোমাকে ভালবাসিবে না। ভাল ছেলেমেয়েরা এমন কাজ করে না। লোকে বলিবে ছোট লোকের সন্তান গোনাহের কাজ করিলে দোজখের আগুনের ভয় দেখাইবে এই সকল কথা নির্জনেই বুঝাইবে, যেন শরম ভাঙ্গিয়া একেবারেই বে-শরম হইয়া না যায় উহার পরও যদি এইরূপ করে তবে কিছু শাস্তির ব্যবস্থা করিবে।। 

(৩৫) ছেলেমেয়েদের অন্তরে পিতার আজমত ভয় পয়দা করা মায়ের কর্তব্য। 

(৩৬) ছেলেমেয়েদের খাওয়া-লওয়া বা খেলা-ধুলা কোন কাজই গোপনে করিতে দিবে না কারণ, তাহারা যেই কাজ গোপনে করে, সেই কাজ তাহাদের নিকট মন্দ বলিয়াই গোপনে করে সুতরাং বাস্তবিকই যদি সেই কাজ মন্দ হয় তবে তো উহা করিতেই দিবে না। আর যদি উহা মন্দ না হয় তবে সকলের সম্মুখে করিতে আপত্তি কি

(৩৭) ছেলেমেয়েদের দ্বারা নিয়মিত কোন পরিশ্রমের কাজ অবশ্যই করাইবে, যেন তাহাদের স্বাস্থ্য অটুট থাকে এবং কর্ম-প্রিয়তার অভ্যাস গড়িয়া উঠে যেমন, ছেলেদের পক্ষে এক-আধ মাইল হাঁটা বা দৌড়ানো এবং মেয়েদের জাতা পেষা বা চরকা কাটা ইত্যাদি 

(৩৮) ছেলেমেয়েরা হাঁটার সময় যেন উপরের দিকে চাহিয়া বা (এদিক-ওদিক চাহিয়া) অতি তাড়াতাড়ি না হাঁটে ইহার তাকীদ দিবে  

(৩৯) ছেলেমেয়েদেরকে বিনয়-নম্র আচরণ শিক্ষা দিবে কথায় বা কাজে কখনো গর্ব-অহংকার প্রকাশ করিতে দিবে না। এমনকি নিজের সমবয়স্কদের সঙ্গে বসিয়া নিজের বাড়ী-ঘর, বংশাবলী এবং নিজের বই-পুস্তক দোয়াত-কলমের প্রশংসা বড়াই করিতে দেখিলে নিষেধ করিবে  

(৪০) মাঝে-মধ্যে ছেলেমেয়েদেরকে নিজের ইচ্ছামত কিছু কিনিবার জন্য দুই-চারটা টাকা দিবে কিন্তু গোপনে কিনিবার অভ্যাস করিতে দিবে না 

(৪১) ছেলেমেয়েদেরকে পানাহার মজলিশে উঠা-বসার আদব-কায়দা শিক্ষা দিবে

 

14| KwZcq Riæix †n`v‡qZ

ছেলেমেয়েদেরকে অবশ্যই কায়িক পরিশ্রমের অভ্যাস করাইবে বরং ছেলেদেরকে পরিমিত ব্যায়াম এবং মেয়েদেরকে জাতা পেষণ চরকা কাটার অভ্যাস করাইবে 

* যত অল্প বয়সে খৎনা করানো যায় ততই ভাল উহাতে কষ্ট কম হয়। এবং দ্রুত ঘা শুকাইয়া যায় 

* বাচ্চারা যেন সর্বদা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকে উহা লক্ষ্য রাখিবে হাত-মুখ ময়লা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পরিষ্কার করিয়া দিবে তাহাদেরকে মাজন মেসওয়াক ব্যবহারের অভ্যাস করাইবে। 

* যেই সকল ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া করে তাহাদেরকে সর্বদা কিছু স্নায়ুবিক শক্তি বর্ধক পথ্য করাইবে |

* শিশুদেরকে অধিক হাসাইবার জন্য আদর করার ছলে উপরের দিকে নিক্ষেপ করিয়া খেলিও না, কিংবা জানালার মধ্য দিয়া ধরিও না, হয়ত পড়িয়া গিয়া হাসির স্থলে ফাসী হইয়া যাইতে পারে অনুরূপভাবে শিশুদের পিছনে থাকিয়া হাসাইয়া হাসাইয়া দৌড়াইও না হয়ত পড়িয়া গিয়া হাত-পা ভাঙ্গিতে পারে 

* সকল সময় ভাল খাওয়া-পরার অভ্যাস করিবে না কারণ, মানুষের অবস্থা সকল সময় এক রকম থাকে না যদি উহা অভ্যাসে পরিণত হইয়া যায়, তবে হয়ত এক সময় মুসীবতের শিকার হইতে হইবে  

* তোমার বাচ্চা যদি কাহারো সঙ্গে কোন অন্যায় আচরণ করে, তবে সেই ক্ষেত্রে তুমি নিজের সন্তানের পক্ষাবলম্বন করিও না বিশেষতঃ নিজের বাচ্চার সম্মুখে এইরূপ করিলে তাহার স্বভাব নষ্ট হইয়া যাইবে অনুরূপভাবে অন্য মানুষের নিকট নিজের সন্তানাদির প্রশংসা করিবে না 

* নিজের শাগরিদ বা সন্তানাদিকে কখনো শক্ত লাঠি দিয়া প্রহার কিংবা লাথি-ঘুষি দিবে না আল্লাহ না করুন- দেহের কোন নাজুক অংশে আঘাত লাগিলে হয়ত হিতে বিপরীত হইতে পারে চেহারা এবং মুখমণ্ডলেও প্রহার করিবে না। 

* মেয়েদেরকে বলিয়া দিবে যেন ছেলেদের সঙ্গে খেলা না করে কারণ ইহাতে উভয়েরই স্বভাব নষ্ট হয় ঘরে যদি অন্য কোন ছেলে আসে (যদি তাহার বয়স কমও হয়) তখন সম্মুখ হইতে সরিয়া যাইবে 

* বাচ্চাদেরকে মাতাপিতা এবং দাদার নাম শিখাইয়া দিবে। মাঝে মাঝে জিজ্ঞাসা করিয়া দেখিবে উহা স্মরণ আছে কিনা উহার এক ফায়দা এই যে, আল্লাহ না করুন, যদি কখনো হারাইয়া যায়, তখন লোকেরা হয়ত মাতাপিতার পরিচয় জানিতে পারিলে জায়গামত পৌছাইয়া দিতে পারিবে  

 

15| ci¯úi n‡Ki weeiY

 

সন্তানের হক

মাতাপিতার উপর সন্তানের অনেক হক রহিয়াছে। সন্তানের চরিত্রগঠন এবং তাহাদিগকে ধর্মীয় শিক্ষা দেওয়া মাতাপিতার দায়িত্ব বহু মাতাপিতা আপন সন্তানদিগকে বিবিধ নাজ-নেয়মত দ্বারা সযত্নে প্রতিপালন করে বটে, কিন্তু তাহাদেরকে দ্বীনী শিক্ষা দেওয়ার ব্যাপারে কোন দায়িত্ব পালন করে না 

ভাইসকল! শৈশবেই যদি ছেলেমেয়েদেরকে দ্বীনী শিক্ষা প্রদান চরিত্র গঠন করা না হয়, তবে বড় হওয়ার পর উহার পরিণাম খুবই খারাপ হয় কালামে পাকে এরশাদ হইয়াছে 

Child Haque

অর্থঃ হে ঈমানদারগণ! নিজেকে এবং নিজের পরিবারবর্গকে দোজখ হইতে রক্ষা কর 

উপরোক্ত আয়াতের তাফসীরে হযরত আলী রাজিয়াল্লাহু আনহু বলিয়াছেন পরিবারবর্গকে এলমে দ্বীন শিক্ষা দাও - ইহা দ্বারা জানা গেল যে, নিজের বিবি-বাচ্চাকে দ্বীনের এলেম শিক্ষা দেওয়া ফরজ, অন্যথায় উহার পরিণতি হইবে দোজখ 

সন্তানের পার্থিব হক হইল, তাহাদেরকে এমন কাজ শিক্ষা দিবে যাহা দ্বারা দুনিয়াতে সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যে থাকিতে পারে। 

হযরত ইবনে ওমর (রাঃ) হইতে বর্ণিত, রাসূলে আকরাম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করিয়াছেনঃ তোমরা তোমাদের ছেলেদেরকে সাতার কাটা তীর নিক্ষেপ করা শিক্ষা দাও এবং মেয়েদেরকে চরকা কাটা শিক্ষা দাও -বায়হাকী 

হাদীসের অর্থ শুধু এই তিনটি কাজ শিক্ষা দেওয়াই নহে; বরং দুনিয়াতে জীবন যাপন করার এবং জাতীয়তা রক্ষা করার জন্য যেই সকল বিষয় আবশ্যক হইবে উহার সবই শিক্ষা দেওয়া অভিভাবকদের কর্তব্য 

দ্বীনদার-পরহেজগার এবং শালীন শরীফ মেয়ে দেখিয়া বিবাহ করিবে যেন নেক সন্তান পয়দা হয়। শৈশবে আন্তরিক মহব্বত ভালবাসার সহিত তাহাদের পরিচর্যা প্রতিপালন করিবে সন্তানের প্রতি স্নেহ-মমতা পোষণেরও বহু ফজিলত আসিয়াছে। দুধপানের জন্য যদি ধাত্রী নিয়োগ করিতে হয় তবে দ্বীনদার-পরহেজগার নারী ঠিক করিবে। কারণ, সন্তানের চরিত্রে দুধেরও আছর পড়ে মেয়ে-সন্তান প্রতিপালনের অধিক ফজিলত বর্ণিত হইয়াছে তাহাদেরকে যত্ন করিতে কখনো অবহেলা করিবে না ছেলেমেয়েরা বয়ঃপ্রাপ্ত হওয়ার পর উত্তম পাত্র-পাত্রী দেখিয়া তাহাদের বিবাহ দিবে। যদি মেয়ের স্বামী ইন্তেকাল করে তবে তাহার দ্বিতীয় বিবাহ না হওয়া পর্যন্ত তাহাকে নিজের ঘরে যতের সহিত রাখিবে। তাহার জীবন ধারণে যাহা যাহা প্রয়োজন উহার সকল কিছু যোগাইয়া দিবে। 

 

একটি ঘটনা

একবার এক ব্যক্তি হযরত ওমর ফারুক (রাঃ)-এর দরবারে গিয়া নিজের ছেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ করিল যে, সে আমার হক আদায় করে না হযরত ওমর (রাঃ) এই বিষয়ে ছেলেকে জিজ্ঞাসা করিলে সে জবাব দিল, হে আমীরুল মোমেনীন! কেবল সন্তানের উপরই পিতার হক আছে না পিতার উপরও সন্তানের কিছু হক আছে

হযরত ওমর (রাঃ) বলিলেন, পিতার উপরও সন্তানের কিছু হক আছে। ছেলেটি বলিল, আমি সেই সকল হকের বিবরণ শুনিতে চাই। 

এইবার আমীরুল মোমেনীন হযরত ওমর (রাঃ) বলিলেন, পিতার উপর সন্তানের হক হইল -

* সুসন্তান লাভের উদ্দেশ্যে নেক পরহেজগার স্ত্রী গ্রহণ করা 

* সন্তান পয়দা হওয়ার পর ভাল দেখিয়া তাহার নাম রাখা (কেননা, ভাল নামের বরকতে ছেলের উপর ভাল আছর পড়ে) 

* শিশুর বয়স বৃদ্ধি পাইয়া তাহার হুশ-জ্ঞান হওয়ার পর তাহাকে আদব-তমিজ দ্বীনের এলেম শিক্ষা দেওয়া 

উপরোক্ত বিবরণ শুনিয়া ছেলেটি সঙ্গে সঙ্গে বলিয়া উঠিল, হে আমীরু মোমেনীন! আমার পিতা এই সকল হকের একটিও আদায় করে নাই আমি পয়দা হওয়ার পর তিনি আমার এমন একটি নাম রাখিলেন, যাহার অর্থ হইল পায়খানার কীট। তিনি আমাকে দ্বীনী এলেমের একটি হরফও শিক্ষা দেন নাই|

এই কথা শুনিয়া হযরত ওমর ভিষণ রাগ করিলেন এবং লোকটির অভিযোগ খারিজ করিয়া দিয়া তাহাকে বলিলেন, আগে তুমি নিজের জুলুমের প্রতিকার কর, পরে ছেলের জুলুমের বিরুদ্ধে ফরিয়াদ করিও তুমি নিজেই ছেলের হক অধিক নষ্ট করিয়াছ। যাও, নিজের সন্তানের প্রতি কখনো এইরূপ আচরণ করিও না।

মোটকথা, যথাযথভাবে সন্তানের হক আদায় না করিলে উহার পরিণতি খারাপ হইবেই 

একবার আমি কানপুরের জামে মসজিদে দেখিতে পাইলাম, এক ব্যক্তি (পয়সার বিনিময়ে) মসজিদে পানি তুলিতেছে লোকেরা তাহাকে নবাব! নবাব! বলিয়া ডাকিতেছিল। আমি মনে করিয়াছিলাম, লোকটির নামই হয়ত নবাব পরে জানিতে পারিলাম, লোকটি আসলেই এক সময় নবাব ছিল এবং বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়িয়া তাহার জমিদারী ছিল কিন্তু পরবর্তীতে (ছেলেমেয়েদের) বিলাসিতার কারণে তাহার সকল কিছু শেষ হইয়া বর্তমানে সে নিদারুণ দৈন্যদশায় দিন কাটাইতেছে অর্থাৎ শৈশবে ছেলেমেয়েদের নৈতিক চরিত্রগঠন দ্বীনী এলেম শিক্ষা না দিলে এইরূপ পরিণতিই বরণ করিতে হয়। 

পরবতী অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন


No comments

Powered by Blogger.