ওযুর ফরয, সুন্নাত, মোস্তাহাব ও আদব সমূহ, ওযু ভঙ্গের কারণ এবং ওযু করার নিয়ম । Islamic Media Blog
![]() |
Pak & Holy |
উযুর ফরয, সুন্নাত, মোস্তাহাব ও আদব সমূহ
(ধারাবাহিক ভাবে উযূর আমল সমূহ বর্ণনা করা হল।)
* ওয়াক্ত আসার পূর্বেই উযূর সামান প্রস্তুত রাখা উত্তম ।
* মাযূর নন- এমন ব্যক্তির পক্ষে ওয়াক্ত আসার পূর্বে উযু করে নেয়া উত্তম।
* উযূর পূর্বে পেশাব পায়খানার হাজত থেকে ফারেগ হয়ে নেয়া উত্তম।
বসার মাসায়ালা:
* উঁচু স্থানে বসে উযু করা আদব।
* পবিত্র স্থানে উযূ করা।
* কেবলামুখী হয়ে উযূ করা আদব।
* পানি ঢেলে নিতে হয়-এমন পাত্র হলে সে পানির পাত্রটি বাম দিকে রাখা আর পানি হাত দিয়ে তুলে নিতে হয়- এমন পাত্র হলে ডান দিকে রাখা আদব ।
নিয়ত এবং উযু শুরুর মাসায়ালা:
* নাপাকী দূর করার কিম্বা পবিত্রতা অর্জন করার বা নামায জায়েজ হওয়ার অথবা আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করার নিয়ত করবে। নিয়ত করা সুন্নাত।
* নিয়ত মুখেও উচ্চারণ করা মোস্তাহাব।
* নিয়ত আরবীতে হওয়া উত্তম। আরবীতে হওয়া জরুরী নয়।
* নিয়ত বাংলাতে এভাবে করা যায়- আমি নাপাকী দূর করার , নামায বৈধ করার এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভ করার নিয়তে উযূ করছি।
* উযূর শুরুতে আওযুবিল্লাহ পড়বে।
* তারপর বিসমিল্লাহ পড়বে। বিসমিল্লাহ এভাবে পড়া উত্তম।
অর্থ : মহান আল্লাহর নামে আরম্ভ করছি এবং সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, তিনি আমাকে দ্বীন ইসলামের উপর রেখেছেন এজন্য ।
* কোন ওযর না থাকলে উযুর মধ্যে অঙ্গ মর্দন করে দেয়ার ক্ষেত্রে অন্যের সহযোগিতা গ্রহণ না করাই আদব। কোন ব্যক্তি স্বেচ্ছায় পানি তুলে দিলে বা পানি ঢেলে দিলেও কোন দোষ নেই।
কবজি ধোয়ার মাসায়েল:
* কালেমায়ে শাহাদাত পড়া । (মোস্তাহাব)
* বিসমিল্লাহ পড়া । (মোস্তাহাব)
* হাতের কবজি ধোয়ার দুআ পড়া। (মোস্তাহাব)
* বিসমিল্লাহ সহ দুআটি পড়া। দোয়ার অর্থ : হে আল্লাহ, আমি তোমার নিকট মঙ্গল ও বরকত কামনা করি এবং অমঙ্গল ও ধ্বংস থেকে তোমার কাছে পানাহ চাই ।
* তারপর উভয় হাতের কবজি ধৌত করা। তিনবার ধৌত করা সুন্নাত।
* তারপর দুরূদ শ্রীফ পড়া । (মোস্তাহাব)
* মেসওয়াক করা সুন্নাত। মেসওয়াক উযু শুরু করার পূর্বেও করা যায় । মেসওয়াক না থাকলে কিম্বা মুখে ওযর থাকলে বা দাঁত না থাকলে আঙ্গুল দিয়ে হলেও ঘষে নেয়।
কলি করার মাসায়েলঃ
* কালেমায়ে শাহাদাত পাড়া । (মোস্তাহাব)
* বিসমিল্লাহ পড়া । (মোস্তাহাব)
* কুলি করার দুআ পড়া । (মোস্তাহাব)
* বিসমিল্লাহ সহ দোয়া পড়া।
অর্থঃ হে আল্লাহ, তুমি আমাকে সাহায্য কর যেন কুরআন তিলাওয়াত করতে, যিকির করতে ও শোকর আদায় করতে পারি।
* দুআ পড়ার পর কুলি করা। কুলি করা সুন্নাত এবং তিন বার কুলি করা সুন্নাত। তিনবারের জন্য স্বতন্ত্র ভাবে তিনবার পানি নেয়া উত্তম।
* ডান হাতে কুলির পানি নেয়া। (মোস্তাহাব)
* রোযাদার না হলে গড়গড়া করা সুন্নাত।
* কুলি করার পর দুরূদ শরীফ পড়া মোস্তাহাব।
উল্লেখ্য যে, উযূর অঙ্গগুলো ধোয়া বা মসেহ করার যে সব দুআ বর্ণিত হয়েছে তা হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত নয়। অতএব এ গুলো পড়াকে সুন্নাত মনে করা যাবে না। তবে বুযুর্গানে দ্বীন এগুলো পাঠ করেছেন এবং করেন । তদুপরি এ দুআগুলোর অর্থ ভাল, এ হিসাবে এ গুলে; পাঠ করাকে মোস্তাহাব বা উত্তম বলা হয়।
নাকে পানি দেওয়ার মাসায়েল:
* কালেমায়ে শাহাদাত পড়া। (মোস্তাহাব) |
* বিসমিল্লাহ পড়া। (মোস্তাহাব)
* নাকে পানি দেয়ার দুআ পড়া ।(মোস্তাহাব)
* বিসমিল্লাহ সহ দুআটি পড়া।দোয়ার অর্থঃ হে আল্লাহ, তুমি আমাকে জান্নাতের সুগন্ধি দান কর এবং জাহান্নামের গন্ধ আমার ভাগ্যে দিওনা।
* নাকে পানি দেয়া সুন্নাত।
* ডান হাত দিয়ে নাকে পানি দেয়া এবং বাম হাত দিয়ে ঝেড়ে ফেলা আদব।
* রোযাদার না হলে নাকের নরম স্থান পর্যন্ত পানি টেনে নেয়া উত্তম।
* বাম হাতের কনিষ্ঠ আঙ্গুলের অগ্রভাগ দিয়ে নাকের মধ্যে পরিষ্কার করা আদব।
* এরূপ তিনবার নাকে পানি দেয়া এবং ঝেড়ে ফেলা সুন্নাত। তিনবারের জন্য স্বতন্ত্র ভাবে তিনবার পানি নেয়া উত্তম।
* অতপর দুরূদ শরীফ পড়া । (মোস্তাহাব)
মুখমন্ড ধৌত করার মাসায়েল:
* কালেমায়ে শাহাদাত পড়া (মোস্তাহাব)
* বিসমিল্লাহ পড়া। (মোস্তাহাব)
* মুখমণ্ডল ধৌত করার দুআ পড়া (মোস্তাহাব।
* বিসমিল্লাহ সহ দুআটি পড়া যায়" দোয়ার অর্থ : হে আল্লাহ , যে দিন (কতক) মানুষের চেহারা উজ্জ্বল এবং (কতক) চেহারা দুঃখ মলিন হবে, সে দিন আমার চেহারাকে উজ্জ্বল করো।
* মুখমণ্ডল ধৌত করা ফরয। কপালের উপরিভাগের চুলের গোড়া থেকে চিবুক (থুতনি) পর্যন্ত এবং দুই কানের লতি পর্যন্ত হল মুখমন্ডলের সীমানা।
* ডান হাতে পানি নিয়ে তার সাথে বাম হাত মিলিয়ে কপালের উপরিভাগ থেকে ধোয়া আরম্ভ করা আদব।
* মুখে পানি আস্তে লাগানো। জোরে মারা মাকরূহ।
* পাতলা দড়ি হলে চামড়াতে পানি পৌছাতে হবে। আর ঘন দাড়ি হলে মুখের বেষ্টনীর ভিতরের দাড়ি ধৌত করতে হবে- চামড়াতে পানি পৌছানোর প্রয়োজন নেই।
* চেহারার বেষ্টনীর বাইরের ঝুলন্ত দাড়িতে মসেহ করা সুন্নাত।
* এরূপ তিনবার মুখমণ্ডল ধৌত করা সুন্নাত।
* প্রতিবার পুরো মুখ মণ্ডলে ভাল করে হাত বুলাবে।
দাড়ি খেলাল করার মাসায়েল:
* ঘন দাড়ি খেলাল করা সুন্নাত। তিনবার মুখ ধৌত করার পর দাড়ি খেলাল করতে হবে।
* এক কোষ পানি নিয়ে দাড়ির নীচের ভাগের থুতনিতে লাগানো, তারপর খেলাল করা।
* ডান হাতের তালু সামনের দিকে রেখে গলার দিক থেকে দাড়ির নীচ দিয়ে উপর দিকে খেলাল করা নিয়ম, খেলাল তিন বারের বেশী করবে না।
* অবশেষে দুরূদ শরীফ পড়া মোস্তাহাব।
ডান হাত ধোয়ার মাসায়েল:
* কালেমায়ে শাহাদাত পড়া। (মোস্তাহাব)
* বিসমিল্লাহ বলা। (মোস্তাহাব)
* ডান হাত ধোয়ার দুআ পড়া । (মোস্তাহাব)
* বিসমিল্লাহ সহ দুআটি পড়া।
* ডান হাত কনুই সহ ধৌত করা
ফরয।
*
আঙ্গুলের অগ্রভাগ থেকে আরম্ব করা সুন্নাত এবং হাতের অগ্রভাগ নীচু করবে যাবেত করে
ধোয় পানি আঙ্গুলে অগ্রভাগ দিয়ে গড়িয়ে পড়ে।
* এভাবে তিন বার ধৌত করা। (সুন্নাত)
* প্রতিবার ধৌত করার সময় পুরো অঙ্গ ভাল ভাবে মর্দন করবে।
* হাতে আংটি থাকলে ভালভাবে নাড়াচাড়া করে ভিতরে পানি প্রবেশ করানো মোস্তাহাব। আর আংটি চাপা থাকলে অবশ্যই এরূপ করতে হবে। মহিলাদের নাকের অলংকার, চুড়ি ইত্যাদির বেলায়ও এই নিয়ম প্রযোজ্য।
* তিন বার হাত ধোয়ার পর দুরূদ শরীফ পড়বে। (মোস্তাহাব)
বাম হাত ধৌত করার মাসায়েল:
* বাম হাত ধৌত করার ক্ষেত্রেও ডান হাতের ন্যায় উপরোক্ত নয়টি মাসআলা।
হাতের আঙ্গুল খেলাল করার মাসায়েলঃ
* বাম হাত তিনবার ধৌত করার পর উভয় হাতের আঙ্গুল খেলাল করবে। এটা সুন্নাত।
* আঙ্গুল খেলাল করার তরীকা হলঃ এক হাতের আঙ্গুলগুলো অন্য হাতের আঙ্গুল সমূহের মধ্যে প্রবেশ করানো কিম্বা বাম হাতের আঙ্গুলগুলো এক সাথে ডান হাতের পিঠের দিক থেকে ডান হাতের আঙ্গুলগুলোতে প্রবেশ করানো। এমনিভাবে ডান হাতের আঙ্গুলগুলো দিয়ে বাম হাতের আঙ্গুল খেলাল করা।
* অবশেষে দুরূদ শরীফ পড়া মোস্তাহাব।
মাথা মাসেহ করার মাসায়েল:
* কালেমায়ে শাহাদাত পড়া। (মোস্তাহাব)
* বিসমিল্লাহ পড়া। (মোস্তাহাব)
* মাথা মসেহ করার দুআ পড়া। (মোস্তাহাব)
* বিসমিল্লাহ সহ দুআটি পড়া যায়।
* মাহমসেহের জন্য নতুন পানি নেয়া সুন্নাত !
* মাথা মসেহ করা। পুরো মাথায় মসেহ করা সুন্নাত। অন্ততঃ মাথার চারভাগের একভাগ মসেহ করা ফরয।
* মাথায় মসেহ করার তরীকা হলঃ দুই হাতের পুরো তালু আঙ্গুলের পেটসহ মাথার অগ্রভাগে রেখে পুরো মাথা জুড়ে পেছনের দিকে টেনে আনা। মাথার অগ্রভাগ থেকে মসেহ শুরু করা সুন্নাত।
* উভয় হাত দ্বারা মাথা মসেহ করা সুন্নাত। এক হাত দ্বারা মসেহ করা সুন্নাতের খেলাফ!
* অবশেষে দুরূদ শরীফ পাঠ করবে । (মোস্তাহাব)
কান মাসেহ করার মাসায়েল:
* কালেমায়ে শাহাদাত পড়া। (মোস্তাহাব)
* বিসমিল্লাহ পড়া। (মোস্তাহাব)
* কান মাসেহের দুয়া পড়া।
(মোস্তাহাব)
*
বিসমিল্লাহ সহ দুয়াটি পড়া।
* কান মসেহ করা (উভয় কান এক সাথে) সুন্নাত।
* উভয় হাতের কনিষ্ঠ আঙ্গুলের অগ্রভাগ কানের ছিদ্রে প্রবেশ করিয়ে একটু নাড়াচাড়া দেয়া নিয়ম।
* তর্জনী (শাহাদাত আঙ্গুল) এর অগ্রভাগ দ্বারা কানের ভিতরের দিক মসেহ করবে ।
* বৃদ্ধ আঙ্গুলের পেট দ্বারা কানের পেছনের ভাগ মসেহ করবে ।
* কান মসেহের জন্য নতুন পানি না নেয়া সুন্নাত !
* অবশেষে দুরূদ শরীফ পড়া । (মোস্তাহাব)।
মাসেহ করার এই তরীকাটি সহ। অন্য একটি তরীকাও বর্ণিত আছে, তা হল-উভয় হাতের তিন আঙ্গুলের পেট (শাহাদাত ও বৃদ্ধ আঙ্গুল ব্যতীত) মাথার অগ্রভাগের উপরে রেখে পেছন দিকে টেনে নিয়ে যাবে। তারপর দুই হাতের তালু মাথার দুই পার্শ্বে রেখে পেছন দিক থেকে সামনে টেনে নিয়ে আসবে।
গর্দান মাসেহ করার মাসায়েল:
* কালেমায়ে শাহাদাত পড়া। (মোস্তাহাব)
* বিসমিল্লাহ পড়া । (মোস্তাহাব)।
* গর্দান মসেহের দুআ পড়। (মোস্তাহাব)
*বিসমিল্লাহ সহ দুআটি পড়া যায় ।
* অতঃপর গর্দান মসেহ করবে। (মোস্তাহাব)
* উভয় হাতের তিন আঙ্গুলের পিঠ দ্বারা গর্দান মসেহ করবে।
* অবশেষে দুরূদ শরীফ পড়া। (মোস্তাহাব)
পা ধৌত করার মাসায়েল:
• কালেমায়ে শাহাদাত পড়া। (মোস্তাহাব)।
* বিসমিল্লাহ পড়া। (মোস্তাহাব)
* ডান পা ধোয়ার দুআ পড়া। (মোস্তাহাব)
* বিসমিল্লাহ সহ দুআটি পড়া যায়
* ডান পা ধৌত করা। (ফরয)
* পায়ের অগ্রভাগে পানি ঢালা সুন্নাত।
* বাম হাত দিয়ে পা বিশেষভাবে পায়ের তলা মর্দন করা আদব।
* তিনবার ধৌত করা। (সুন্নাত)
* প্রতিবার পুরো অঙ্গ ভাল করে মর্দন করবে।
ডান পায়ের আঙ্গুল খেলাল করার মাসায়েল:
* ডান পায়ের আঙ্গুল খেলাল করা। (সুন্নাত)
* বাম হাতের কনিষ্ঠ আঙ্গুল দ্বারা খেলাল করা আদব ।
* ডান পায়ের কনিষ্ঠ আঙ্গুল থেকে খেলাল আরম্ভ করা নিয়ম।
* খেলাল করার সময় পায়ের আঙ্গুলের নীচ দিক থেকে আঙ্গুল প্রবেশ করিয়ে খেলাল করা।
* অবশেষে দুরূদ শরীফ পড়া । (মোস্তাহাব)
বাম পা ধোয়া ও বাম পায়ের আঙ্গুল খেলাল করার মাসায়েল:
* কালেমায়ে শাহাদাত পড়া। (মোস্তাহাব)
* বিসমিল্লাহ বলা। (মোস্তাহাব)।
* বাম পা ধোয়ার দুআ পড়। (মোস্তাহাব)
* বিসমিল্লাহ সহ দুআটি পড়া যার অর্থ : হে আল্লাহ, আমার গোনাহ মার্জনা কর, আমার চেষ্টাকে সাফল্য মন্ডিত কর এবং আমার (আখেরাতের) ব্যবসাকে ক্ষতি থেকে রক্ষা কর ।
* বাম পা ধৌত করা। (ফরয) ডান পায়ের ক্ষেত্রে বর্ণিত অপর আটটি আমল সহ । শুধু বাম পায়ের আঙ্গুল খেলাল করার সময় বৃদ্ধ আঙ্গুল থেকে কনিষ্ঠ আঙ্গুলের দিকে খেলাল করা নিয়ম। * অবশেষে দুরূদ শরীফ পড়া। (মোস্তাহাব)
উযূর সব অঙ্গের জন্য প্রযোজ্য মাসায়েল :
* উযূর অঙ্গগুলো ধোয়ার সময় জোড়া ও ভাজগুলোতে বিশেষ যত্ন সহকারে পানি পৌছাতে হবে।
* উযূর মাঝে মাঝে নিম্নোক্ত দুআ পড়া উত্তম
অর্থ : হে আল্লাহ, আমার পাপ ক্ষমা কর, আমার ঘরে প্রাচুর্য্য দান কর এবং আমার রিযিকে বরকত দাও।
* উযূর প্রয়োজন মোতাবেক পানি ব্যবহার করবে- কম বা বেশী করবে না।
* উযূর মধ্যে কোন জাগতিক কথা-বার্তা না বলা আদব ।
* প্রত্যেক অঙ্গকে ফরয পরিমাণের চেয়ে কিছু বেশী ধৌত করা উত্তম। যেমন- কনুইর উপরেও কিছুটা ধৌত করা। এটাকে উজ্জ্বলতা ও চমক বৃদ্ধি করা বলে । কেননা, কেয়ামতের দিন উযূর অঙ্গগুলো উজ্জ্বল হবে।
উযু শেষ হওয়ার পর করণীয় কয়েকটি আমল :
* রোযাদার না হলে উযূর অবশিষ্ট পানি বা তার কিয়দংশ পান করা মোস্তাহাব। এ পানি পান করা অনেক রোগের শেফা। এ পানি কেবলামুখী হয়ে পান করা উত্তম। দাঁড়িয়ে এবং বসে উভয়ভাবে পান করা যায়।
উযুর
শেষের দেয়াটি পড়া -
* উযুর শেষে কালেমায়ে শাহাদাত পড়া মোস্তাহাব এবং এটা দাঁড়িয়ে, কেবলামুখী হয়ে, আকাশের দিকে নজর করে পড়া মোস্তাহাব।
* সূরা কদর পড়াও উত্তম । উযূর পর সূরা কদর একবার পড়লে সে সিদ্দীকিনদের অন্তর্ভুক্ত হবে । দুইবার পড়লে তাকে শহীদের তালিকাভুক্ত করা হবে। আর তিনবার পড়লে নবীদের সঙ্গে তীর হাশর হবে ।
* উযূর পর রুমাল, তোয়ালিয়া, গামছা ইত্যাদি দ্বারা উযূর পানি অঙ্গ থেকে মুছে নেয়ায় ক্ষতি নেই । তবে খুব মর্দন করে নয় বরং উত্তম হল হালকাভাবে মুছে নেয়া ।
* উযূর পর মাকরূহ ওয়াক্ত না হলে দুই রাকআত তাহিয়্যাতুল উযূ নামায পড়ে নেয়া উত্তম।
বিঃ দ্রঃ উযুর মধ্যে প্রত্যেকটা অঙ্গের আমলের শুরুতে কালেমায়ে শাহাদাত পড়া, বিসমিল্লাহ পড়া এবং শেষে দুরূদ শরীফ পড়া মোস্তাহাব। কোন কোন ফকীহ এর যে কোন একটি পড়লেও চলবে বলে মত প্রকাশ করেছেন।
যে সব কারণে উযূ মাকরূহ হয়
নিম্নলিখিত কার্যগুলো উযূতে করলে উযূ মাকরূহ হয় অর্থাৎ, করলে উযূ ভঙ্গ হয় না ছওয়াবও হয় না।
১. তারতীব অনুযায়ী উযূ না করলে।
২. অপবিত্র স্থানে বসে উযূ করলে।
৩. অতিরিক্ত পানি ব্যয় করলে।
৪. উযূতে রত থাকা অবস্থায় জাগতিক কথাবার্তা বললে । তবে কোন বিশেষ প্রয়োজনে দু একটি কথা বললে কোন আপত্তি নেই।
৫. মুখ অথবা অন্য কোন অঙ্গে জোরে পানি মারলে ।
৬. মুখে পানি দেয়ার সময় শুরশুর শব্দ বেরিয়ে আসলে।
৭. তিন বারের অধিক কোন অঙ্গ ধৌত করলে কিংবা অঙ্গগুলো একবার ধুয়ে ধুয়ে মুছে ফেললে। তবে কোন কারণবশত, এরূপ করলে কোন দোষ নেই। বিনা কারণে করা ঠিক নয়।
৯. ডান হাতে নাক পরিস্কার করা।
১০. প্রথমে বাম হাত অথবা বাম পা ধৌত করা ।
যে সব কারণে উযূ ভাঙ্গে না
কোন কোন কারণে উযূ ভঙ্গ হয় না, তবে সাধারণ্যে উযু ভঙ্গ হয় বলে খ্যাত। যেমন :
১. বসে বসে তন্দ্রাচ্ছন্ন হলে উযূ ভঙ্গ হয় না।
২. নামাযের সজিদায় তন্দ্রাভিভূত হয়ে পড়লে উযু ভঙ্গ হয় না। তবে তন্দ্রায় শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ শিথিল হয়ে এক অঙ্গ অন্য অঙ্গের সাথে মিশে গেলে, যেমন কনুই উরুর সাথে মিশে গেলে অথবা উরু পেটের মাথে মিললে উযু ভঙ্গ হয়ে যায়। তবে মেয়েলোক এর ব্যতিক্রম।
৩. নামাযের মধ্যে মুচকি হাসি দিলে উযু ভঙ্গ হয় না।
৪. উযু করার পর স্ত্রীলোক তার সন্তানকে দুধ পান করালে অথবা সস্তান থেকে দুধ নিংড়িয়ে ফেললেও উযূ ভঙ্গ হয় না।
৫. স্বীয় অথবা স্ত্রীলোকের যৌনাঙ্গে দৃষ্টিপাত করলেও উযু ভঙ্গ হয় না। তবে ইচ্ছাকৃত এরূপ করা ভাল নয় ।
৬. পুরুষ এবং স্ত্রীলোকের শরীর স্পর্শ করলে অথবা চুম্বন করলে উযূ ভঙ্গ হয় না।
৭. উযূ করার পর লজ্জাস্থানে হাত লাগলে উযূ নষ্ট হবে না। তবে ইচ্ছাকৃতভাবে এরূপ করা মাকরূহ।
৮. উযু করার পর নখ কাটলে অথবা পায়ের চামড়া কাটলে অথবা উপড়ালে উযূ ভঙ্গ হয় না।
৯. বিড়ি সিগারেট সেবন করলে উযু ভঙ্গ হয় না।
১০. সতর খুললে উমূ ভঙ্গ হয় না।
১১. কারও সতর দেখলে উযু ভঙ্গ হয় না ।
যে সব কারণে উযূ ভেঙ্গে যায়
১. প্রস্রাব, পায়খানা করা।
২. পিছনের রাস্তা দিয়ে বাতাস বেরিয়ে আসা।
৩. প্রস্রাব পায়খানা ব্যতীত অন্য কোন বস্তু যেমন কেঁচো, ক্রিমি, পাথরকণা ইত্যাদি অথবা এগুলো ছাড়াও যদি অন্য কোন বস্তু পেশাব অথবা পায়খানার রাস্তা দিয়ে নির্গত হয়, তখন উযু ভঙ্গ হয়ে যাবে।
৪. শরীরের অন্য কোন স্থান থেকে রক্ত, পুঁজ ইত্যাদি বেরিয়ে গড়িয়ে গেলে ।
৫. বমি ছাড়াও রক্ত, পিত্ত, খাদ্য অথবা পানি মুখ ভরে নির্গত হলে উযূ ভঙ্গ হবে। এ সমস্ত বস্তু অল্প অল্প করে কয়েক বার নির্গত হলেও উযূ ভঙ্গ হবে যদি সব বারেরটা একত্রে হলে মুখ ভরা পরিমাণ হত বলে মনে হয়।
৬. থুতুতে রক্তের পরিমাণ বেশী হলে কিংবা উযূ করার সময় দাঁতের মাড়ি থেকে রক্ত বেরিয়ে আসলে উযু ভঙ্গ হবে। রক্তের পরিমাণ অল্প হলে কোন ক্ষতি নেই তবে রক্ত অধিক পরিমাণে হলে অর্থাৎ থুথু থেকে রক্তের পরিমাণ বেশী। হলে রক্ত বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত উযূ করতে পারবে না।
৭. বীর্য, মুযী অথবা হায়েযের রক্ত দেখা দিলে উযু ভঙ্গ হয়ে যাবে। এর বর্ণনা গোসল অধ্যায়ে করা হবে। উল্লেখ্য যে, বীর্য ও মুজীতে পার্থক্য আছে-যৌন সম্ভোগের সময় তৃপ্তি হওয়ার প্রাক্কালে অথবা ঘুমন্ত অবস্থায় স্বপ্নদোষ হলে যা নির্গত হয় তা হলো বীর্য আর পুংলিঙ্গের চটপটে ভাব দ্বারা অথবা স্ত্রীলোককে চুম্বন করায় অথবা স্ত্রীলোকের নিকটবর্তী হওয়ায় অথবা কোন খারাপ ধারণার বশবর্তী হলে লিঙ্গের অগ্রভাগ দিয়ে পানির মত যে বস্তু বেরিয়ে আসে, তা হল মুজী। বীর্য বের হলে গোসল করা আবশ্যক হয় কিন্তু মুযী বের হলে গোসল করা আবশ্যক হয় না তবে উযু ভেঙ্গে যায় ।
৮. স্ত্রীলোকের স্তন থেকে বুকের দুধ ব্যতীত অন্য বস্তু বেরিয়ে আসলে এবং ব্যথা হলে উযু ভঙ্গ হবে।
৯. যোনির মধ্যে আঙ্গুল প্রবেশ করালে উযু ভঙ্গ হয়ে যায়।
১০. বেহুঁশ বা পাগল হলে।
১১. নামাযের মধ্যে এ রকম শব্দ সহকারে হাসা যে, পার্শ্বের লোক সে শব্দ শুনতে পায়।
মায়ূর ব্যক্তির উযূর বয়ান
মাযূর কে? : যার নাক বা অন্য কোন যখম থেকে অনবরত রক্ত বইতে থাকে বা অনর্গল পেশাবের ফোটা আসতে থাকে, এমনকি নামাযের সম্পূর্ণ ওয়াক্তের মধ্যে এতটুকু সময়ও বিরতি হয় না, যার মধ্যে সে শুধু উযূর ফরয অঙ্গগুলো ধুয়ে সংক্ষেপে ফরয নামায আদায় করতে পারে, এরূপ ব্যক্তিকে মায়ূর বলে।
মাযূর ব্যক্তির হুকুম: মযূর ব্যক্তিকে প্রত্যেক নামাযের ওয়াক্তে নতুন উযূ করতে হবে। যে পর্যন্ত ঐ ওয়াক্ত থাকবে সে পর্যন্ত তার উযূ থাকবে অর্থাৎ, ঐ ওযরের কারণে উযূ যাবে না। তবে ঐ কারণ ছাড়া উযু ভঙ্গের অন্য কোন কারণ ঘটলে উযূ ভঙ্গ হয়ে যাবে।
* যদি এই রক্ত ইত্যাদি (অর্থাৎ, যে কারণে মাযূর হয়েছে) কাপড়ে লাগে এবং এরূপ মনে হয় যে, নামায শেষ হওয়ার পূর্বে আবার লেগে যাবে, তাহলে ঐ রক্ত ধোয়া ওয়াজিব নয়। অন্যথায় ধুয়ে নিয়ে পাক কাপড়েই নামায পড়তে হবে। তবে রক্ত এক দেরহাম পরিমাণের কম হলে তা না ধুয়েও নামায হয়ে যাবে । হাতের তালুকে সম্পূর্ণ খুলে তাতে পানি রাখলে যে পরিমাণ স্থানে পানি থাকে। তাকে এক দেরহাম-এর পরিমাণ বলা হয়। (বেহেশতি জেওর)
* মাযুর বলে গণ্য হওয়ার জন্য শর্ত হল পূর্ণ এক ওয়াক্ত (শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত) এমন অতিবাহিত হওয়া, যার মধ্যে সে ওযর থেকে এতটুকু বিরতি পায় না যাতে উযুর ফরযগুলো আদায় করে ফরয নামায পড়ে নিতে পারে। এরপর প্রতি ওয়াক্তে সারাক্ষণ সেই ওযর থাকা জরুরী নয় বরং ওয়াক্তের মধ্যে এক বারও যদি পাওয়া যায় তবুও সে মাযুর বলে গণ্য থাকবে। অবশ্য যদি এমন একটা ওয়াক্ত অতিবাহিত হয়, যার মধ্যে একবারও সে ওযর দেখা যায়নি, তাহলে সে আর মায়ূর থাকল না।
No comments