ছগীরা গুনাহ বা ছোট গুনাহর তালিকা ও কি ভাবে মাফ হয়
ছগীরা গোনাহের বিবরণ ও তার একটি তালিকা
নিমে ছগীরা বা ছোট গোনাহের একটি মোটামুটি তালিকা পেশ করা হল। তবে উল্লেখ্য যে, এই তালিকার মধ্যকার অনেক গোনাহকে অনেকে কবীরা গুনাহ বলেও আখ্যায়িত করেছেন। আবার পূর্বে উল্লেখিত কবীরা গোনাহের তালিকায় উল্লেখিত কোন কোন গোনাহকে ছগীরা গোনাহ বলেও আখ্যায়িত করা হয়েছে। আসলে একটি গোনাহকে তার চেয়ে বড় গোনাহের তুলনায় ছোট বলা যায়, আবার তার চেয়ে ছোট গোনাহের তুলনায় তাকে বড় গোনাহও বলা যায়। আবার এক হিসেবে কোন গোনাহই ছোট নয়, কেননা সেটাও তো আল্লাহরই নাফরমানী । যেমন ছোট সাপও জীবন ধ্বংসকারী, বড় সাপও জীবন ধ্বংসকারী-এরূপ বিচারে কোন সাপই ছোট অর্থাৎ, অবহেলার নয় । অতএব এ দৃষ্টিভঙ্গিতে কোন পাপকেই তুচ্ছ বা ছোট মনে করতে নেই। আর ছগীরা বা ছোট গোনাহের উপর হটকারিতা করলে তা কবীরা হয়ে দাঁড়ায়। যাহাকে স্বাভাবিক ভাবে যেগুলোকে ছগীরা গোনাহ বলা হয় তার একটি মোটামুটি তালিকা এই :
১. কোন মানুষ বা প্রাণীকে লানত (অভিশাপ) দেয়া ।
২. না জেনে কোন পক্ষে ঝগড়া করা কিংবা জানার পর অন্যায় পক্ষে ঝগড়া করা ।
৩. ইচ্ছাকৃত ভাবে নামাযে হাসা বা কোন বিপদের কারণে নামাজের মধ্যে ক্রন্দন করা ।
৪. ফাসেক লোকদের সাথে উঠাবসা করা।
৫. মাকরূহ ওয়াক্তে নামায পড়া ।
৬. কোন মসজিদে নাপাক প্রবেশ করানো ।
৭. মসজিদে পাগল বা এমন ছোট শিশুকে নিয়ে যাওয়া, যার দ্বারা মসজিদের পবিত্রতা নষ্ট হওয়ার আশংকা থাকে।
৮. পেশাব পায়খানার সময় কেবলার দিকে মুখ বা পিঠ করে বসা।
৯. উলঙ্গ হয়ে গোসল করা, যদিও আটকা স্থানে এবং লোকদের অগোচরে হয়।
১০. কোন স্ত্রীর সাথে জেহার করলে কাফফারা আদায় করার পূর্বে তার সাথে সহবাস করা। স্বামী যদি স্ত্রীকে বলে তুমি আমার উপর আমার মাতার পৃষ্ঠ দেশের মত (অর্থাৎ, মাতার পিঠের মত হারাম} এরূপ বলাকে "জেহার" বলা হয়। ইসলাম কালে স্ত্রীকে নিজের ইপর হারাম করার এটি একটি বিশেষ পদ্ধতি ছিল। এরূপ বললে কাফফারা আদায় করার পূর্বে স্ত্রী হালাল হবে না।
১১. সওমে বেসাল করা অর্থাৎ, এমনভাবে কয়েক দিন রোযা রাখা যে, মধ্যে ইফতারীও করবেনা ।
১২. মাহরাম পুরুষ ব্যতীত নারীর জন্য সফর করা।
১৩. কেউ ক্রয়ের জন্য কথা-বার্তা বলছে বা বিবাহের প্রস্তাব দিয়েছে এখনও উত্তর মেলেনি এরই মধ্যে অন্য কারও দর বলা বা প্রস্তাব দেয়া।
১৪. বাইরে থেকে শহরে যে মাল আসছে সেটা শহরের বাইরে গিয়ে ক্রয় করা । (এভাবে মধ্যস্বত্বভোগীর কারণে শহরে এসে মালের দাম বৃদ্ধি পায়)
১৫. জুমুআর (প্রথম) আযান হওয়ার পর ক্রয়-বিক্রয় করা এবং অন্যান্য দুনিয়াবী কাজ করা। অবশ্য জুমুআর দিকে চলন্ত অবস্থায় বেচা-কেনা করলে তাতে পাপ হবে না, কারণ অনুরূপ ক্রয়-বিক্রয় জুমুআর নামাযের জন্য ব্যাঘাত ঘটায় না ।
১৬. শখ করে কুকুর লালন-পালন করা। মালামাল ও ফসল সংরক্ষণের জন্য কিম্বা শিকারের উদ্দেশ্যে কুকুর পালন করা জায়েয।
১৭. অতি নগন্য বস্তু চুরি করা ।
১৮. দাড়িয়ে পেশাব করা ।
১৯. গোসল খানায় কিম্বা পানির ঘাটে পেশাব করা।
২০. নামাযে সাদল করা অর্থাৎ, অস্বাভাবিক ভাবে কাপড় ঝুলিয়ে রাখা।
২১. গোসল ফরয- এরূপ অবস্থায় আযান দেয়া।
২২. গোসল ফরয- এরূপ অবস্থায় বিনা ওজরে মসজিদে প্রবেশ করা।
২৩. গোসল ফরয- এরূপ অবস্থায় মসজিদে বসা।
২৪. নামাযের মধ্যে কোমরে হাত রেখে দাড়ানো।
২৫, নামাযে লম্বা চাদর এমন ভাবে শরীরে জড়ানো যাতে হাত বের করা মুশকিল হয়।
২৬. নামাযে কাপড় অথবা শরীর নিয়ে খেলা করা অর্থাৎ, বিনা প্রয়োজনে কোন অঙ্গ নাড়াচাড়া করা বা কাপড় ওলট-পালট করা।
২৭. নামাযীর সামনে তার দিকে তাকিয়ে বসা বা দাঁড়ানো।
২৮, নামাযে ডানে বামে অথবা উপরের দিকে তাকানো।
২৯, মসজিদে দুনিয়াবী কথা-বার্তা বলা।
৩০. ইবাদত নয় এরূপ কোন কাজ মসজিদে করা ।
৩১. রোজা অবস্থায় স্ত্রীর সাথে নিরাভরণ হয়ে জড়াজড়ি করা।
৩২. রোজা অবস্থায় স্ত্রীকে চুমু দেয়া । (যদি আরও আগে বেড়ে যাওয়ার আশংকা থাকে)।
৩৩. নিকৃষ্ট মাল দ্বারা যাকাত আদায় করা।
৩৪. গলার পশ্চাদ্দিক থেকে প্রাণী জবেহ করা।
৩৫. পঁচা মাছ অথবা মরে ভেসে ওঠা মাছ খাওয়া।
৩৬. বিনা প্রয়োজনে সরকার কর্তৃক দ্রব্যমূল্য নিদ্ধারণ করে দেয়া।
৩৭. বালেগা বোধ সম্পন্ন নারীর পক্ষে ওলীর ইজাযত ব্যতীত বিবাহ বসা (যদি ওলী অহেতুক বিবাহে বাঁধা দেয়ার না হয়)।
৩৮. “নেকাহে শেগার" করা। অর্থাৎ, এমন বিবাহ যাতে মহরে টাকা পয়সার পরিবর্তে নিজের মেয়েকে বিবাহ দেয়া হয়।
৩৯. স্ত্রীকে একের অধিক তালাক দেয়া ।
৪০. স্ত্রীকে বিনা প্রয়োজনে বায়েন তালাক দেয়া (বরং রেজুয়ী তালাক দেয়া উচিত।)
৪১. হায়েয অবস্থায় তালাক দেয়া। (খোলা তালাক দেয়া যায়। অর্থের বিনিময়ে স্ত্রীকে স্বামী তালাক দিলে তাকে খোলা তালাক বলে।
৪২. যে তুহরে সহবাস হয়েছে তাতে তালাক দেয়া।
৪৩, তালাকে রেজয়ী প্রদত্ত স্ত্রীকে সহবাস ইত্যাদি দ্বারা রুজু করা। (বরং প্রথমে মৌখিক ভাবে রুজু হওয়া চাই।)।
৪৪. স্ত্রীকে কষ্ট দেয়ার উদ্দেশ্যে ঈলা করা। ঈলা' বলা হয় কোন সময়সীমা নির্ধারণ করা ছাড়া অথবা চার মাস কিম্বা তারও বেশী সময়ের জন্য স্ত্রী গমন না করার শপথ করাকে । এরূপ শপথ করার পর চার মাসের মধ্যে শপথ ভঙ্গ করলে অর্থাৎ, স্ত্রী গমন করলে শপথ ভঙ্গ করার কাফফারা দিতে হবে এবং স্ত্রী বহাল থাকবে- তালাক হবে না। আর চার মাসের মধ্যে উক্ত স্ত্রী গমন না করলে চার মাস শেষ হওয়ার সাথে সাথে উক্ত স্ত্রী তালাক হয়ে যাবে।
৪৫. সন্তানদেরকে কোন মাল ইত্যাদি দেয়ার ক্ষেত্রে সমতা রক্ষা না করা । ৪৬. বিচারক কর্তৃক বাদী বিবাদী উভয় পক্ষের শুনানী ও তাদের প্রতি মনোযোগ প্রদানে সমতা রক্ষা না করা।
৪৭. কোন যিম্মী কাফেরকে কাফের বলে সম্বোধন করা। (যদি সে এরূপ সম্বোধনে কষ্টবোধ করে।
৪৮. বাদশার এনআম ককূল না করা।
৪৯. যার হালাল সম্পদের পরিমাণ কম-হারামের পরিমাণ বেশী, বিনা ওজরে তাহকীক ছাড়া তার দাওয়াত ও হাদিয়া গ্রহণ করা।
৫০. কোন প্রাণীর নাক কান প্রভৃতি কেটে দেয়া।
৫১. জবর দখলকৃত জমিতে প্রবেশ করা । এমনকি নামাযের জন্য হলেও।
৫২. কোন মুরতাদ বা অমুসলিম রাষ্ট্রের কাফেরকে তিন দিন পর্যন্ত তওবা করতঃ মুসলমান হওয়ার দাওয়াত প্রদান করার পূর্বে হত্যা করে দেয়া।
৫৩. নামাযে পাঠ করার জন্য কোন বিশেষ সূরা নির্ধারিত করা ।
৫৪. নামাযে যে সাজদায়ে তিলাওয়াত ওয়াজিব হয় সেটাকে বিলম্বিত করা বা ছেড়ে দেয়া । ৫৫. বিনা প্রয়োজনে একাধিক মুরদাকে এক কবরে দাফন করা।
৫৬. জানাযার নামায মসজিদের ভেতর পড়া।
৫৭. ডানে কিম্বা বায়ে ফটো রেখে নামায পড়া বা ফটোর উপর সাজদা করা।
৫৮. স্বর্ণের তার দিয়ে দাঁত বাঁধাই করা ।
৫৯. মৃত ব্যক্তির চেহারায় চুমু দেয়া।
৬০. ইসলাম বিরোধী কোন সম্প্রদায়ের নিকট অস্ত্র বিক্রয় করা ।
৬১. বালেগদের জন্য নিষিদ্ধ -এমন কোন পোশাক শিশুদেরকে পরিধান করানো।
৬২. স্ত্রীর সাথে এমন কারও সামনে সংগম করা যে বোঝে এবং হুশ রাখে। যদিও সে ঘুমিয়ে থাকে। (খুব ছোট শিশুর বেলায় ভিন্ন কথা)
৬৩। কোন আমীর বা শাসকের অভ্যর্থনায় বের হওয়া।
৬৪. রাস্তায় এমন স্থানে দাড়ানো বা বসা, যাতে অন্যদের চলতে অসুবিধা হয়।
৬৫. আযান শোনার পর ওজর বা জরুরী কাজ ব্যতীত ঘরে বসে বসে একামতের অপেক্ষা করতে থাকা।
৬৬. পেট ভরার পরও অতিরিক্ত খাওয়া। (রোযা বা মেহমানের কারণে কিছু বেশী খাওয়া হলে তা ব্যতিক্রম)
৬৭. ক্ষুধা লাগা ছাড়াও খাওয়া। (রোগের অবস্থা ব্যতিক্রম)
৬৮. খুতবার সময় কথা বলা।
৬৯. মসজিদে মানুষের ঘাড়ের উপর দিয়ে সামনে যাওয়া ।
৭০. মানুষের চলার পথে নাপাকী ফেলা।
৭১. মসজিদের ছাদে নাপাকী ফেলা।
৭২. নিজের সাত বৎসরের চেয়ে অধিক বয়স্ক ছেলের সঙ্গে এক বিছানায় শয়ন করা ।
৭৩. অহেতুক কাজে ও কথায় সময় নষ্ট করা।
৭৪. কারও প্রশংসায় অতিরঞ্জন করা।
৭৫. কথা বলতে গিয়ে ছন্দ মিলানোর কসরৎ করা।
৭৬. হাসি-ফুর্তিতে সীমালংঘন করা।
৭৭. কারও গুপ্ত কথা ফাস করা।
৭৮. সাথী-সঙ্গী ও বন্ধু-বান্ধবদের হক আদায়ে ত্রুটি করা।
৭৯. ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও আপন জন ও বন্ধু-বান্ধবকে জুলুম থেকে বিরত না রাখা।
৮০. বিনা ওজরে হজ্ব বা যাকাত আদায়ে বিলম্ব করা। কেউ কেউ এটাকে কবীরা গোনাহের তালিকাভুক্ত করেছেন।
|
No comments