দুই, তিন ও চার রাকাত নামাজের আমল সমূহ বা নিয়ম, যা জানা আবশ্যক।Islamic Media Blog
দুই রাকআত নামাযের আমলসমূহ
(দুই রাকআত নামাযে যা যা করতে হয় তার ধারাবাহিক বর্ণনা।)
দাড়ানো ও দাড়ানো অবস্থার আমল সমূহ
* পবিত্র স্থানে দাঁড়ানো ফরয।
* কেবলামুখী হয়ে দাঁড়ানো ফরয।
* পা দুটো সোজা কেবলামুখী করে রাখা সুন্নাত।
* পায়ের মাঝখানে সামনে পেছেনে সমান ফাঁক রাখবে যাতে পা সোজা কেবলামুখী হয়।
* দুই পায়ের মাঝখানে হাতের মিলিত চার আঙ্গুলের মত পরিমাণ ফাঁক রাখা মোস্তাহাব।
* নামাযের নিয়ত বাধার পূর্ব পর্যন্ত হাত ছাড়া অবস্থায় রাখবে। (বাঁধা মাকরূহ)।
* উভয় পায়ের উপর সমান ভর করে দাঁড়াবে। এক পায়ের উপর সম্পূর্ণ ভর করে দাঁড়ানো মাকরূহ।
* তাকবীরে তাহরীমার পূর্বে জায়নামাযের দুআ পড়ে নেয়া উত্তম। দোয়াটি হল- “ ইন্নী
ওয়াজযাহতু ওযহিয়া লিল্লাজি ফাতারস সামাওয়াতি ওয়াল আরদ্ হানিফাও ওমা আনা মিনাল
মুসরিকীন।”
অর্থ : আমি একাগ্রতার সাথে আমার মুখমন্ডল তাঁরই দিকে ফিরাচ্ছি, যিনি আসমান ও যমীন সৃষ্টি করেছেন। আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই। তবে এই দুআ পড়াকে সুন্নাত মনে করলে বেদআত হয়ে যাবে।
নিয়তের আমল সমূহ
* নিয়ত করা ফরয।
* নিয়ত মুখে উচ্চারণ করা উত্তম।
* নিয়ত আরবীতে বলা ভাল। (বেহেশতী জেওর) আরবীতেই নিয়ত করতে হতে-এমন জরুরী মনে করা ঠিক নয়।
হাত উঠানোর আমল সমূহ:
* নিয়ত বাধার সময় কান পর্যন্ত হাত উঠানো সুন্নাতে মোয়াক্কাদা। হাত উঠানোর সময় পুরুষগণ চাদর পরিহিত থাকলে তার মধ্য থেকে হাত বের করবে। মহিলাগণ কাপড়ের মধ্য থেকে হাত বের করবে না । মহিলাগণ সিনা পর্যন্ত হাত উঠাবেন এমনভাবে যেন আঙ্গুলের অগ্রভাগ কাঁধ পর্যন্ত উঠে ।
* পুরুষ মহিলা উভয়ের জন্য হাতের তালু আঙ্গুলের পেটসহ কেবলামুখী রাখা (উপর দিকে নয়) সুন্নাত।
* হাতের আঙ্গুল সমূহকে মিলাবেনা বরং আঙ্গুল সমূহের মাঝে স্বাভাবিক ফাক থাকবে, এটাই সুন্নাত।
* পুরুষের জন্য দুই বৃদ্ধ আঙ্গুলের অগ্রভাগ কানের লতির সাথে লাগানো মোস্তাহাব।
তাকবীরে তাহরীমা বলা ও হাত নামানোর আমল সমূহ:
* আল্লাহু আকবার - বলে নিয়ত বাঁধবে। এই তাকবীর ফরয। এটাকে তাকবীরে তাহরীমা বলে * আল্লাহু এবং আকবার শব্দ দুটোর আলিফ জোর দিয়ে উচ্চারণ করা এবং হা' কে সামান্য টানের আভাস দিয়ে উচ্চারণ করা উত্তম।
* হাত উঠিয়ে কানের লতির সাথে বৃদ্ধ আঙ্গুল স্পর্শ করার পর আল্লাহু আকবার বলতে শুরু করা উত্তম। হাত উঠাতে উঠাতে বা হাত উঠানো শুরু করার পূর্বেও আল্লাহু আকবার বলে নেয়া যায়।
* হাত বাধা সম্পন্ন হবে, আল্লাহু আকবার বলাও শেষ হবে-এরূপ করা উত্তম।
* কান থেকে হাত সোজা বাধার দিকে নিয়ে যাবে, হাত সোজা নীচের দিকে ছেড়ে দিবে না বা পেছনের দিকে ঝাড়া দিবে না।
* তাকবীরে তাহরীমা বলার সময় স্বাভাবিক ভাবে সোজা দাঁড়ানো থাকবে-মাথা নীচের দিকে ঝুঁকাবে না।
নিয়তের ক্ষেত্রে প্রচলিত লম্বা চওড়া বাক্য বলা নিষ্প্রয়োজনীয়। ফরযের ক্ষেত্রে শুধু কোন
ওয়াক্তের ফরয তার উল্লেখ এবং সুন্নাত নফলের ক্ষেত্রে শুধু নামাযের উল্লেখ করলেই যথেষ্ট।
হাত বাঁধার আমল সমূহ:
* নাভীর নীচে হাত বাঁধা সুন্নাত (নাভীর পরেও রাখা যায় ।)
* ডান হাতের তালু বাম হাতের পীঠের উপর রাখবে।
*
ডান হাতের বৃদ্ধ ও কনিষ্ঠ আঙ্গুল দিয়ে বাম হাতের কবজি ধরা সুন্নাত।
* ডান হাতের অবশিষ্ট তিন আঙ্গুল বাম হাতের পিঠের উপর স্বাভাবিক ভাবে রাখা থাকবে। (মহিলাগণ সিনার উপর ডান হাতের তালু বাম হাতের পিঠের উপর রেখে নিয়ত বাঁধবে । এটা সুন্নাত ।)
* উভয় হাত পেটের সাথে কিছুটা চেপে ধরে রাখা।
* ছানা পড়া সুন্নাত । ছানা এই যে – সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া
বেহামদিকা ওয়া তা বারাকাসমুকা ওয়া তায়ালা যাদ্দুকা ওয়া লা-ইলাহা গাইরুকা।
সূরা ফাতেহার আমল সমূহ:
* আউযু বিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রজীম পড়া সুন্নাত।
* বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম পড়া সুন্নাত।
* সুরায়ে ফাতেহা পড়া ওয়াজিব।
* সূরা ফাতেহার প্রত্যেক আয়াতে ওয়াকফ করে পড়া উত্তম।
* সূরা ফাতেহার শেষে আমীন পড়া সুন্নাত।
* আমীন আস্তে বলা সুন্নাত।
সূরা/কেরাত মিলানোর আমল সমূহ:
* সূরা/কেরাত মিলানোর পূর্বে বিসমিল্লাহ পড়া মোস্তাহাব।
* তারপর সূরা/কেরাত মিলাননা ওয়াজিব।
* প্রতি পরবর্তী রাকাআতের সূরা/কেরাত তারতীব অনুযায়ী পড়া অর্থাৎ, সামনের থেকে কোন সূরা/কেরাত পড়া পেছন দিক থেকে পড়া। এই তারতীব রক্ষা করা ওয়াজেব। এর বিপরীত করলে নামায মাকরূহ হবে তবে সাজদায়ে সহো ওয়াজিব হবে না।
* অধিক সহীহ মতানুসারে কমপক্ষে এতটুকু শব্দে কেরাত পড়া যেন নিজে শব্দ শুনতে পায়। তাকবীর ইত্যাদির ক্ষেত্রেও এ মাসআলা প্রযোজ্য।
* সূরা ইজা ঝুল ঝিলাত থেকে সূরা নাছ পর্যন্ত এই ছোট সূরা গুলোর ক্ষেত্রে পূর্ববর্তী রাকআতে যেটা পড়া হয়েছে পরবর্তী রাকআতে একটা বাদ দিয়ে তার পরেরটা পড়বে না। ফরয এবং ওয়াজিব নামাযে এরূপ করা মাকরূহ। বাদ দিয়ে পড়তে হলে কম পক্ষে দুটি বাদ দিয়ে
তার পরেরটা পড়া যাবে।
* সূরা/কেরাত শেষ করার পর একটু বিরতি যোগে দম নিয়ে রুকুতে যাওয়ার তাকবীর বলা সুন্নাত।
রুকুতে যাওয়ার আমল সমূহ:
* রুকুতে যাওয়ার সময় আল্লাহু আকবার বলা সুন্নাত।
* আল্লাহু আকবার বলে হাত রুকুতে হাটুর দিকে নিয়ে যাবে। হাত সোজা ছেড়ে দিবেনা বা পেছনের দিকে ঝাড়া দিবে না।
* রুকুর জন্য ঝোঁকার সাথে সাথে আল্লাহু আকবার বলা শুরু করবে এবং রুকুতে সোজা স্থির হওয়ার সাথে বলা শেষ হবে। এটা সুন্নাত তরীকা।
রুকুর আমল সমূহ:
* রুকুতে পিঠ বরাবর রাখা সুন্নাত।
* কোমর এবং মাথা এক বরাবর রাখা-কোনটা উঁচু নীচু না রাখা সুন্নাত।
* পায়ের নলা সোজা খাড়া রাখা সুন্নাত- সামনে বা পেছনে ঝুকাবে না।
* পাজর থেকে বাহুকে পৃথক রাখবে।
* রুকুতে উভয় হাতের আঙ্গুল সমূহ ফাক করে রাখা সুন্নাত।
* শক্তভাবে হাটু ধরা সুন্নাত।
* উভয় হাতের কনুই সোজা রাখবে- ভাজ করে রাখবে না। মহিলাগণ উভয় হাতের আঙ্গুল সমূহ মিলিত রেখে হাটুর উপর হাত রাখবে, হাটু ধরবে না এবং হাতের বাহু পাজরের সাথে মিলিত রেখে অল্প ঝুঁকে রুকু করবে এবং হাটু সামনের দিকে ঝুঁকিয়ে রাখবে আর পিঠ সামান্য বাঁকা রাখবে।
* রুকূতে নজর উভয় পায়ের পাতা বা পায়ের আঙ্গুলের প্রতি নিবদ্ধ রাখা আদব ।
* পুরুষগণ রুকুতে দুই টাখনুকে দাড়ানোর অবস্থার মত পৃথক রাখবে এবং নারীগণ মিলিয়ে রাখবে ।
*
রুকুতে সুবহানা রব্বিয়াল আযীম পড়া সুন্নাত। এই তাসবীহ তিন/পঁচ/ সাত এরূপ বেজোড় সংখ্যায় পড়া সুন্নত।
রুকু থেকে উঠা এবং সোজা দাড়ানোর আমল সূমহ:
* সামি আল্লাহুলিমান হামিদা -(অর্থাৎ, আল্লাহ শােনেন, যে তাঁর প্রশংসা| করে ।) বলে রুকু থেকে উঠা সুন্নাত ।
* সোজা হওয়ার সাথে হামীদা 'বলা শেষ হবে। এটা সুন্নাত ।
* রুকুর থেকে সোজা স্থির হয়ে দাড়ানো ওয়াজিব।
* সোজা হয়ে দাঁড়ানোর পর রব্বানা লাকাল হামদ, (অর্থাৎ, হে আমাদের রব! সকল প্রশংসা তোমার জন্য।) বলা সুন্নাত।
সাজদায় যাওয়ার আমলসমূহ:
*
সাজদায় যাওয়ার সময় আল্লাহু আকবার বলা সুন্নাত।
* সাজদায় জমীনে কপাল লাগানোর সাথে আকবার' বলা শেষ করবে। এটা সুন্নাত তরীকা।
* সাজদায় যাওয়ার সময় প্রথমে উভয় হাটু একত্রে, তারপর উভয় হাত একত্রে, তার পর নাক এবং তারপর কপাল জমীনে রাখবে। এই তারতীব সুন্নাত।
* হাটু জমীনে লাগার পূর্বে কোমর মাথা সামনের দিকে ঝুঁকানো মাকরূহ বরং কোমর সোজা রাখবে।
* সাজদায় যাওয়ার সময় হাটুর উপর হাত দিয়ে ভর না করা, এতে হাটু মাটিতে লাগার পূর্বেই কোমর মাথা সামনের দিকে ঝুঁকে যায় । তদুপরি অনেকে এটাকে সুন্নাত মনে করে বিধায় এ থেকে বিরত থাকা উচিত।
* সাজদায় যাওয়ার সময় কাপড় নাড়াচাড়া বা টানাটানি করবে না। এরূপ করা মাকরূহ।
১. আমার মহা রবের পবিত্রতা বর্ণনা করছি।
২. রব্বানা ওয়া লাকাল হামদ- বলা আরও উত্তম। তার চেয়ে উত্তম আল্লাহুম্মা রব্বানা লাকাল হামদ বলা এবং তার চেয়েও উত্তম হল আল্লাহুম্মা রব্বানা ওয়া লাকাল হামদ বলা ।
৩. ওযরের সময় হাটুর পূর্বে হাত রাখতে হলে প্রথমে ডান হাত, তারপর বাম হাত, তারপর উভয় হাটু একত্রে রাখবে।
প্রথম সাজদার আমল সমূহ:
*
সাজদায় উভয় হাতের মাঝে চেহারার চওড়া পরিমাণ ফাঁক রাখবে।
* উভয় হাতের সমস্ত আঙ্গুল খুব মিলিয়ে রাখা সুন্নাত।
* উভয় হাতের সমস্ত আঙ্গুলের অগ্রভাগ কেবলামুখী রাখা সুন্নাত।
* উভয় হাতের মধ্যখানে বৃদ্ধ আঙ্গুলদ্বয়ের নখ বরাবর নাক রাখবে। ৎ
* নজর কের উপর রাখা আদব ।
* দুই পায়ের টাখনু কাছাকাছি রাখবে-মিলাবে না।
* উভয় পা খাড়া রাখবে।
* পায়ের আঙ্গুল সমূহ জমীনের সাথে চেপে ধরে যথা সম্ভব আঙ্গুলের অগ্রভাগ কেবলামুখী করে রাখবে।
* কপালের অধিকাংশ ও নাক জমীনের সংঙ্গে লাগিয়ে রাখা ওয়াজিব।
* পুরুষগণ পেট রান থেকে, বাহু পাজর থেকে এবং কনুই জমীন থেকে পৃথক রাখবে।
* মহিলাগণ উভয় পা ডান দিকে বের করে দিবে এবং পেট দুই রানের সঙ্গে এবং বাহু পাজরের সঙ্গে মিলিয়ে ও কনুই পর্যন্ত হাত জমীনের সঙ্গে লাগিয়ে খুব চেপে সাজদা করবে ।
* সাজদায় সুবহানা রব্বি য়াল আলা (আমার মহান রবের পবিত্রতা বর্ণনা করছি) পড়া সুন্নাত। এই তাসবীহ তিন/পাচ/সাত-এরূপ বেজোড় সংখ্যায় পড়া সুন্নাত।
* আল্লাহু আকবার বলে সাজদা থেকে উঠা সুন্নাত।
* প্রথমে কপাল, তারপর নাক, তারপর হাত জমীন থেকে উঠানো সুন্নাত।
* সোজা হয়ে বসার সাথে সাথে আকবার বলা শেষ করবে। এটাই সুন্নাত তরীকা ।
* বাম পা বিছিয়ে তার উপর বসা সুন্নাত। মহিলাগণ দুই নিতম্বের উপর বসবে।
* পুরুষের জন্য ডান পা সোজা খাড়া রাখা সুন্নাত।
* ডান পা জমীনের সঙ্গে চেপে ধরে যথা সম্ভব ডান পায়ের আঙ্গুলগুলো কেবলামুখী করে রাখা সুন্নাত। মহিলাগণ উভয় পা ডান দিকে বের করে দিবে।
সাজদাতে টাখনু মিলানো বা পৃথক রাখা সম্পর্কে হাদীসে উভয় রকমের বর্ণনা পাওয়া যায় । এতদ্বয়ের মাঝে সময় হল কাছাকাছি রাখবে। গ্রন্থে কয়েকটি যুক্তির ভিত্তিতে এটাকেই প্রাধান্য দেয়া হয়েছে।
বসার আমল সমূহ:
* বসার সময় হাতের আঙ্গুলগুলার মাঝে সামান্য ফাঁক রাখা মোস্তাহাব। মহিলাগণ আঙ্গুল মিলিয়ে রাখবে।
* হাতের আঙ্গুগুলো সোজা কেবলামুখী করে রাখা মোস্তাহাব।
* হাতের আঙ্গুলগুলোর অগ্রভাগ হাটুর কিনারা বরাবর রাখবে।
* বসার সময় নজর কোলের উপর নিবদ্ধ রাখা আদব ।
* দুই সাজদার মাঝখানে স্থির হয়ে বসা ওয়াজিব।
* দুই সাজদার মাঝখানে নিম্নোক্ত দুআ পড়া মোস্তাহাব। দোয়া- আল্লাহুম্মাগ ফিরলী
ওয়ার হামনী ওয়া দিনী ওয়া ফিনী।
দ্বিতীয় সাজদায় যাওয়ার এবং সাজদার মধ্যে উপরোক্ত আমল সমূহ (১৮টা) করা।
দ্বিতীয় সাজদা থেকে দাঁড়ানোর আমল সমূহ:
* আল্লাহু আকবার বলে উঠা সুন্নাত।
* প্রথমে কপাল, তারপর নাক, তারপর হাত এবং তারপর হাটু জমীন থেকে উঠানো।
* ২য় সাজদা থেকে উঠে বসা ছাড়াই দাঁড়িয়ে যাওয়া সুন্নাত ।
* হাটুর উপর হাতে ভর করে উঠা মোস্তাহাব।
* সোজা হয়ে দাড়ানোর সাথে আকবার শব্দের উচ্চারণ শেষ করবে।
বৈঠকের আমল সমূহ:
* তাশাহহুদ পড়া ওয়াজিব।
* তাশাহহুদ -এর মধ্যে আশহাদু আন বলতে বলতে হাতের হলকা বাঁধা অর্থাৎ, ডান হাতের বৃদ্ধ আঙ্গুলের অগ্রভাগ এবং মধ্যমার অগ্রভাগকে মিলানো এবং কনিষ্ঠ ও অনামিকাকে হাতের তালুর সঙ্গে মিলানো। এটা মোস্তাহাব। ‘লা ইলাহা' বলতে বলতে শাহাদাত অঙ্গুলিকে
উপর দিকে উঠানো, এতটুকু উঠানো যেন তার অগ্রভাগ কেবলামুখী হয়ে যায়। “ইল্লাল্লাহ' বলার সময় নীচের দিকে নামানো তবে বৈঠকের শেষ পর্যন্ত রানের সাথে না মিলিয়ে উঁচু করে রাখা নিয়ম ।
* দুরূদ শরীফ পড়া সুন্নাত।
* দুআয়ে মাছুরা পড়া মোস্তাহাব।
সালামের আমল সমূহ:
* আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ বলে উভয় দিকে সালাম ফিরানো ওয়াজিব।
* সালাম ফিরানোর সময় নজর কাঁধের উপর রাখা মোস্তাহাব।
* ডান দিকে সালাম ফিরানোর সময় ডান দিকের ফিরিশতাকে সালাম করার নিয়ত করবে। অনুরূপ বাম দিকে সালাম ফিরানোর সময় বাম দিকের ফিরিশতাকে সালামের নিয়ত করবে।
* উভয় সালাম চেহারা কেবলামুখী থাকা অবস্থায় থেকে শুরু করবে এবং কাঁধে নজর করে শেষ করবে।
* দ্বিতীয় সালামকে কম দীর্ঘ করা এবং আওয়াজ নীচু করা সুন্নাত।
* সালামের সময় ঘাড় এতটুকু ফিরানো যেন (পিছনে কেউ থাকলে) তার চেহারার উক্ত পাশ দেখতে পারে।
তিন/চার রাকআত নামাযের অতিরিক্ত আমল সমূহ :
* তিন/চার রাকআত বিশিষ্ট নামায হলে দ্বিতীয় রাকআতের বৈঠকে শুধু তাশাহহুদ পড়ে তৃতীয় রাকআতের জন্য আল্লাহু আকবার বলে উঠবে। আর সুন্নাতে গায়র মোয়াক্কাদা বা নফল নামায হলে প্রথম বৈঠকে দুরূদ এবং দুআয়ে মাছুরাও পড়ে তারপর উঠা উত্তম। উল্লেখ্য যে, এ নিয়ম অনুযায়ী প্রথম বৈঠকে দুরূদ এবং দুআয়ে মাছুরা পড়ে উঠলে তৃতীয় রাকআতে সানা এবং সূরা ফাতেহার পূর্বে আউযুবিল্লাহ পড়াও উত্তম।
* তিন/চার রাকআত বিশিষ্ট নামায ফরয হলে তৃতীয়/চতুর্থ রাকআতে শুধু সূরা ফাতেহা পড়া উত্তম। আর ফরয ব্যতীত অন্যান্য নামাযে ৩য়/৪র্থ রাকআতে সূরা/কেরাত মিলানো ওয়াজিব।
* শেষ বৈঠকে তাশাহহুদের পর দুরূদ পড়া সুন্নাত এবং দুআয়ে মাছুরা পড়া মোস্তাহাব।
মুক্তাদী-র জন্য খাস মাসায়েল :
* মুক্তাদী ইমামের পেছনে এক্তেদা করার নিয়ত করবে। এক্তেদার নিয়ত ব্যতীত মুক্তাদীর নামায সহীহ হয় না ।
* ইমামের তাকবীরে তাহরীমা-“আল্লাহু আকবার' শেষ হওয়ার পূর্বে মুক্তাদীর তাকবীর যেন শেষ না হয়।
* ইমামের তাকবীরে তাহরীমা শেষ হওয়ার পর সাথে সাথে মুক্তাদীর তাকবীরে তাহরীমা বলা উত্তম।
* ইমাম সূরা/কেরাত শুরু করলে মুক্তাদী ছানা পড়বে না।
* মুক্তাদী ইমামের পেছনে সূরা ফাতেহা বা কেরাত কোনটা পাঠ করবে না। সূরা ফাতেহার পূর্বে শুরুতে পঠিতব্য বিসমিল্লাহও পাঠ করবে না।
*
মুক্তাদী সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ - না বলে তদস্থলে রব্বানা লাকাল হামদ, বলতে বলতে উঠবে।
* সালাম ফিরানোর সময় ইমামের আসসালামু বলার পূর্বে মুক্তাদীর আসসালামু বলা যেন শেষ না হয়।
* ইমামের সালাম ফিরানোর পরপর সাথে সাথে মুক্তাদীর সালাম ফিরানো উত্তম।
* ইমাম ডান দিকে থাকলে ডান দিকে সালাম ফিরানোর সময় তার নিয়তও করবে, বাম দিকে থাকলে বাম সালামে আর সোজা বরাবর থাকলে উভয় সালামেই তার নিয়ত করবে।
মাসবুকের জন্য খাস মাসায়েল :
(যে মুক্তাদী ইমামের সাথে সব রাকআতে শরীক হতে পারেনি, তাকে মাছবূক বলা হয়)
* ইমামের শেষ বৈঠকে মাছবূক তাশাহহুদ এমন ধীরে ধীরে পড়বে, যেন তার তাশাহহুদ শেষ হতে হতে ইমামের দুরূদ ও দুআয়ে মাছুরা শেষ হয়ে যায়। তবে আগেই তাশাহহুদ শেষ হয়ে গেলে তাশাহহুদের শেষ বাক্যটা (অর্থাৎ কালেমায়ে শাহাদাত) বারবার আওড়াতে পারে বা চুপচাপ বসে থাকতে পারে বা তাশাহ্হুদ পুনরায় পড়তে পারে।
* ইমাম সাজদায়ে সহো দিলে মাছবূকও সাজদায়ে সাহো করবে, তবে সাজদায়ে সহো-র সালাম ফিরাবে না ।
* মাছবূক ইমামের সাথে শেষ সালাম ফিরাবে না। তবে ভুলে ফিরিয়ে ফেললে সাজদায়ে সহো দিবে।
* ইমাম উভয় দিকে সালাম ফিরানোর সামান্য পর মাছবূক অবশিষ্ট নামাজ পড়ার জন্য আল্লাহু আকবার বলে উঠে দাঁড়াবে। ইমামের এক সালাম ফিরানোর পর মুক্তাদীর উঠে দাঁড়ানো সুন্নাতের খেলাফ ।
* মাছবূক অবশিষ্ট নামায পড়ার জন্য উঠে ছানা, আউযুবিল্লাহ ও বিসমিল্লাহ পড়বে। প্রথমে কেরাত মিলানোর রাকআত/রাকআতগুলো, তারপর কেরাত বিহীন রাকআত/ রাকআতগুলো পড়বে। ইমাম যে সূরা/কেরাত পড়েছেন তার সাথে তারতীব রক্ষা করা মাছবুকের জন্য জরুরী নয়।
মাছবুক এক রাকআত ছুটে গেলে তা কিভাবে পড়বে :
ইমাম উভয় ছালাম ফিরানোর পর মাছবূক আল্লাহু আকবার বলে উঠবে, ছানা পড়বে, আউযুবিল্লাহ বিসমিল্লাহ সহ সূরা ফাতেহা পড়বে, তারপর বিছমিল্লাহ সহ সূরা মিলাবে এবং রুকূ সাজদা ও বৈঠক করে সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করবে।
মাছবূক দুই রাকআত ছুটে গেলে তা কিভাবে পড়বে :
ইমাম উভয় ছালাম ফিরানোর পর মাছবুক আল্লাহু আকবার বলে উঠবে এবং পূর্ব বর্ণিত নিয়মে প্রথম রাকআত আদায় করবে। তিন রাকাআত বিশিষ্ট নামাজ হলে বৈঠক করে (বৈঠকে শুধু তাশাহহুদ পড়তে হবে। আর চার রাকআত বিশিষ্ট নামাজ হলে বৈঠক না করেই দ্বিতীয় রাকআতের জন্য উঠবে। এ রাকআতে ছানা ব্যতীত এবং শুধু বিছমিল্লাহ সহ সূরা ফাতেহা ও সূরা/কেরাত মিলিয়ে রুকূ সাজদা ও বৈঠক করে সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করবে ।
মাছবূক তিন রাকআত ছুটে গেলে তা কিভাবে পড়বে :
মাছবূক যদি ইমামের সাথে এক রাকআত পায় এবং তিন রাকআত না পায়, তাহলে ইমামের উভয় সালাম ফিরানোর পর উঠে পূর্ববর্তী নিয়মে প্রথম রাকআত পড়বে এবং বৈঠক করে দ্বিতীয় রাকআতের জন্য উঠবে। দ্বিতীয় রাকআতে সূরা কিরাত মিলাতে হবে এবং বৈঠক না করেই তৃতীয় রাকআতের জন্য উঠবে। তৃতীয় রাকআতে সূরা ফাতেহার সাথে সূরা কিরাত মিলাতে হবে না ।
মছিবূক কোন রাকআত না পেলে কিভাবে পড়বে :
মাছবূক যদি কোন রাকআত না পায় শুধু শেষ বৈঠকে এসে শরীক হয়, তাহলে ইমামের উভয় সালাম ফিরানোর পর উঠে একাকী যেভাবে নামায পড়া হয় সেভাবে পূর্ণ নামায আদায় করবে।
No comments