ইবাদত কত প্রকার ও কি কি বা ইবাদতের প্রকারভেদ । Islamic Media Blog

ইবাদত
“আমি জিন ও ইনসানকে আমার ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছি।” (আল কুরআন)
কয়েকটি পরিভাষার ব্যাখ্যা :
* ফরয : যা অকাট্য দলীল দ্বারা প্রমাণিত এবং যা আল্লাহর পক্ষ থেকে সুনিশ্চিতরূপে করার জন্য আদেশ দেয়া হয়েছে তাকে ফরয বলে। যেমন কালেমা, নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত, জেহাদ, ইলমে দ্বীন শিক্ষা করা, সত্য কথা বলা ইত্যাদি। ফরয দুই প্রকার (এক) ফরযে আইন'- যে কাজ প্রত্যেক বালেগ বুদ্ধিমান নর-নারীর উপর সমান ভাবে ফরয। যেমন- পাঁচ ওয়াক্তের নামায, আবশ্যক পরিমাণ ইলমে দ্বীন শিক্ষা করা ইত্যাদি। (দুই) ফরযে কেফায়া'- যে কাজ কতক লোকে পালন করলে সকলেই গোনাহ থেকে বেঁচে যায়; কিন্তু কেউ পালন না করলে সকলেই ফরয তরকের জন্য পাপী হয়ে যায়। যেমন- জানাযার নামায পড়া, মৃত ব্যক্তির কাফন-দাফন করা, আবশ্যক পরিমাণ অপেক্ষা অতিরিক্ত ইলমে দ্বীন শিক্ষা করা ইত্যাদি।
* ওয়াজিব : ওয়াজিব কাজ ফরযের ন্যায় অবশ্যকরণীয়। তবে পার্থক্য এতটুকু যে, ফরয অস্বীকার করলে কাফের হয়ে যায় কিন্তু ওয়াজিব অস্বীকার করলে কাফের হয় না, তবে ফাসেক হয়ে যায় । যেমন বেতরের নামায পড়া, কুরবানী করা, ফেৎরা দেয়া ইতাদি।।
* সুন্নাত : যে কাজ রাসূল (সঃ) ও তাঁর সাহাবীগণ করেছেন তাকে সুন্নাত বলে। সুন্নাত দুই প্রকার (এক) ‘সুন্নাতে মুয়াক্কাদা'- যে কাজ রাসূল (সঃ) ও সাহাবীগণ সব সময় করেছেন, বিনা ওজরে কখনও ছাড়েননি। যেমন আযান, ইকামত, খতনা, বিবাহ ইত্যাদি । সুন্নাতে মুয়াক্কাদা ওয়াজিবেরই মত গুরুত্বপূর্ণ, বিনা ওজরে তা ছাড়লে বা ছাড়ার অভ্যাস করলে পাপী হতে হয়। তবে ওজর বশতঃ কখনও ছুটে গেলে কাযা করতে হয় না। (দুই) ‘সুন্নাতে গায়র মুয়াক্কাদা'- যা রাসূল (সঃ) ও সাহাবীগণ করেছেন তবে ওযর ছাড়াও কোন কোন সময় তরক করেছেন। একে ‘সুন্নাতে যায়েদা’ বা ‘সুন্নতে আদিয়া' - ও বলে। এটা করলে ছওয়াব আছে কিন্তু না করলে আযাব হবে না।
* মুস্তাহছান : যাকে কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে পূর্ববর্তী উলামায়ে কেরাম ভাল মনে করেছেন।
* মোস্তাহাব : যা রাসূল (সঃ) ও সাহাবীগণ করেছেন কিন্তু সব সময় করেননি-কোন কোন সময় করেছেন। এটা করলে ছওয়াব আছে না করলে পাপ নেই । মোস্তাহাবকে ‘নফল এবং মানদূব'ও বলা হয়
* হালাল : শরীয়তের দৃষ্টিতে যেসব বস্তু ব্যবহার করা বৈধ তাকে হালাল বলা হয়। জায়েয ও হালাল সমার্থবোধক ।
* হারাম : হারাম হল ফরযের বিপরীত অর্থাৎ, যা নিষিদ্ধ হওয়াটা অকাট্য দলীল দ্বারা প্রমাণিত। হারামকে হালাল মনে করলে কাফের হয়ে যায় আর বিনা ওজরে হারাম কাজ করলে কাফের হয় না, তবে ফাসেক হয়ে যায়। হারাম কাজ বর্জন করা ফরয। 'না যায়েয ও হারাম’ সমার্থবোধক।
* মাকরূহ তাহরীমী : ওয়াজিবের বিপরীত, যা অস্বীকার করলে কাফের হয় না, তবে ফাসেক হয়ে যায় । বিনা ওজরে মাকরূহ তাহরীমী করাও ফাসেকী ।
* মাকরূহ তানযীহী : যা না করলে ছওয়াব আছে করলে আযাব নেই।
* মোবাহ : যা মানুষের ইচ্ছাধীন, যে ব্যাপারে আল্লাহ মানুষকে করা বা না করার স্বাধীনতা ও এখতিয়ার দিয়ে দিয়েছেন। যেমন মাছ মাংস খাওয়া, পানাহার করা, কৃষি কর্ম করা, ব্যবসা-বাণিজ্য করা, দেশ ভ্রমণ করা ইত্যাদি। তবে মোবাহ কাজের সংগে যদি ভাল নিয়ত সংযুক্ত হয়, তাহলে তা ছওয়াবের কাজ হয়ে যায়। যেমন- পানাহার করল এই নিয়তে যে, এতে শরীর স্বাস্থ্য ভাল থাকবে, তাহলে ইবাদত, ইসলামের খেদমত, জেহাদ ইত্যাদি ভাল ভাবে করা যাবে ইত্যাদি। পক্ষান্তরে- মোবাহ কাজের সঙ্গে খারাপ নিয়ত যুক্ত হলে তা পাপের হয়ে যায়। যেমন- কোথাও ভ্রমনে গেল বেগানা-নারী দর্শনের উদ্দেশ্যে বা না জায়েয কিছু দেখা ও করার জন্য, তাহলে এতে গোনাহ হবে।
No comments