তাইয়াম্মুমের মাসায়েল সম্পর্কে আলোচনা।Islamic Media Blog
![]() |
তাইয়াম্মুমের মাসায়েল সম্পর্কে আলোচনা |
তাইয়াম্মুমের মাসায়েল
(ধারাবাহিকভাবে তাইয়াম্মুমের আমলসমূহ বর্ণনা করা হল)
* পানি না পাওয়ার কারণে যাকে তাইয়াম্মুম করতে হবে পানি পাওয়ার প্রবল ধারণা থাকলে মুস্তাহাব ওয়াক্ত পার হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত অপেক্ষা করা তার জন্য মোস্তাহাব। আর কেউ পানি দেয়ার ওয়াদা করলে অবশ্যই তাকে অপেক্ষা করতে হবে, যদিও ওয়াক্ত শেষ হওয়ার আশংকা হয় ।
* তাইয়াম্মুমের শুরুতে বিসমিল্লাহ বলা সুন্নাত।
* মেসওয়াক করা উযূর ন্যায় তাইয়াম্মুমেরও সুন্নাত।
* নিয়ত করা ফরয। (পবিত্রতা অর্জন করা বা নাপাকী দূর করার নিয়ত করবে। কিম্বা নামায, সাজদায়ে তিলাওয়াত প্রভৃতি এমন মৌলিক ইবাদতের নিয়ত করবে যা পবিত্রতা ব্যতীত সইীহ হয় না)
* নিয়ত মুখেও উচ্চারণ করা উত্তম।বাংলাতে এভাবে বলা যায়
- আমি নাপাকি দূর করার, নামায বৈধ করার এবং আল্লাহ্ তা'আলার নৈকট্য অর্জন করার উদ্দেশ্য তাইয়াম্মুমের নিয়ত করছি।
* নিয়ত করার পর পবিত্র মাটি বা মাটি জাতীয় বস্তু (যার উপর তাইয়াম্মুম করা যায়)-এর উপর উভয় হাতের তালু মারবে।
* হাত মারার সময় আঙ্গুলগুলো খোলা রাখা সুন্নাত।
* হাত মারার পর উভয় হাত ঐ স্থানে রাখা অবস্থায় এক বার সামনের দিকে এক বার পেছনের দিকে নিবে । (এটা সুন্নাত)
* হাত এমনভাবে ঝাড়বে, যেন আলগা ধুলা ঝরে যায়।
* পুরো মুখ ঐ হাত দ্বারা মসেহ করবে। {এটা ফরয)
* দাড়ি খেলাল করা সুন্নাত।
* আবার মাটিতে অনুরূপভাবে হাত মারবে। (আঙ্গুলের মধ্যে ফাঁক রেখে)
* হাত সামনে এবং পেছনের দিকে নিবে । (এটা সুন্নাত)
* এখানেই হাত মসেহের পূর্বেই) উযুর মত উভয় হাতের আঙ্গুল খেলাল করবে। এটা সুন্নাত।
* পূর্বের ন্যায় হাত ঝাড়বে।
* প্রথমে ডান হাত কনুই সহ মসেহ করবে।
* তারপর বাম হাত কনুই সহ মসেহ করবে। (হাত মসেহ করা ফরয)
* মসেহ করার সুন্নাত তরীকা হলঃ বাম হাতের চার আঙ্গুলের পেট (বৃদ্ধ আঙ্গুল ছাড়া) ডান হাতের চার আঙ্গুলের পিঠে রাখবে। তারপর ডান হাতের পিঠের উপর দিয়ে কনুইর দিকে টেনে নিয়ে যাবে। অতঃপর বাম হাতকে উল্টে বাম হাতের তালু এবং বদ্ধ আঙ্গুলের পেট দিয়ে ডান হাতের পেটের দিক থেকে হাত আঙ্গুলের দিকে এমনভাবে টেনে নিয়ে যাবে যেন বাম হাতের বৃদ্ধ আঙ্গুলের পেট ডান হাতের বৃদ্ধ আঙ্গুলের পিঠের উপর দিয়ে চলে যায় । অনুরূপভাবে ভান হাত দিয়ে বাম হাত মসেহ করবে।
* আংটি, চুড়ি ইত্যাদিকে তার স্থান থেকে সরিয়ে এমনভাবে হাত মসেহ করবে যেন সব স্থানে মসেহ করা হয়।
* তাইয়াম্মুমের এই তারতীব রক্ষা করা সুন্নাত।
* তাইয়াম্মুমের মধ্যেও উযুর ন্যায় একের পর এক অঙ্গগুলো লাগাতার (অর্থাৎ, বেশী বিরতি না দিয়ে) করে যাওয়া সুন্নাত।
* তাইয়াম্মুম উযূর ন্যায়, তাই উযূর মধ্যে মুখ ও হাত ধোয়ার যে দুআ পড়া হয়, এমনিভাবে উযুর শেষে যে সব দুআ পড়া হয়, তাইয়াম্মুমের বেলায়ও সেগুলো পড়ার হুকুম একই হবে।
১. হযরত ইমাম আবূ ইউসুফের মতে তাইয়াম্মুমের মধ্যে দাড়ি খেলাল করা সুন্নাত নয়।
২. বিভিন্ন গ্রন্থকার মসেহ করার এই তরীকা হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত বলে দাবী করেছেন, অন্য অনেকে তা অস্বীকার করলেও এরূপ করা সুন্নাত তরীকার খেলাফ হবে বলে মন্তব্য করেননি। তবে যে কোন রূপে পুরো হাত মসেহ করা সম্পন্ন হলেই তাইয়াম্মুমের ফরয আদায় হয়ে যাবে সন্দেহ নেই।
কি কি বস্তু দ্বারা তাইয়াম্মুম করা জায়েয :
পাক মাটি, কংকর, বালি, চুনা, মাটির তৈরী কচা অথবা পাকা ইট, ধুলা-বালি, মাটি, পাথর, ইটের তৈরী দেওয়াল, পাকা বাসন, (তৈল লেগে না থাকলে)। লাকড়ী বা কাপড়ে অথবা অন্য কোন পাক বস্তুতে ধুলাবালি লেগে থাকলে এসব বস্তু দ্বারা তাইয়াম্মুম করা যাবে। (আলমগীরী ও দুররে মুখতার পৃঃ ২৫-২৬)
কোন অপবিত্রতায় তাইয়াম্মুম করা যায় :
উপরে অপ্রকৃত নাপাকীর (নাজাছাতে হুকমী তথা বে-উষ্ণু বে-গোসল হওয়ার অবস্থা) বর্ণনা করা হয়েছে। ছোট বড় যে কোন অপ্রকৃত নাপাকী অবস্থায় তাইয়াম্মুম দ্বারা পবিত্রতা অর্জন করা যায়। তবে প্রকৃত নাপাকীর বেলায় তাইয়াম্মুম করলে যথেষ্ট হবে না বরং ধৌত করতে হবে।
উল্লেখ্য যে, উযু ও গোসলের জন্য এক রকম তাইয়াম্মুমই করতে হবে। এক তাইয়াম্মুমই উভয়ের জন্য যথেষ্ট হবে।
কখন তাইয়াম্মুম করতে হবে : নিম্নলিখিত কারণগুলো ব্যতীত তাইয়াম্মুম জায়েয নয়।
১. পানি এক মাইল অথবা তদুর্ধ অথবা এর চেয়েও দূর হতে হবে ।
২. পানির কূপ আছে, কিন্তু পানি উঠাবার কোন ব্যবস্থা না থাকলে।
৩. পানির নিকট কোন ক্ষতিকর প্রাণী অথবা কোন শত্রু থাকলে এবং কাছে গেলে কোন বিপদের আশংকা থাকলে।
৪. রেলগাড়ী, উড়োজাহাজ অথবা মোটর গাড়ীতে আরোহণ অবস্থায় পানি না পাওয়া গেলে অথবা উযু করার সুযোগ না থাকলে বা উযু করতে গেলে গাড়ী ছেড়ে দেবার ভয় থাকলে। তবে রেলগাড়ী বা মোটরে তাইয়াম্মুমের জন্য শর্ত হল (এক) রেলগাড়ীর অন্য কোন ডাব্বায় (বগিতে) পানি নেই (দুই) পথিমধ্যে এক মাইলের (১.৮৩ কিঃ)-এর মধ্যে পানি অর্জন করা যাবে
এরূপ জানা নেই।
৫. পানি ব্যবহার করলে রোগ বৃদ্ধি অথবা রোগ সৃষ্টি অথবা স্বাস্থ্যের উপর প্রতিক্রিয়া সৃষ্টির ভয় হলে । অবশ্য এসব ব্যাপারে অনর্থক সন্দেহ করে তাইয়াম্মুম না করা চাই। তবে রোগ বৃদ্ধি পাবার অথবা রোগ সৃষ্টি হওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত হলে, যেমন সর্দি, কাশিতে আক্রান্ত লোক শীতকালে ঠাণ্ডা পানি ব্যবহার করলে ক্ষতি হয়, এমতাবস্থায় গরম পানি দিয়ে গোসল অথবী উযূ করা দরকার । গরম পানি সংগ্রহ করতে না পারলে অথবা গরম পানি ব্যবহার করলেও ক্ষতির আশংকা হলে তাইয়াম্মুম করবে।
৬. অল্প পানি থাকায় উযু করলে পিপাসায় কষ্ট করতে হবে অথবা খাবার পাক করতে অসুবিধার সম্ভাবনা আছে।
৭. পানি আছে, কিন্তু নিজে উঠে গিয়ে পানি আনতে সক্ষম নয়, আর পানি এনে দেবার জন্য অন্য লোকও না পাওয়া যায়।
৮. যে নামাযের কাযা হয় না, উযু অথবা গোসল করতে গেলে এমন নামায ছুটে যাওয়ার আশংকা দেখা দিলে । যেমন- দু ঈদের নামায, জানাযার নামায । এগুলোতে উযূ ব্যতীত তায়াম্মুম করা যায় । (ইসলামী ফেকাহ, আহছানুল ফাতাওয়া এবং আলমগীৱী)।
উল্লেখ্য, কোন লোকের গোসলের প্রয়োজন, কিন্তু গোসল করলে ক্ষতির আশংকা রয়েছে, উযু করলে কোন ক্ষতি হবে না, তখন সে গোসলের জন্য তাইয়াম্মুম করে নিবে এবং প্রত্যেক নামাযের জন্য নূতন করে উযু করে নামায পড়বে। পানির পরিমাণ যদি অল্প হয় ও মাত্র একবার করে মুখ হাত ও পা ধৌত করা যায়, এমতাবস্থায় তায়াম্মুম করবে না- উযুর অংগগুলো একবার করে ধৌত করলেই হবে, উযূর সুন্নাত অর্থাৎ কুলি করা ও নাকে পানি দেওয়া ছেড়ে দিতে হবে। তাইয়াম্মুম করে নামায আদায় করার পর কোন লোক জানতে পারল যে পানি নিকটেই আছে, তখন তাকে দ্বিতীয়বার নামায পড়তে হবে না। পানি পাওয়ার জন্য চেষ্টা করে থাকলে তখন এ হুকুম প্রযোজ্য হবে নতুবা উযূ করে দ্বিতীয়বার নামায পড়তে হবে। নামাযের শেষ ওয়াক্তে পানি পাওয়ার সম্ভাবনা থাকলে শেষ ওয়াক্তেই নামায পড়া মুস্তাহাব। যেমন- রেলগাড়ী অথবা মোটরে আরোহণ করার পর জানতে পারল যে, নামাযের শেষ ওয়াক্তে রেলগাড়ী অথবা মোটর গাড়ী যথাস্থানে পৌঁছে যাবে যেখানে পানি আছে, তখন বিলম্ব করেই নামায পড়বে । তবে গাড়ী পৌছার ব্যাপারে সন্দেহ হলে তাইয়াম্মুম করেই নামায পড়বে।
কোন লোক পানি অনুসন্ধান করে তাইয়াম্মুম করে নামায আদায় করল, অথচ নামাযের সময় থাকতেই পানি পাওয়া গেল, তখন তাকে দ্বিতীয়বার নামায পড়তে হবে না। রেলগাড়ীতে বা উড়োজাহাজে ভ্রমণ করলে মাটি ও পানি না পাওয়া গেলে উযু ও তাইয়াম্মুম ব্যতীত নামায পড়ে নিবে অর্থাৎ, নামাযের নিয়ত ছাড়া শুধু নামাযের মত উঠা-বসা ইত্যাদি করবে। এমনিভাবে কোন লোক জেলখানায় থাকাকালীন পানি ও মাটি না পেলে, উযূ ও তাইয়াম্মুমবিহীন অনুরূপভাবে নামাযের ন্যায় করবে। তবে উভয় অবস্থায় পানি পাওয়ার পর দ্বিতীয়বার নামায পড়তে হবে। মানুষের সৃষ্ট কোন অপারগতায় কেউ উপনীত হলে এর হুকুমও পূর্ববৎ। যেমন- কোন লোকের, জেলখানায় থাকা অবস্থায় অন্য কেউ তার উযূর পানি বন্ধ করে দেয়, তখন সে উযুবিহীন নামায পড়বে।
কোন্ কোন্ কারণে তাইয়াম্মুম নষ্ট হয় :
১. যে যে কারণে উযু নষ্ট হয় তাইয়াম্মুমও ঐসব কারণে ভঙ্গ হয়।
২. যে সমস্ত কারণে গোসল ফরয হয় ঐ সমস্ত কারণে তাইয়াম্মুম নষ্ট হয়।
৩. যেসব কারণে তায়াম্মুম করা হয়েছিল, ঐসব কারণ রহিত হয়ে গেলে তাইয়াম্মুম ভংগ হয়ে যাবে ।
৪. পানি পাওয়ার পর তাইয়াম্মুম ভঙ্গ হয়ে যায় ।
No comments