হায়েয ও নিফাসের সংজ্ঞা এবং এ গুলোর আহকাম সমূহ।Islamic Media Blog
হায়েয ও নিফাসের বর্ণনা
হায়েয কাকে বলে : প্রতি মাসে বালেগা মেয়েদের যৌনাঙ্গ দিয়ে স্বাভাবিকভাবে যে রক্তস্রাব হয়, তাকে হায়েয বলে। কুরআন ও হাদীসে এই রক্তকে নাপাক বলা হয়েছে।
হায়েযের সময়সীমা : হায়েযের সময়কাল কমপক্ষে তিন দিন তিন রাত।সর্বোচ্চ সময় দশ দিন দশ রাত। কোন স্ত্রীলোকের তিন দিন তিন রাতের কম অথবা দশ দিন দশ রাতের অধিক রক্তস্রাব হলে তখন হায়েযের রক্ত বলে গণ্য হবে না, তাকে ইস্তেহাযা বলা হবে ।
হায়েযের মাসায়েল :
* হায়েযের সময়সীমার মধ্যে লাল, হলদে ও মেটে যে কোন প্রকার রং-এর রক্তকে হায়েযের রক্ত বলা হয়।
* সাধারণতঃ নয় বৎসরের পূর্বে এ রক্ত দেখা দেয় না ! তৎপূর্বে এ ধরনের রক্ত দেখা দিলে তা হায়েযের রক্ত না হয়ে বরং ইস্তেহাযার রক্ত হিসেবে গণ্য হবে।
* কোন স্ত্রীলোকের সাধারণভাবে প্রত্যেক মাসে তিনদিন রক্তস্রাব হয় তার হায়েযের সময় সীমা তিনদিন ধরে নিতে হবে, এটাই তার অভ্যাস । কোন মাসে তার সাতদিন রক্তস্রাব হলে এও হায়েয মনে করতে হবে, কেননা হায়েযের সর্বোচ্চ সীমা দশ দিন। তবে পরবর্তী মাসগুলোতে তার রক্তস্রাব দশদিনের বেশী হলে যেমন- বার দিন অথবা পানের দিন, তখন পূর্ববর্তী মাসে যে কয়দিন রক্ত এসেছিল ঐদিনগুলো হায়েয হিসেবে পরিগণিত হবে। অবশিষ্ট দিনগুলোকে ইস্তেহাযা ধরে নিতে হবে ।
* তদ্রুপ যে স্ত্রীলোকের হায়েযের অভ্যাস হলো তিন দিন, কিন্তু একমাসে তার চার দিন স্রাব হলো। তার পরবর্তী মাসে পনের দিন স্রাব হলো। এমতাবস্থায় যেহেতু এক মাসে তার চার দিন রক্ত এসেছিল, সে জন্য তার অভ্যাস চার দিনই মনে করে নিতে হবে। অবশিষ্ট দিনগুলোর নামায কাযা করতে হবে। তবে এ কাযা আদায় করার জন্য দশ দিন বিলম্ব করতে হবে। কেননা দশ দিন পর্যন্ত অভ্যাস পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু দশ দিন চলে যাবার পর পরিষ্কার ধরে নিতে হবে যে, চার দিনের চেয়ে যতগুলো দিন বেশী রক্তস্রাব হয়েছে সেগুলো ইস্তেহাযার রক্ত। আর যে মাসে তার আট দিন অথবা নয় দিন অথবা দশ দিন রক্তস্রাব হয়, তখন পূর্ববর্তী অভ্যাস ধর্তব্য হবে না। অবশ্য দশ দিনের বেশী রক্তস্রাব হলে ঐ চার দিনই তার মনে রাখতে হবে।
সারকথা এই যে, দশ দিন পার হয়ে গেলে অভ্যাসের অতিরিক্ত দিনগুলোর রক্তস্রাবকে নিঃসন্দেহে ইস্তেহাযা মনে করতে হবে। কিন্তু দশ দিনের মধ্যে রক্তস্রাবের অভ্যাস সর্বদা পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যেমন, সর্বদা চার দিন রক্তস্রাব হতো, মুহররম মাসে পাঁচ দিন আসলো, আবার সফর মাসে বার দিন আসলো, তখন ঐ পাঁচ দিনই তার অভ্যাস মনে করতে হবে। কিন্তু সফর মাসে নয়দিন এসে থাকলে মনে করতে হবে যে, তার অভ্যাস পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে।
নিফাস কাকে বলে : সন্তান প্রসব হওয়ার পর স্ত্রীলোকের যে রক্তস্রাব হয় একে নিফাস বলে।
নিফাসের সময়সীমা : নিফাসের সময়সীমা সর্বোচ্চ চল্লিশ দিন। কমের কোন সীমা নেই।
নিফাসের মাসায়েল : চল্লিশ দিনের কম সময়ের মধ্যে রক্তস্রাব বন্ধ হয়ে গেলে গোসল করে নিতে হবে। নিজকে পাক মনে করে নামায পড়া আরম্ভ করতে হবে । চল্লিশ দিনের বেশী রক্তপাত হলে চল্লিশ দিনের পর গোসল করে নিতে হবে । চল্লিশ দিনের অতিরিক্ত দিনগুলোর রক্তস্রাব ইস্তেহাযা হিসেবে ধরে নিতে হবে।
নাপাকীর বর্ণনা, শরীর, কাঁপড়, আসবাব, জমিন, খাদ্যদ্রব্য, হাউজ ও নলকূপ পাক করার নিয়ম।
হায়েয ও নিফাসের আরও কতিপয় হুকুম :
১. হায়েয ও নিফাসের পর ফরয গোসল করে নামায আরম্ভ করতে হবে । রক্তস্রাব বন্ধ হওয়ার পর যত ওয়াক্তের নামায ছুটবে, তার জন্য পাপ হবে।
২. হায়েয ও নিফাস অবস্থায় নামায, রোযা ও কুরআন তিলাওয়াত ইত্যাদি নিষিদ্ধ । অবশ্য নামায ও রোযার মধ্যে পার্থক্য এই যে, হায়েয অবস্থায় যে নামায ছুটে গিয়েছিল ঐগুলোর কাযা করতে হবে না, মাফ হয়ে গেল। তবে পবিত্র হওয়ার পর রোযার কাযা আবশ্যক। হায়েয ও নিফাস অবস্থায় যিকর, দুরূদ, দুআ ও কুরআন শরীফে যে দুআ আছে এগুলো পড়া যায়। স্বামী-স্ত্রী একত্রে উঠা-বসা ও খানা-পিনা করতে পারে, তবে যৌন তৃপ্তি মেটাতে পারে না, শরীয়ত মতে তা হারাম, হেকিমী মতেও এমন করা স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর।
ইস্তিহাযা কাকে বলে : উপরে উল্লেখ করা হয়েছে যে, হায়েয ও নিফাসের নির্দিষ্ট সময় থেকে কম অথবা বেশী সময়ের পর স্ত্রীলোকের যৌনাঙ্গ থেকে যে রক্তস্রাব হয় তাকে ইস্তিহাযা বলে। এই রক্ত এরূপ যেমন- নাক অথবা দাঁত দিয়ে রক্ত পড়া । রোগের কারণেই সাধারণত এরূপ হয়ে থাকে।
ইস্তেহাযার হুকুম : ১. ইস্তিহাযা অবস্থায় নামায ত্যাগ করা যাবে না। তবে প্রত্যেক নামাযে নতুন করে উযু করতে হবে। এক উযু দ্বারা কয়েক ওয়াক্তের নামায আদায় করতে পারবে না। অবশ্য কয়েক ওয়াক্তের কাযা নামায এক উযু দ্বারা আদায় করা যাবে।
২. গর্ভাবস্থায় রক্তস্রাব দেখা দিলে ইস্তিহাযা হিসেবেই ধরে নিতে হবে। এতে নামায় ছাড়া যাবে না।
ইস্তেনজার (পেশাব পায়খানার) সুন্নাত, আদব ও বিধি-নিষেধ সমূহ।
পবিত্রতার সময়সীমা ও কিছু মাসায়েল:
১. দু'হায়েযের মধ্যবর্তী সময়ের মধ্যে কমপক্ষে পনের দিন পবিত্র থাকার সময়। অতিরিক্ত কোন সময়সীমা নির্দিষ্ট নেই। কোন স্ত্রীলোকের তিন দিনের কম এক অথবা দু'দিন রক্তস্রাব হলে পুনরায় এক অথবা দু'দিন পাক থাকার পর আবারও যদি রক্তস্রাব দেখা দেয়, সবগুলোকে হায়েয ধরে নিতে হবে। যদি এসব গুলো হায়েযের সময়সীমা- দশ দিনের মধ্যে থাকে।
২. এক অথবা দু'দিন রক্তস্রাব দেখা দেয়ার পর পুনরায় পনের দিনের কম অর্থাৎ দশ বার দিন রক্তস্রাব বন্ধ রইল আবার রক্তস্রাব দেখা দিল, এমতাবস্থায় যত দিন অভ্যাস হবে ততদিন হায়েয় গণনা করা হবে, অবশিষ্ট দিনগুলো ইস্তিহাযা হিসেবে ধরে নিতে হবে।
৩. যদি কোন স্ত্রীলোকের ধারাবাহিকভাবে পনের দিন রক্তস্রাব থাকে, তন্মধ্যে দশ দিন হায়েয গণনা করে অবশিষ্ট দিনগুলোতে গোসল ও উযূ করে নামায পড়তে হবে।
বিঃ দ্রঃ স্ত্রী লোকের জরায়ু প্রবাহনের ফলে যে রস নির্গত হয়, এতে গোসল করা আবশ্যক হয় না। তবে এরূপ ক্ষেত্রে প্রত্যেক নামাযের সময় নামায আদায় করে নিবে এবং উযূর পূর্বে ধৌত করে নিবে।
এছাড়া আরও বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুনা
No comments